জমে উঠেছে রাজধানীর পশুর হাট বিক্রি ৬০ হাজার থেকে ১৮ লাখ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:২৪ এএম, ১৯ জুলাই,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:৩৩ পিএম, ১৪ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বাবুরাজ নামে লালচে রঙের একটি গরু। নেত্রকোনা থেকে বাবুরাজকে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ধূপখোলা মাঠে এনেছেন সাইফুল ইসলাম। বলছেন, বাবুরাজের ওজন ২৫ মণ। দাম হাঁকিয়েছেন ১৫ লাখ টাকা। নজরকাড়া গরুটির দুটি শিঙে নাম লেখা বাবুরাজ। লোকজন গরুটি দেখতে ভিড় করছেন। দরাদরি চলছে। ঈদের আরও একদিন বাকি থাকায় ভালো দাম পেলে বাবুরাজকে বিক্রি করবেন সাইফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আমার গরুটি দেখতে ক্রেতারা সবাই ভিড় করছেন। কিন্তু যে দাম তারা বলছেন, সেই দামে আমার পক্ষে বিক্রি করা সম্ভব নয়। আমি শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করব। বাবুরাজ ধূপখোলা মাঠের প্রবেশপথের বাঁ পাশে বাঁধা আছে।
একই মাঠে আছে রাজাবাবু নামের আরও বড় একটি গরু। ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু থেকে গরু ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন গরুটি ধূপখোলা মাঠে তুলেছেন। ইসমাইল বলছেন, বিশাল এই গরুর ওজন ৩৩ মণ। গরুটির দাম হাঁকা হয়েছে ১৮ লাখ টাকা। ক্রেতারা অবশ্য গরুটির দাম বলছেন ৯ লাখ টাকা। গরুর মালিক ইসমাইল হোসেন বলেন, আমি এই গরুর নাম রেখেছি রাজাবাবু। রাজাবাবু আমার বাড়িতেই বড় হয়েছে। আমার বাড়িতে ওর জন্ম। চার বছরের ব্যবধানে আমার রাজাবাবু এত বড় হয়েছে।
রাজধানীর কোরবানির পশুর হাটগুলো কানায় কানায় পরিপূর্ণ। এখনো দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাকে ট্রাকে পশু আসছে। হাটগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় থাকলেও পশুর দাম বেশি বলে জানিয়েছেন তারা। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত রবিবার থেকে শুরু হয়েছে কোরবানির হাট। চলবে ঈদের দিন পর্যন্ত।
জানা গেছে, দেশীয় জাতের ছোট আকৃতির গরুগুলো ৬০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা দাম বলছেন বিক্রেতারা। আর মাঝারিগুলো ৮০ থেকে ১ লাখ টাকা এবং বড়গুলো এক লাখ ১০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। তবে দুই লাখ, তিন লাখ, পাঁচ লাখ, ১০ লাখ, ১৫ লাখ এবং ২০ লাখ টাকার কিছু গরু বাজারে উঠেছে।
ঈদের আর মাত্র এক দিন বাকি। এখন রাজধানীর গরুর হাটগুলো জমে উঠতে শুরু করেছে। গরুর হাটে ক্রেতার আনাগোনা বেড়েছে। কেউ কেউ গরু কিনে বাড়ি ফিরছেন। তবে মাঠে থাকা গরু ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের আগের দিন, অর্থাৎ মঙ্গলবার সবচেয়ে বেশি গরু বিক্রি হবে। তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা এটাই বলে। রাজধানীর পুরান ঢাকার ধূপখোলা মাঠ, যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া এবং পুরান ঢাকার ধোলাই খালের গরুর হাট ঘুরে দেখা গেল, মূলত ছোট গরু কেনার প্রতি ক্রেতাদের ঝোঁক বেশি।
আজ এই হাটে দেশি জাতের ছোট আকারের গরু বিক্রি হতে দেখা গেছে ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। তবে বিদেশি জাতের এবং দেশি-বিদেশি সংকর জাতের গরুর দাম আকারভেদে এক লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত চাইতে দেখা গেছে বিক্রেতাদের। বিক্রেতারা বলছেন, হাটে দেশি ছোট আকারের গরুর চাহিদা বেশি। আর গত বছরের চেয়ে এবার গরুর দামও বেশি।
