সন্তানের প্রতি মা-বাবা খেয়াল না করলে কিশোর গ্যাং প্রতিরোধ করা সম্ভব নয় - স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:২১ এএম, ২৪ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ১২:৩৪ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে অভিভাবকদের সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, মা-বাবা যদি সন্তানের প্রতি খেয়াল না করে শুধু মাদক ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে অভিযানে কিশোর গ্যাং প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব দেবে যেই তরুণ প্রজন্ম, তারা যেন পথ না হারায়, এ জন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মগবাজারের মধুবাগ বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান কমপ্লেক্স অডিটোরিয়ামে কিশোর অপরাধবিরোধী সামাজিক প্রচারণা কার্যক্রম ও রেপ নির্মিত টিভিসি এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘বর্তমান আইনে ১৮ বছরের নিচে সবাইকে শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু ১৮ বছর বয়সে অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়ে যায়। সে জন্য এ বিষয়টি নিয়ে চিন্তার সময় এসেছে। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, কিশোররা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। অপরাধ প্রবণতা এবং গ্রেফতারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কিশোর সংশোধনাগারে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। ছেলেমেয়েরা কোথায় যাচ্ছে তা অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে। মাদক নিয়ন্ত্রণে সবাইকে কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, গত তিন থেকে চার বছর ধরে কিশোর গ্যাং আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে অনেক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। কিশোর আইন হালনাগাদ করা হয়েছে। ১৮ বছরের নিচে সবাই শিশু। ইতিপূর্বে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হলেও বর্তমান আইনের কারণে এখন আর সেভাবে কোনও ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। গ্রেফতারের সঙ্গে সঙ্গে তাদের কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। কিশোর সংশোধনাগারে ক্যাপাসিটি কত এ ব্যাপারে আমাদের কাজ করতে হবে। এছাড়া কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে প্যারেন্টাল কন্ট্রোলের বিষয়টি রয়েছে, যেখানে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ দরকার। কমিউনিটির একাত্মতার মাধ্যমে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ জরুরি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাসিমা বেগম বলেন, বাবা-মায়ের অতি আদর কিংবা সময় না দেয়া বাচ্চাদের মনে প্রভাব ফেলে। শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষকদের শারীরিক নির্যাতন করা বৈধ নয়, কাউন্সিলিংয়ে জোর দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে র্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, কিশোর অপরাধীদের গ্রেফতার করলে প্রবেশন অফিসারের কাছে দিতে হয়। তবে বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ে গ্রেফতারের পর প্রবেশন অফিসার পাওয়া অনেক কঠিন ও জটিল। কিশোর গ্যাংয়ে শুধু কিশোররা থাকে না। এর মধ্যে বড়রাও থাকে। তারাই এই গ্যাংগুলোর নেতৃত্ব দেয়। তাদের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হলে আরও গ্যাংয়ের সৃষ্টি হয়। তখন সংঘর্ষের মতো ঘটনা ঘটে। সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন আমাদের জন্য একটি অ্যাসেট। এই অ্যাসেট ধরে রাখতে পারলে সন্তানদের বিচ্যুতি থেকে ঠেকানো সম্ভব। কিশোর গ্যাংয়ের জড়িয়ে পড়ার দায় সবার রয়েছে। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিক পথে ধাবিত করতে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা জাগিয়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশে কিশোর গ্যাংয়ের কোনও অস্তিত্ব থাকবে না। পশ্চিমা দেশগুলো থেকে গ্যাং কালচারের উৎপত্তি। আমরা চাই, আঁধারের পথ থেকে ভালো পথে আনতে। কিশোরদের মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ের পরিবর্তন ঘটাতে চাই। সমাজের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সেই বয়োজ্যেষ্ঠদেরও এগিয়ে আসতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে, এই পথ ভুল পথ। সুস্থ বিনোদন ও নিয়মতান্ত্রিক জীবনচর্চায় কিশোরদের তৈরি করতে হবে। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্য স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং তেজগাঁও কলেজসহ বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।