জিয়া বাংলাদেশে উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির এক নবধারা প্রবর্তন করেন- শওকত মাহমুদ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫১ পিএম, ১ জুন,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:৩৪ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
সন্মিলিত পেশাজীবি পরিষদের আহবায়ক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ বলেছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির এক নবধারা প্রবর্তন করেন। যা দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এনে দিয়েছিল।
তিনি বলেন, জিয়াই স্বাধীনতার প্রথম ঘোষক। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী গভীর রাতে পূর্ব পাকিস্তানের ঘুমন্ত, নিরীহ ও নিরস্ত্র বাঙালীদের উপর বর্বর হামলা চালিয়ে হত্যা ও মানুষের ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে এক ভীতিকর পরিস্থিতি শুরু করলে জিয়া দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। যুদ্ধে পরাজিত হলে নির্ঘাত মৃত্যু জেনেও সেদিন দেশ মাতৃকার মুক্তির জন্য যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন। স্ত্রী- সন্তানদের জীবন বিপন্ন হতে পারে জানা সত্ত্বেও জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান করার জন্য নিজ নামে জেড ফোর্স গঠন করেন।
এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে ১নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে বিরত্বপুর্ণ অবদান রাখেন। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর দেশ পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হলে লাল সবুজের পতাকায় শোভিত স্বাধীন দেশে তিনি পুনরায় সেনাবাহিনীতে ফিরে যান এবং ১৯৭২ সালে সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে সংঘটিত ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকান্ডের পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর ক্যু ও পাল্টা ক্যুর মাধ্যমে দেশ যখন চরম রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সংকটে নিপতিত তখন জিয়াউর রহমান আবার দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার দৃশ্যপটে আবির্ভূত হন। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লব ও সংহতির মধ্যদিয়ে তিনি গৃহবন্দীত্ব থেকে মুক্ত হয়ে জনগনের আশা আকাংখার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রশ্নাতীত জনপ্রিয়তা ও গ্রহনযোগ্যতা তাকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় পাদপিঠে আসীন করে।
বিএনপির জন্ম ক্যান্টনমেন্টে বলে বিষোদগারের জবাবে তিনি বলেন, ক্যান্টনমেন্ট থেকে যদি স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া যায়,সেখান থেকে দল করলে অসুবিধা কি? তিনি বলেন, বিএনপির ক্যান্টনমেন্টে নয়, বিএনপির জন্ম সিপাহি জনতার বিপ্লব ও সংহতির মধ্য দিয়ে।
আজ মঙ্গলবার (১ জুন) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন।
অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশিষ্ট আইনজীবী সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, শিক্ষক নেতা জাকির হোসেন, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন, অধ্যক্ষ আবদূর রহমান, অধ্যক্ষ নিজাম উদ্দিন তরফদার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
শওকত মাহমুদ বলেন, ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারী তৎকালীন সরকার সংবিধানের ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বাকশাল তথা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে। মাত্র ৪টি পত্রিকা রেখে সকল পত্রিকার প্রকাশনা নিষিদ্ধ করে। বাকশাল প্রবর্তনে রুষ্ঠ সাধারণ মানুষ গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনে ব্যাকুল ছিল। রাজনৈতিক দলগুলো সংবিধান সংশোধন করে পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছিলেন।
জিয়াউর রহমান জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে বাকশাল প্রথা বাতিল করে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করেন। গণমাধ্যমের উপর থেকে সকল কালাকানুন প্রত্যাহার করে মুক্ত স্বাধীন গণমাধ্যম চালু করেন।
একটি রাজনৈতিক সরকার যেখানে সারাজীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে বাকশাল প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে গণতন্ত্রকে সংকুচিত করেছিল তখন জাতির প্রয়োজনে সামরিক বাহিনী থেকে আসা একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী সৈনিক স্বাধীনতার অন্যতম মূলস্তম্ভ বহুদলীয় গণতন্ত্র জাতিকে উপহার দিয়ে মুক্ত গনতান্ত্রিক চর্চার পথকে সূগম করেছিলেন। এখানেই জিয়াউর রহমানের সাথে অন্যদের পার্থক্য।