উত্তরা-১৭ নম্বর সেক্টরের পশুর হাট। গতকাল এই হাটে যেসব কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে সেগুলোর বেশির ভাগ ছিল আকারে ছোট ও মাঝারি। দিনভর ওই হাট ঘুরে অন্তত ২৫টি গরু বিক্রি হতে দেখা গেছে ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকার মধ্যে। দু-একটি বিক্রি হয়েছে এক লাখ টাকার বেশি দামে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ হাটে ৬০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ টাকা দামের গরু উঠেছে। ১০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা দামের কিছু ছাগলও উঠেছে। মহিষের দাম হাঁকা হচ্ছে ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত।
দনিয়া কলেজ মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা (শনিরআখড়া) এবং গোলাপবাগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মার্কেটের পেছনে খালি জায়গায় পশুর হাট জমতে শুরু করেছে। জানা গেছে, বড়, ছোট এবং মাঝারি সাইজের গরু এবং ছাগলে এখন হাট ভরপুর। দু হাটে গরু উঠেছে ১২ হাজার এবং গোলাপবাগে পশু প্রায় আট হাজার। গোলাপবাগে ২৫ মণ ওজনের একটি গরুর দাম ১২ লাখ টাকা হাঁকা হয়েছে। ক্রেতারা সাত লাখ টাকা দাম বলেছেন।
যশোরের মনিরামপুরের মিম ডেইরি ফার্মের ছয়টি গরু আনা হয়েছে গাবতলী হাটে। এ প্রতিষ্ঠানের একজন হাসিবুল ইসলাম বলেন, আমাদের গরুগুলো বড় আকৃতির। সবচেয়ে বড়টির দাম ১৫ লাখ টাকা। অন্যগুলো তিন থেকে ১০ লাখ টাকার মধ্যে। দামদর হচ্ছে, আশা করি ভালো দামে বিক্রি করতে পারব। ১৫ লাখ টাকার গরুটির নাম রাখা হয়েছে সুপার বস।
জামালপুরের মেলান্দহ থেকে ১৬টি গরু নিয়ে এই হাটে এসেছেন ব্যবসায়ী হযরত আলী।
তিনি বলেন, দুই দিন হলো হাটে এসেছি। এই সময়ে তিনটি গরু বিক্রি হয়েছে। এগুলো মাঝারি সাইজের। আশা করছি, বড়গুলা আজ থেকে বিক্রি করতে পারব। এখন যারা আসছেন তাদের বেশির ভাগ দরদাম দেখতে আসছেন।
প্রথম দিনেই জমে উঠেছে রাজধানীর মোহাম্মদপুর-বসিলা কোরবানির পশুর হাট। গতকাল পর্যন্ত এই হাটে কোরবানির পশু এসেছে সাত হাজারের বেশি। এর মধ্যে গরু প্রায় ছয় হাজার আর ছাগল এক হাজার। এর বাইরে ওই হাটে উট, মহিষ ও ভেড়াও দেখা গেছে। প্রথম দিনে কোরবানির পশুর হাটে ক্রেতাসমাগম ছিল দেখার মতো।
ক্রেতারা বলছেন, বাজার মূল্য পর্যালোচনা করলে মনে হচ্ছে, গরুপ্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা দাম বেশি হাঁকছেন বিক্রেতারা। তারা যে দাম হাঁকছেন, সেখান থেকে আর কমাচ্ছেন না। পশু বিক্রির আগ্রহও তাদের অনেক কম। বিক্রেতারা বলছেন, গরু পালন করা এখন অনেক ব্যয়বহুল। ধানের চেয়ে খড়ের দাম বেশি। একই অবস্থা খৈল, ভুসিরও। এসব গরুর ঢাকার হাঁটে আনতেও গরু প্রতি প্রায় তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর একেকটা গরুর পেছনে দুই থেকে আড়াই বছর সময় দিয়ে পালন করতে হয়েছে। এখন সেই বিনিয়োগ ও শ্রমের মূল্য যদি না মেলে তাহলে তো গরু পালন করবে না মানুষ।
উল্লেখ্য, এ বছর ঢাকার দুই সিটিতে মোট ২০টি কোরবানির পশুর হাট বসেছে। রাজধানী গাবতলী, বছিলা, হাজারীবাগ, ইসলামবাগ, উত্তরা, কাওলা হাটে মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।