৮ দিনের জন্য বাস চালু তামাশা’ - পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:০৫ এএম, ১৫ জুলাই,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০১:৩৪ এএম, ২১ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২৪
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিধিনিষেধ শিথিল করে আটদিনের জন্য গণপরিবহন চলাচলের সুযোগ করে দিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ২২ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে গণপরিবহন চলবে। তবে খুলে দেয়া হলেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই পরিস্থিতিতে ‘আশার আলো’ দেখছেন না পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। গতকাল থেকেই বাস ধোয়া-মোছাসহ আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি শেষ করেছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। তবে অল্প সময়ের জন্য গণপরিবহন চালু করায় অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন তারা। মালিক-শ্রমিকদের অভিযোগ, করোনার অজুহাতে গত ১৫ মাসের মধ্যে মাত্র পাঁচ মাস গণপরিবহন চলছে। বাকি সময় লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ ছিল। এতে লাখো মালিক-শ্রমিকের আয় রোজগার বন্ধ রয়েছে। তারা সংসার চালাতে পারছে না। এখন মাত্র ৮ দিনের জন্য গণপরিবহন চালু করা তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়।
আজ বুধবার রাজধানীর গাবতলী,মহাখালী, সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে এমন হতাশার চিত্র পাওয়া গেছে।
তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই ধাপে ধাপে বিধিনিষেধে প্রায় চলাচল বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন। তাই অনেকটাই সংকটের মুখে সড়ক পরিবহনখাত। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে। এছাড়া মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো নয়। যাত্রী পরিবহন করতে হবে ধারণক্ষমতার অর্ধেক। এ অবস্থায় ঈদে মানুষ কতটা গ্রামমুখী হবে, সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের। দূরপাল্লার গাড়ি চালিয়ে লাভের মুখ দেখা আদৌ সম্ভব হবে কি-না, সেটা নিয়ে ভাবছেন তারা। পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে গণপরিবহন চলাচল, দোকান-শপিংমল খুলে দেয়াসহ কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দিয়ে চলমান বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করে গতকাল মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। একইসঙ্গে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত ফের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আগামী ২১ জুলাই বুধবার দেশে মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে।
সায়েদাবাদে দূরপাল্লার বিভিন্ন বাসের টিকিট বিক্রি করেন মো. আলী হোসেন। তিনি বলেন, ‘পরিবহন লাইনের সবার অবস্থা খুবই খারাপ। অনেক দিন পর গাড়ি চলবে, মালিক-শ্রমিকরাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘এ খাতের মূল দুটি সিজন দুই ঈদ। কিন্তু সব কিছু মিলে মনে হচ্ছে না আহামরি কিছু হবে। কারণ পকেটে টাকা থাকলে বাড়ি যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা থাকে মানুষের। সবারই অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। ঈদ এলেও পরিস্থিতি তো স্বাভাবিক নয়। মানুষের মনেও তো ভয় আছে করোনা নিয়ে। খুব জরুরি না হলে কেউ স্থান ত্যাগ করবে না। তাই আমগো ভাগ্যের উন্নতি হবে বলে তো মনে হয় না।
একজন বাসের চালক মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এভাবে গাড়ি বন্ধ থাকলে আমরা ক্যামনে চলমু। আমাগো চলার তো রাস্তা নাই। এতদিন বন্ধের পর এক সপ্তাহ টাইম দিছে, তাও দুই সিটে একজন। কী অইব বলেন? আমগো সারা মাস গাড়ি চালাইতে দেন, আমরা একজন কইরাই যাত্রী টানমু। এটাই আমগো দাবি।
তিনি বলেন, ‘আমগো আর কান্দাইয়েন না। আমরা দুই ছেলে, স্ত্রী আছে। বলতে গেলে এতদিন ভিক্ষা করে সংসার চালাইছি।
বাসের মালিক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘একটা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হইতেও তো কিছুটা সময় লাগে। এর মধ্যে মাত্র আটদিন খোলা। আবার দুই সিটে যাবে একজন, কিন্তু দুই সিটের ভাড়া তো পাওয়া যাবে না। যতটা পারছি বসাইয়া বসাইয়া শ্রমিকদের বেতন দিছি, যা পরিস্থিতি তাতে খুলে দিলেও খরচ ওঠানো যাইব কিনা কে জানে।
কুমিল্লা রুটে চলাচলকারী একটি গাড়ির চালক হোসেন মিয়া বলেন, ‘ঈদে বাড়ি গেলেও ঈদের পরদিনই আপনাকে আবার ছুটতে হবে। এরপর আবার ১৪ দিনের লকডাউন। মানুষ তো বেকায়দায় না পড়লে কোনো জায়গায় যাবে না।
বাসের সুপারভাইজার মো. নবী হোসেন বলেন, ‘গত বছর লকডাউনের সময় ১০ হাজার টাকা কিস্তি উঠাইয়া ঘর ভাড়া দিছি। সেই কিস্তি এখনও শোধ করতে পারি নাই। এর মধ্যে কাজকাম বন্ধ। লকডাউনে আমগো মরা ছাড়া উপায় নেই। এখন খুলছে প্রতিদিন ৫০০-৭০০ টাকা ইনকাম হইব। একদিন ইনকাম হইব দুদিন খাইতে অইব। আটদিনে কী কদ্দুন কী অইব? ঢাকা কেন্দুয়া রুটের একটি বাসের চালক মফিজুল ইসলাম রনির তিন মেয়ে, এক ছেলে। থাকেন নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকায়। বৃহস্পতিবার থেকে গাড়ি চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘লকডাউনের মধ্যে আমরা পুরাই বসা। এতদিন ঋণ করে কষ্ট করে চলেছি। গাড়ি খুলে দিয়েছে ভালো সিদ্ধান্ত। এতদিন গাড়ি বন্ধ কোনো সহযোগিতা পাই নাই আমি। সরকার বলছে সহযোগিতা করব, আমরা তো কিছুই পাইলাম না, কোনো সংগঠন থেকেও কিছু পাইনি।