অনলাইনে জুয়া : এক জেলায় দিনে লেনদেন ৫ কোটি টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৩৫ এএম, ১৫ নভেম্বর,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৩৮ এএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, আইপিএল, বিগব্যাশ, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচগুলোতে চলে অনলাইনে জুয়ার আসর। জুয়া খেলার জন্য একজন জুয়াড়ি মোবাইল নম্বর বা ই-মেইলের মাধ্যমে এই বেটিং সাইট বা অ্যাপে অ্যাকাউন্ট খোলেন। ওই অ্যাকাউন্টের বিপরীতে একটি ই-ওয়ালেট তৈরি করে ব্যালেন্স যোগ করা হয়। জুয়ার নামে এভাবে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) জানিয়েছে, অনলাইন জুয়ার নামে দেশের একটি জেলাতেই দিনে অন্তত তিন থেকে পাঁচ কোটি টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অবৈধভাবে লেনদেনের তথ্য পেয়েছেন তারা।
আজ রবিবার দুপুরে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির পক্ষ থেকে বলা হয়, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৫০ জন মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের তথ্য পাওয়া গেছে, যে নম্বরগুলো থেকে অনলাইন জুয়ার টাকা লেনদেন হচ্ছে। এই নম্বরগুলোর মধ্যে অন্তত ১৫টিতে দিনে ১০ লাখের ওপরে টাকা লেনদেন করছে জুয়াড়ি চক্র। পরে এই টাকা হুন্ডি বা অবৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে পাচার হচ্ছে বলে ধারণা সিআইডির।
অনলাইন বেটিং প্ল্যাটফর্ম ওয়ানএক্সবেট (১ীনবঃনফ.পড়স) পরিচালনাকারী চক্রের নয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। গ্রেফতাররা হলেন- স্বপন মাহমুদ (২৭), নাজমুল হক (২১), আসলাম উদ্দিন (৩৫), মুরশিদ আলম লিপু (২৫), শিশির মোল্লা (২১), মাহফুজুর রহমান নবাব (২৬), নবাবের স্ত্রী মনিরা আক্তার মিলি (২৪), মো. সাদিক (২২) এবং মাসুম রানা (২০)। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ১৬টি মোবাইল ফোনসেট, তিনটি মোবাইল সিম, একটি ল্যাপটপ, একটি প্রাইভেটকার ও নগদ চার লাখ ১০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। শনিবার সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার অভিযান চালিয়ে মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও কক্সবাজার থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করে।
কামরুল আহসান বলেন, সিআইডির নিয়মিত মনিটরিংয়ে অনলাইন বেটিং সাইটটি নজরে আসে, যেখানে অনলাইনে বেটিং করা হয় বা জুয়া খেলা হয়। এই সাইটটি মূলত রাশিয়া থেকে পরিচালিত হয়।
গ্রেফতার ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে কামরুল আহসান বলেন, একটি জেলায় ৫০ জন এজেন্টের তথ্য পাওয়া গেছে। সারা দেশের চিত্র এখনো আমরা পাইনি। এ নিয়ে কাজ চলছে। দিনে একটি বেটিং সাইটে এক থেকে দেড় লাখ ব্যক্তি জুয়ায় অংশ নেন।
তিনি বলেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট সিমসহ স্বপন মাহমুদ ও মুরশিদ আলম লিপুকে মেহেরপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। স্বপনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তিনি এজেন্ট সিমটি গ্রেফতার আসলাম উদ্দিনের কাছ থেকে সংগ্রহ করে জুয়ার এজেন্ট হিসেবে কাজ করছিলেন। এ জন্য আসলামকে তিনি প্রতি মাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা দিতেন।
গ্রেফতার মুরশিদ আলম লিপু সিআইডিকে জানান, তার বোন জামাইয়ের দোকানের একটি ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট সিমটি সংগ্রহ করে জুয়ার এজেন্ট হিসেবে কাজ করছিলেন। মেহেরপুরে ওই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কয়েকজন এসআর ও সেখানকার ডিপো ম্যানেজার তাদের এই কাজের সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলে জানান সিআইডির এই কর্মকর্তা।
কামরুল আহসান বলেন, মাহফুজুর রহমান নবাব জুয়ার জন্য একটি এজেন্ট সিম ব্যবহার করেন। ওই এলাকায় এ কাজ তিনি শুরু করলেও পরবর্তীতে তার মাধ্যমে আরও বহু জুয়ার এজেন্ট যুক্ত হন। গ্রেফতার সাদিক তার সহায়তাকারী। তার এজেন্ট নম্বরে যে টাকা আসতো তা জুয়ার ওয়েবসাইটে ডিপোজিট এবং টাকা তোলার কাজটি সাদিকই করতেন।
গ্রেফতার মাসুম রানা তার মোবাইল নম্বর দিয়ে টেলিগ্রাম আইডি খুলে জুয়ার লোকজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। এর বিনিময়ে তিনি এজেন্টের কাছ থেকে কমিশন পেতেন। জুয়ার কাজে জড়িত থাকায় নবাব বাসা থেকে বের হতে পারতেন না বা কোথাও যেতে পারতেন না। এই কারণে নবাবের স্ত্রী মিলি টাকা সংগ্রহ, ব্যাংকে টাকা জমাসহ বাইরের সব কাজ করতেন।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানান, জুয়ার লেনদেনের কাজে ব্যবহৃত সবগুলো এজেন্ট সিমই সেখানকার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এসআরের মাধ্যমে সম্পন্ন হতো। অনেক সময় জুয়ার এজেন্ট ও এসআরদের মধ্যে বিটুবির মাধ্যমে লেনদেন হলেও তাদের মধ্যে সরাসরি কোনো লেনদেন হতো না।
সিআইডি জানায়, গ্রেফতার স্বপনের সিম থেকে প্রতিদিন গড়ে সাত থেকে আট লাখ টাকা, লিপুর সিম থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০ লাখ টাকা ও নবাবের সিম থেকে প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা লেনদেন হতো।