শওকত মাহমুদ বলেন, আজ গণতন্ত্র নেই। দেশভর্তি দুর্নীতি ও সন্ত্রাস। দেশে পরিবর্তন আনতে হলে আগে আপনাদেরকে একেকজন জিয়ার আর্দশের মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে হবে। তবেই মুক্তি আসবে।
অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া বলেন, শহীদ জিয়া ছিলেন একজন খাঁটি দেশপ্রমিক। তিনি ভালো মানুষের সন্ধানে দেশের আনাচে কানাচে চষে বেড়িয়েছিলেন। সবচেয়ে ভালো এবং সৎ লোকদের দিয়ে তিনি কেবিনেট গঠন করেছিলেন। তার মন্ত্রীসভা ছিল সবচেয়ে ভালো, দক্ষ এবং সৎ মন্ত্রীসভা।
দেশের সমৃদ্ধির জন্য জিয়ার অবদানের কথা তুলে ধরে শিক্ষকদের এ নেতা বলেন, ধীরে ধীরে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ছাত্র-শিক্ষক, কৃষক সব শ্রেণিপেশার মানুষকে নিয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেন।
কৃষির উন্নয়নের জন্য তিনি খালকাটা কর্মসূচি শুরু করেন। যার মাধ্যমে দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে মুক্ত করে কৃষি বিপ্লব ঘটান। এভাবে শ্রমবাজার, শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটান তিনি। দেশের গার্মেন্টস শিল্পের বিপ্লব জিয়ার হাত ধরেই। শুধু তাই নয় পুলিশ বাহিনীতে নারী সদস্য নিয়োগ তার হাতেই সূচনা। কারণ সেসময় বাংলাদেশ ছিল উত্তেজিত। দেশের মানুষ জিয়াউর রহমানের জন্য ছিল ব্যাকুলপ্রাণ।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, জিয়াউর রহমান সর্বকালে সর্বশ্রেষ্ঠ সৎ শাসনক। তাঁর শত্রুরাও জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ আনতে পারেন নি। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ এবং বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা উল্লেখ করে সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান দেশে সব রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম বন্ধ করে বাকশাল গঠন করেছিলেন। কিন্তু শহীদ জিয়া তা থেকে দেশকে মুক্ত করে বহুদলীয় গণতন্ত্রের সূচনা করেছিলেন। কারণ তিনি ছিলেন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক। তিনি শুধু স্বপ্ন দেখতেন। তিনি স্বপ্ন বাস্তবায়ন কি করে করতে হয় তাও জানতেন।
দেশে গণতন্ত্রের সঙ্কট চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে শূন্যতা বিরাজ করছে। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্ত করে তাঁর নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করাটাই হবে আমাদের মূল কাজ। তা না হলে সন্ত্রাসবাদ এবং ফ্যাসিবাদের যে আবির্ভাব ঘটছে তা থেকে কেউ রেহাই পাবেন না।
এডভোকেট সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের বর্তমান সঙ্কটকালে জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও রাজনীতি খুবই প্রয়োজন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দেশবাসীকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। দেশের রাজনৈতিক শূন্যতায় জনগণই তাকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলেন। কোনো ধরনের ক্যু, মার্শাল ল’ বা সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে তিনি ক্ষমতা দখল করেননি। সেসময় বাংলাদেশে গণতন্ত্রের গভীর সঙ্কট চলছিল। জিয়াউর রহমান তা ফিরিয়ে এনে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম বলেন, জিয়ার প্রতি আওয়ামী লীগের কৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ। কারণ তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন না করলে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারতো না। কাজেই বর্তমানে কোনো পরিবারের নিরাপত্তার জন্য গেজেট প্রকাশ করে শহীদ জিয়াকে ছোট করা যাবে না। বরং শহীদ জিয়ার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে নেতাকর্মীদের কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
শিক্ষক নেতা জাকির হোসেন বলেন, জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম ঘোষক। যা আর কোনো রাজনীতিবিদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তিনি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে কাজ করেছেন। দেশে যদি আজ সত্য বলার পরিবেশ নেই। যদি থাকতো তাহলে সবার মুখে শুধু জিয়ার নামই উচ্চারণ হতো।