রাজধানীর রাস্তায় নামছে মানুষ, বাড়ছে ব্যাক্তিগত গাড়ি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:৫৯ পিএম, ২৭ জুলাই,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:২৮ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ প্রথম দিকে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হলেও দিন যত যাচ্ছে ততই বিধিনিষেধ উপেক্ষার প্রবণতা বাড়ছে।
সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে শুরুতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে কঠোর মনোভাব দেখা গেলেও ক্রমেই তা ঝিমিয়ে পড়ছে। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ও মোড়ে র্যাব-পুলিশের তল্লাশি চৌকি প্রথম দিকে যেমন ছিল, এখনো আছে; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সরব উপস্থিতিও আছে যথারীতি; কিন্তু সরকারের বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে তৎপরতা দৃশ্যমান হয়েছে কম।
কঠোর লকডাউনের চতুর্থ দিন ছিল গতকাল সোমবার। এদিনও সকাল থেকে রাজধানীর বেশিরভাগ সড়কে পুলিশ, র্যাব, বিজিবির সঙ্গে মাঠে ছিল সেনাবাহিনী; কিন্তু আগের তিনটি দিনের তুলনায় গতকাল অনেক বেশি নগরবাসীকে সড়কে দেখা গেছে। শুরুতে শুধু রিকশা দেখা গেলেও গতকাল প্রাইভেটকার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেলের চলাচল বাড়তে দেখা গেছে।। সড়কের অনেক স্থানে ভাসমান দোকানও দেখা গেছে।
এ তো গেল মূল সড়কের চিত্র। পাড়া-মহল্লায়, অলি-গলিতে কিন্তু আগের দৃশ্যই রয়ে গেছে। অসচেতন মানুষ, বিশেষ করে তরুণ-কিশোরদের আড্ডাবাজি চলেছে নির্বিঘ্নে।
জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া বেশিরভাগ মানুষকেই গতকালও গন্তব্যে যেতে হয়েছে হেঁটে। আর রিকশায় বা ভ্যানে উঠলে গুনতে হয়েছে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া। মহানগরীর কাঁচাবাজারগুলো খোলা থাকলেও ক্রেতা ছিল কম।
মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যদের ভাষ্য- কিছু মানুষ জরুরি কাজে বের হলেও অধিকাংশই বিধিনিষেধ অমান্য করে বের হচ্ছেন। চেকপোস্টে প্রত্যেকেই বলছেন, ‘জরুরি কাজে’ বের হয়েছেন; কিন্তু বক্তব্যের পক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ দেখাতে পারেননি অধিকাংশ পথচারী। যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারায় গতকালও অনেককেই গুনতে হয়েছে জরিমানা, মুখোমুখি হতে হয়েছে মামলার।
গতকাল রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, পল্লবী, রামপুরা, খিলগাঁও, গাবতলী, টেকনিক্যাল, আদাবর, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, গুলশান, মহাখালী, মালিবাগ, বাড্ডা, প্রগতি সরণি, নতুনবাজার, বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় এমন দৃশ্য দেখা গেছে। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগ জানিয়েছে, গতকাল রাজধানীতে বিধিনিষেধ অমান্য করায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৫৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ১৬৪ জনকে ১ লাখ ২৬ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এদিন ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ ৪৪৩টি গাড়িকে ১০ লাখ ২১ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তেজগাঁও সাতরাস্তার কাছে বিজি প্রেসের সামনের চেকপোস্টে দায়িত্ব পালনরত তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট মো. উজ্জ্বল হোসেন বলেন, সকাল ৯টার পর থেকে মানুষের চলাচল বেড়েছে। যারা বের হচ্ছেন, অধিকাংশই রোগী বা রোগীর স্বজন পরিচয় দিচ্ছেন। কেউ কেউ কোভিড ১৯-এর টিকা বা পরীক্ষার জন্য বের হয়েছেন বলেও জানান। বিদেশগামী লোকের সংখ্যাও অন্য দিনের তুলনায় বেশি পাওয়া গেছে। ব্যাংকসহ অনেক প্রতিষ্ঠান খোলা বলে সড়কে মানুষ বেড়েছে। তবে অনেকেই যৌক্তিক কারণ ছাড়া বের হচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে অবশ্য আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
পুরান ঢাকার তাঁতিবাজার মোড়ে সোমবার সকাল ১০টার দিকে র্যাব ১০-এর ভ্রাম্যমাণ আদালতের ঘণ্টাখানেকের অভিযানে বিনাকারণে গাড়ি নিয়ে বের হওয়া বা মাস্ক ব্যবহার না করাসহ বিভিন্ন অপরাধে ২০ জনকে জরিমানা করা হয়। আগে-পরে যান ও মানুষের চলাচল বেশি থাকলেও ভ্রাম্যমাণ আদালত বসার পর তাঁতিবাজার মোড় দিয়ে যান চলাচল কমে যায়।
করোনার সংক্রমণ রোধে ঢাকার বাইরে থেকে অপ্রয়োজনীয় যানবাহনের অবাধ যাতায়াত বন্ধ করতে লকডাউনের প্রথম দিন থেকেই বাবুবাজার ব্রিজের পূর্বদিকে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন তল্লাশি ও মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন পুলিশের অপরাধ ও ট্রাফিক বিভাগসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে চলছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। তবু থেমে নেই ঢাকামুখী মানুষের ঢল। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও বিকল্প কিছু অবলম্বন করে, কেউ কেউ হেঁটে মাইলের পর মাইল পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকায় আসছেন।