রাজউক উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ২৮১টি ফ্ল্যাট গোপনে বরাদ্দ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৫৮ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২০ | আপডেট: ১১:২০ পিএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
লটারি না করে অত্যন্ত গোপনে প্রভাবশালীদের তদবির ও লেনদেনের মাধ্যমে রাজউক উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ২৮১টি ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফ্ল্যাটগুলোর অবস্থান তুলনামূলক ভালো জায়গায় পড়েছে; যেমন লেকের পাশে কিংবা দক্ষিণ বা দক্ষিণ–পূর্বমুখী বলে জানা যায়।
লটারি না করে এভাবে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে রাজউকের উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পে (১৮ নম্বর সেক্টর)। ‘নিম্ন ও মধ্যম’ আয়ের মানুষের আবাসনের জন্য ২০১০ সালে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। এই প্রকল্পে মোট ৭৯টি ১৬ তলা ভবনে ৬ হাজার ৬৩৬টি ফ্ল্যাট আছে। ২০১২ সালে প্রথম এই প্রকল্পের আওতায় ফ্ল্যাট বরাদ্দ দিতে আবেদন আহ্বান করে রাজউক। এরপর বিভিন্ন সময়ে কয়েক দফায় ফ্ল্যাট বরাদ্দের আবেদন নেওয়া হয়।
প্রচলিত প্রথার ব্যত্যয় ঘটিয়ে লটারি ছাড়া ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া ঠিক হয়নি। যাঁরা এ কাজের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। বলে মন্তব্য করেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এর সভাপতি গোলাম রহমান।
লটারি ছাড়াই ফ্ল্যাট বরাদ্দের ঘটনাটি গোপনে গত দুই বছরের মধ্যে ঘটেছে। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় গত নভেম্বর মাসে। ওই মাসের ২২ তারিখ প্রকল্প এলাকার আটটি ভবনের ৩০৬টি ফ্ল্যাট বরাদ্দের জন্য অনলাইনে লটারি হয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) মিলনায়তনে। ওই আট ভবনে মোট ফ্ল্যাট আছে ৬৭২টি (প্রতি ভবনে ৮৪টি)। লটারিতে অংশ নেওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত ছিলেন ৩০৬ জন আবেদনকারী। নিয়ম অনুযায়ী, ৩০৬ জন আবেদনকারীর মধ্যে লটারি হওয়ার কথা ছিল ৬৭২টি ফ্ল্যাটের বিপরীতে। অর্থাৎ আবেদনকারীরা আটটি ভবনের ৬৭২টি ফ্ল্যাটের মধ্যে যেকোনো একটি ফ্ল্যাট পাওয়ার যোগ্য ছিলেন। কিন্তু অনলাইনে লটারি হয়েছে ৩৯১টি ফ্ল্যাটের বিপরীতে। বাকি ২৮১টি ফ্ল্যাট যাঁদের নামে বরাদ্দ হয়েছে, সে তালিকা লটারি হওয়ার এক সপ্তাহ আগেই চূড়ান্ত করা হয়।
এভাবে লটারি ছাড়া ফ্ল্যাট বরাদ্দে আপত্তি জানিয়েছেন সর্বশেষ লটারিতে বরাদ্দ পাওয়া দুজন আবেদনকারী। তবে রাজউক হয়রানি করতে পারে, এই আশঙ্কায় তাঁরা নাম প্রকাশে রাজি হননি। তাঁরা বলেন, রাজউকের এই আচরণ অন্যায়। তাঁদের বঞ্চিত করা হয়েছে। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পুনরায় লটারি করার দাবি জানান তাঁরা।
রাজউকের এক কর্মকর্তা বলছেন, ওই ২৮১টি ফ্ল্যাটের মধ্যে এমন আবেদনকারীও রয়েছেন, যিনি আগে কোনো এক লটারিতে প্রকল্প এলাকায় একটি ফ্ল্যাট বরাদ্দ পেয়েছিলেন। কিন্তু ফ্ল্যাটের অবস্থান তাঁর পছন্দ হয়নি। পরে তদবির করে পছন্দমতো ফ্ল্যাট নিয়েছেন।
রাজউকের বোর্ড সভায় সভাপতিত্ব করেন সংস্থার চেয়ারম্যান। এখন চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন সাঈদ নূর আলম। লটারি ছাড়া ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন হওয়ার কথা নয়। বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।
রাজউকের অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পগুলোর মধ্যে উত্তরার প্রকল্পটিই আকারে সবচেয়ে বড়। এখানে প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন ১ হাজার ৬২০ বর্গফুট (৩৭০ বর্গফুট কমন স্পেসসহ)। ৭৯টি ভবনের মধ্যে ৫৯টি ভবনের ফ্ল্যাট বরাদ্দের কাজ ইতিমধ্যে শেষ করেছে রাজউক। আর বাকি ২০টি ভবনের মধ্যে ১৪টির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ছয়টি ভবনের নির্মাণকাজ এখনো চলছে। এখন একটি ফ্ল্যাট কিনতে দাম পড়ে প্রায় ৮৫ লাখ টাকা। কিস্তিতে এই টাকা শোধের সুযোগ আছে। ২৫ বছরের বেশি বয়সী যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক (আয় করের) কিছু শর্ত মেনে আবেদন করতে পারেন।