বেড়েছে সশস্ত্র ছিনতাই-ডাকাতি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২৩ এএম, ২৪ জুন,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:১৮ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
রাজধানীতে সশস্ত্র ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনা বাড়ছে। ছিনতাইয়ে বাধা দিলে সশস্ত্র হামলা এমনকি হত্যা করতেও দ্বিধা করছে না অপরাধীরা। নির্জন স্থানে গামছা পার্টি, ব্যস্ত এলাকায় টানা পার্টির দৌরাত্ম্য যেন কমছেই না। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে সরকারি বিধিনিষেধ আর সীমিত পরিসরে যানবাহন চলাচলের সুযোগে যাত্রী ও পথচারীদের জিম্মি করে ছিনতাই ও ডাকাতির মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে অপরাধী চক্র। নির্জন স্থানে তাদের দস্যুতার শিকার হচ্ছে পথচারী, সিএনজি যাত্রী, বেসরকারি পরিবহনের যাত্রী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, গত তিন বছরে ক্রমান্বয়ে বেড়েছে ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনা। যদিও এ-সংক্রান্ত অভিযোগ কম হচ্ছে থানায়। ২০১৮ সালে ছিনতাইয়ের মামলা ছিল ৭৮টি। ২০১৯ সালে ১১৯টি এবং ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭৬টিতে। তবে এ বছরের মে মাস পর্যন্ত (পুরো হিসাব পাওয়া যায়নি) ছিনতাইয়ের অভিযোগে মামলা হয়েছে ৬১টি।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ছিনতাই ও দস্যুতার ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৫টি। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে এ সংখ্যা কমে যায়। দুই মাসে আটটি করে মোট ১৬টি মামলা দায়ের হয়। তবে এপ্রিলে এসে আবার তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩টিতে। চার মাসে বিভিন্ন থানায় মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৪টি। বিভিন্ন থানা সূত্রে জানা গেছে, মে মাসে ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলার সংখ্যা ১৭টি। অন্যদিকে বছরের প্রথম চার মাসে ডাকাতির ঘটনায় মামলা হয়েছে সাতটি। কিন্তু মে মাসে এ সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে দাঁড়ায় নয়টিতে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ছিনতাই ও দস্যুতার ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৫টি। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে এ সংখ্যা কমে যায়। দুই মাসে আটটি করে মোট ১৬টি মামলা দায়ের হয়। তবে এপ্রিলে এসে আবার তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩টিতে। চার মাসে বিভিন্ন থানায় মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৪টি। বিভিন্ন থানা সূত্রে জানা গেছে, মে মাসে ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলার সংখ্যা ১৭টি। অন্যদিকে প্রথম চার মাসে ডাকাতির ঘটনায় মামলা হয়েছে সাতটি। কিন্তু মে মাসে এ সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে দাঁড়ায় নয়টিতে।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ছিনতাই-ডাকাতি বন্ধে ডিএমপির সবগুলো দল একযোগে কাজ করছে। যখনই কোনো ঘটনা ঘটছে আমরা শক্তভাবে সেটা তদন্ত করছি। জড়িতদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসছি। সাঁড়াশি অভিযানের পাশাপাশি টহল পুলিশের কার্যক্রমও বাড়িয়েছে ডিএমপি।
তিনি আরও বলেন, ছিনতাই হলে সাধারণত মামলা করতে চান না ভুক্তভোগীরা। আমরা আশ্বস্ত করছি, আপনারা থানায় আসুন, মামলা করুন। ডিএমপিকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন। ছিনতাই-ডাকাতি ঠেকাতে শক্ত অবস্থানে রয়েছে ডিএমপি।
ডিএমপির থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দুবাই যাওয়ার জন্য গত ৫ মে বগুড়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন সুভাষ। কাঁধে ছিল ঝোলানো ব্যাগ। উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকায় রাইড শেয়ারিং করে এমন একটি সিএনজিতে ওঠেন তিনি। বিমানবন্দর পর্যন্ত ভাড়া ঠিক করেন ২০ টাকা। তবে মাঝ রাস্তায় আসার পর পেছনে থাকা যাত্রীবেশী দুই ছিনতাইকারী সুভাষের মুখ গামছা দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে ফোন, ছয় হাজার টাকা ও ব্যাগ কেড়ে নিয়ে কুড়িল ফ্লাইওভারে ফেলে দেয়। পরের দিন (৬ মে) ভোরে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
ওই ঘটনায় জড়িত এনামুল ও রাসেল নামে দুই ছিনতাইকারী গত ১৭ মে গভীর রাতে রাজধানীর খিলক্ষেত কুড়িল ফ্লাইওভারের ওপর গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়। জড়িত নূরে আলম হোসেন নয়ন ও ইয়ামিন আলীও গ্রেফতার হয়।
গত ১৬ মে রাজধানীর ভাসানটেক পুরাতন কচুক্ষেত জেসমিন টাওয়ারের একটি মার্কেটের ব্যাটারির দোকানে ডাকাতির চেষ্টা চালায় সংঘবদ্ধ একটি চক্র। তাদের বাধা দেন নৈশপ্রহরী মো. সুজন (৪০)। আব্দুল মজিদ নামের এক পথচারীও এগিয়ে আসেন। ডাকাতদল আব্দুল মজিদকে আঘাত করে ফেলে রেখে যায়। তবে তুলে নিয়ে যায় নৈশপ্রহরী সুজনকে। পরে তাকে গামছা পেঁচিয়ে হত্যার পর শেরেবাংলানগর থানাধীন বেতার ভবনের সামনে ফেলে রেখে যায়।
গত ১ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আলামিন (২৫) নামে বিকাশের এক বিক্রয় প্রতিনিধি খুন হন। গত ২৩ জানুয়ারি ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে খুন হন জাসদ নেতা হামিদুল ইসলাম। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিনি সেগুনবাগিচা এলাকায় বসবাস করতেন। ২৫ বছর ধরে সেগুনবাগিচায় ক্যাবল নেটওয়ার্কের ব্যবসা তার। ঘটনার দিন হামিদুল পুরান ঢাকা থেকে ফ্ল্যাট ভাড়ার টাকা নিয়ে সেগুনবাগিচার বাসায় ফিরছিলেন। পথিমধ্যে ছিনতাইকারীরা তার গতিরোধ করে এবং মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। কিন্তু পকেটে থাকা টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে তিনি চিৎকার দেন। তখন ছিনতাইকারীরা তাকে ছুরিকাঘাত করেন। ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।
গত ১৩ জানুয়ারি রাত পৌনে ৩টার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে খোকন মীর (৩০) নামে এক পিকআপের চালক নিহত হন।
গত ২ মে সন্ধ্যায় চকবাজারের ইসলামবাগ এলাকায় জনৈক পারভেজের পথরোধ করে ৫-৬ জন মুখোশ পরা ছিনতাইকারী। দেশীয় অস্ত্র ঠেকিয়ে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি মেরে মানিব্যাগ ও মোবাইল নিয়ে চলে যায় তারা।
ছিনতাই-ডাকাতি বেড়ে যাওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। এ অপকর্ম বন্ধে সাধারণ নাগরিকের সহযোগিতা প্রয়োজন। এছাড়া কিশোর অপরাধ কিংবা গ্যাং কালচার ছিনতাইয়ে বড় কারণ। এসব বন্ধে র্যাব দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে।
গত ৭ মে দুপুরে পুরান ঢাকার মালিটোলা শাখার এস এ পরিবহন থেকে ৫৭ হাজার টাকা তুলে রিকশাযোগে যাত্রাবাড়ীর উদ্দেশে রওনা দেন ভুক্তভোগী আবিদ (ছদ্মনাম)। গেন্ডারিয়া থানার বেগমগঞ্জ লেনের নূর মসজিদের সামনে পৌঁছালে মোটরসাইকেলে আসা দুই যুবক রিকশার গতিরোধ করে। টাকা ছিনিয়ে নেয়ার জন্য তারা আবিদকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
গত ২১ মে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে দেশীয় অস্ত্রসহ আবু তাহের ফরহাদ (২৪) ও মো. সাগর (১৮) নামের দুজনকে আটক করে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ। একই দিন রাজধানীর শাহজাহানপুর থানা এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হন এক ভুক্তভোগী। মোটরসাইকেলে আসা দুই ছিনতাইকারী রিকশার গতিরোধ করে অস্ত্রের মুখে মোবাইল ফোন হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। তাৎক্ষণিক ছিনতাইয়ের বিষয়টি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে জানান ভুক্তভোগী। ৯৯৯ কর্তৃক অবগত হয়ে শাহজাহানপুর ও মতিঝিল থানার টহল দল দুই ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে।
গত ১৭ মে রাতে খিলক্ষেত বনরূপা আবাসিক এলাকায় ডাকাতির খবরে হাতেনাতে অস্ত্রসহ তিন ডাকাতকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত ১৩ মে রাত সাড়ে ৩টার দিকে জুতা বিক্রি শেষে ভ্যানগাড়িসহ সহযোগীকে নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন আব্বাস (ছদ্মনাম)। মোহাম্মদপুর থানার নবীনগর হাউজিং এলাকায় পৌঁছালে অস্ত্রসহ পাঁচ ছিনতাইকারী তাদের পথরোধ করে। তারা মোবাইল ফোনসহ জুতা বিক্রির ১০ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। ওই ঘটনায় পরে তিনজনকে আটক করে পুলিশ।
গত ১২ মে রাতে রাজধানীর তুরাগ এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতি চলছেÑ এমন খবর পেয়ে অস্ত্রসহ পাঁচ ডাকাতকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশের উত্তরা বিভাগ। গত ৬ মে দিনে-দুপুরে উত্তরা পশ্চিম থানার ৩ নম্বর সেক্টর এলাকায় একটি প্রাইভেটকারের দরজার লক ভেঙে নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র চুরির ঘটনা ঘটে। গত ২ মে কদমতলী থানার মাতুয়াইল এলাকায় ছিনতাইকালে দেশীয় অস্ত্রসহ চার ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে কদমতলী থানাপুলিশ।
রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকায় প্রকাশ্যে ছিনতাই না হলেও আতঙ্কের নাম ‘টানা পার্টি’। যানবাহনের অপেক্ষায় অফিসফেরত যাত্রীদের টার্গেট করে ব্যাগ কেটে নেয় তারা। কখনও বাসে ওঠার সময় পকেট থেকে তুলে নেয়া হয় ফোন অথবা মানিব্যাগ। কারওয়ানবাজার থেকে ফার্মগেট মোড় পর্যন্ত নারী-পুরুষ মিলিয়ে বেশ কয়েকটি ‘টানা গ্রুপ’ এখানে সক্রিয়। আগারগাঁও থেকে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর যাওয়ার পথটা ফের ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। আইডিবি ভবন থেকে তালতলা ও শেওড়াপাড়ার রাস্তায় মেট্রোরেলের কাজ চলায় অনেক স্থানে নেই সড়কবাতি। এসব এলাকায় পুলিশের টহল অব্যাহত থাকলেও ছিনতাই থেমে নেই। এছাড়া রাজধানীর মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, গোপিবাগ, মিরপুর, মোহাম্মদপুরের বছিলা ও খিলক্ষেত এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছে মানুষ।
এ বিষয়ে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, র্যাব ছিনতাই-ডাকাতিসহ জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় গোয়েন্দা নজরদারি, অভিযান ও টহল অব্যাহত রেখেছে। গত দুই মাসে দেড় শতাধিক ডাকাত-ছিনতাই চক্রের সদস্যকে র্যাব আটক করেছে।
তিনি আরও বলেন, ছিনতাই-ডাকাতি বেড়ে যাওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। এ অপকর্ম বন্ধে সাধারণ নাগরিকের সহযোগিতা প্রয়োজন। এছাড়া কিশোর অপরাধ কিংবা গ্যাং কালচার ছিনতাইয়ের বড় কারণ। এসব বন্ধে র্যাব দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে।