সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা
অনিশ্চিত গন্তব্যে পাটকল শ্রমিকরা
প্রকাশ: ০১:৪৪ এএম, ১৫ জানুয়ারী,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০১:১৭ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
পাটকে অতীতে সোনালী আঁশ বলা হতো। পাট ও পাটশিল্প ছিল আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের উল্লেখযোগ্য মাধ্যম। কিন্তু প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও যুতসই পরিকল্পনার অভাবে পাটের সেই অতীত গৌরব ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। নিকট অতীতে প্রাচ্যের ড্যান্ডিখ্যাত নারায়ণগঞ্জের আদমজী জুট মিল ও কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পাটকলসহ পাট ব্যবসার ব্যাপক খ্যাতি ছিল। তবে এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম পাটকল আদমজী জুট মিল বন্ধ হওয়ার কয়েক বছরের ব্যবধানে নারায়ণগঞ্জে আরও অন্তত ১২টি পাটকল বন্ধ হয়ে যায়। আর সে ধারাবাহিকতায় শ্রমিকদের স্বার্থের কথা বিবেচনা না করেই দেশের সকল সরকারি পাটকলই প্রায় ছয়মাস আগে বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে কর্মচ্যুত শ্রমিকদের নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নতুন জটিলতা। দেশের সরকারি পাটকলগুলো বন্ধের সময় সরকার অনেক ছেলে ভোলানো কথা শোনালেও এখন পর্যন্ত তার কোন প্রতিফলন নেই। এ নিয়ে যারা বিভিন্ন আশঙ্কার কথা বলেছিলেন সেসবই এখন সত্যে পরিণত হতে চলেছে। সরকার পক্ষের দাবি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম, দলবাজি, সময়মতো কাঁচাপাট কিনতে ব্যর্থতা, পাটের মানহীনতা, প্রয়োজনের অতিরিক্ত জনবল, সিবিএ’র লাগামহীন দৌরাত্ম্য, সেকেলে এবং মানহীন যন্ত্রপাতি ও লাগামহীন দুর্নীতির কারণে এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। কিন্তু সরকার এসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা না করে উল্টো পঞ্চাশ হাজার পাটকল শ্রমিককে ‘বলিরপাঁঠা’ বানিয়েছেন।
মূলত অব্যবস্থাপনা ও লাগামহীন দুর্নীতির কারণেই দেশের পাট ও পাটশিল্প ক্ষয়িষ্ণু শিল্পে পরিণত হয়েছে। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ২০১৪-১৫ অর্থবছর পাটের রফতানি বাড়ানো সম্ভব হয়নি। গত ২০১৮ সালের জুলাই থেকে পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি কমেছে ২০ শতাংশেরও বেশি। এ সময়ে ২ হাজার ৯শ ১২ কোটি টাকার রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও তার ২৮ শতাংশও পূরণ করা সম্ভব হয়নি। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কাঁচাপাটের রফতানি কমেছে ৬১ শতাংশ, পাটের সুতা ২৩ শতাংশ ও অন্যান্য পাটপণ্য ৫৪ শতাংশ। বর্তমানে তা আরও প্রান্তিক পর্যায়ে নেমে এসেছে। পাটশিল্প আমাদের অতি সম্ভাবনাময় শিল্প হলেও সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতার কারণেই এই শিল্প কখনোই প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি পায়নি। ১৯৬২, ১৯৬৪ ও ১৯৭৪ সালে জারি করা অধ্যাদেশের ভিত্তিতেই চলেছে পাটশিল্প। সংশোধিত অধ্যাদেশে পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জনসহ কিছু সংযোজনও করা হয়েছে। কিন্তু তা নতুন শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যথোপযুক্ত হয়ে ওঠেনি; গড়ে ওঠেনি স্থায়ী কোন কাঠামো। ফলে এই শিল্পের যথাযথ বিকাশও সম্ভব হয়নি। সঙ্গত কারণেই পাটশিল্পের সোনালী অতীত ধরে রাখা যায়নি। ফলশ্রুতিতে সরকারি কারখানাগুলো বন্ধের মত অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)র প্রদত্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ি, স্বাধীনতার পর প্রথম ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে রফতানি আয়ের ৯০ শতাংশই ছিল পাটের দখলে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রফতানি খাতে পাটের অবদান ২ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। এ হার বাড়ানোর উদ্যোগের কথা ফলাও করে প্রচার করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। মূলত দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা এবং যথাযথ পরিকল্পনার অভাবই পাটশিল্পের এই দুরবস্থার জন্য দায়ী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু সরকার এসব বিষয়ে কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে পুরো শিল্পকেই বন্ধ করে দিয়েছে। যা মাথাব্যথা সাড়াতে মাথা কেটে ফেলার শামিল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, সরকারি পাটকল বন্ধ ঘোষণার দীর্ঘদিন পরেও ২৩ হাজার বদলি শ্রমিকদের পাওনা অপরিশোধিতই রয়ে গেছে। ৮ হাজার দৈনিক শ্রমিক জানেন না তাদের পাওনা টাকা আদৌ পাবেন কি না ? স্থায়ী শ্রমিকদের মধ্যে যারা ইতোমধ্যেই ব্যাংকের চেক পেয়েছেন, তাদের নিজস্ব হিসাবের সাথে সরকারের হিসাবের কোন মিল নেই। শ্রমিকদের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল যে, তাদের পাওনাদির হিসাব মিলগেটে ঝুলিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি বরং শ্রমিকদের পাওনা টাকা পেতে অনেক কঠিন শর্ত জুড়ে দিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যেই তাদের কলোনির জমি খালি করতে বলা হয়েছে। কিন্তু এসব ভাগ্যাহত শ্রমিক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন তার কোন দিকনির্দেশনা দিতে পারেনি সরকার। ফলে কর্মহীন শ্রমিকরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন। সরকারি পাটকলে কোটি কোটি টাকা লোকসানের পেছনে কাঁচা পাট কেনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরে অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনাগুলো ছিল বহুল আলোচিত। তার সঙ্গে জড়িত ছিলেন প্রকল্পপ্রধান থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, যাদের স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে পাটকলগুলো বন্ধ করতে হয়েছে তারা বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে। মাঝখান থেকে বেকার হয়েছেন হাজার হাজার প্রান্তিক পাটকল শ্রমিক। আবার পাওনা পরিশোধ না করেই হুমকিধমকি দিয়ে শ্রমিকদের বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন শ্রমিকরা। যা শুধু অগ্রহণযোগ্যই নয় বরং অমানবিকও।
সরকারি পাটকল বেসরকারিকরণ করা হলে পাটশিল্পের সম্প্রসারণ ও শ্রমিকদের কর্মসংস্থান বাড়বে, এমনটা বলা হলেও যুক্তিটির কোনো বাস্তব ভিত্তি পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন সময় বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া অর্ধেক কারখানাই চালু রাখা সম্ভব হয়নি। এসব ক্ষেত্রে সস্তায় জমি ও যন্ত্রপাতি লুট অথবা পরিত্যক্ত জমি দেখিয়ে বিপুল অঙ্কের ব্যাংকঋণ নেয়া হয়েছে। সরকারি পাটকল বেসরকারিকরণের মাধ্যমে এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা রয়েছে। গত জুলাইয়ে বন্ধ হওয়া সরকারি পাটকল নিয়ে রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ বিশ্লেষণমূলক ত্রৈমাসিক সংকলন ‘সর্বজনকথা’র উদ্যোগে পরিচালিত সরেজমিন অনুসন্ধান ও গবেষণা প্রতিবেদনে এমনটাই উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘মাত্র ১০০০ থেকে ১২০০ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করলেই রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের উৎপাদন সক্ষমতা কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব ছিল। প্রতি ইউনিটে খরচ অনেক কমে আসত। কিন্তু সমস্যাগুলো সমাধানে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। বরং ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার তহবিলের পরিবর্তে পাটকল বন্ধ করে শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দেয়ার বাজেট হিসেবে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ফলে এটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, মূলত অর্থের সংকট নয় বরং সদিচ্ছার অভাবই পাটশিল্পের লোকসানের মূল কারণ।
গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারি পাটকলের লোকসানের অন্যতম কারণ হচ্ছে পাট মন্ত্রণালয় থেকে সঠিক সময়ে কাঁচা পাট কেনায় বরাদ্দ না দেয়া। বেসরকারি পাটকল মালিকেরা কম দামে পাট কিনে গুদামজাত করে আর বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) মৌসুম চলে গেলে ইচ্ছাকৃতভাবে বেশি দামে নিম্নমানের পাট কেনে। শ শ বেল পাটের ভেতরে বালু ও পানি দিয়ে ওজন বেশি দেখিয়ে দাম ধরার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। যন্ত্রাংশ রক্ষণাবেক্ষণের খরচ দুই থেকে তিন গুণ বেশি দেখানোও লোকসানের অন্যতম কারণ। মূলত, স্বাধীনতার পর ৪৪ বছর পাটকল লোকসান করলেও নতুন কোনো বিনিয়োগ হয়নি। যন্ত্রপাতি আধুনিকায়নেও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। অথচ লোকসানের কারণ খতিয়ে দেখলেই বোঝা যায় শুধু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেই পাটকলগুলো লাভজনক করা সম্ভব ছিল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি পাটকলগুলোতে ক্রমবর্ধমান লোকসান ও ফলশ্রুতিতে কারখানা বন্ধের জন্য শ্রমিকরা কোন ভাবেই দায়ী নয় বরং এসব অনিয়মের সাথে সরকারি রাঘববোয়ালরাই জড়িত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, এজন্য শ্রমিকদেরই শাস্তি দেয়া হয়েছে। আর বিভিষণরা রয়েছেন বহাল তবিয়তে। তাই বিষয়টি বিভিন্ন মহলে নানাবিধ প্রশ্ন উঠেছে। কোটি কোটি টাকা লোকসানের অজুহাতে পাটকল বন্ধ হলে পাটমন্ত্রীর চাকরি কেন থাকবে এমন প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ। সীমাহীন ব্যর্থতার দায় নিয়ে বিজেএমসির কর্মকর্তারা কেন গাড়ি চড়বেন, তাদের অপরাধের শাস্তি কেন হবে না-এমন প্রশ্নেরও কোন সদুত্তর পাওয়া যাচ্ছে না।
‘ব্যবসা করা সরকারের কাজ না’ পাটকল বন্ধের পেছনে এমন যুক্তিও দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষে। কিন্তু দেশের হাজার হাজার মানুষকে বিপদে ফেলা বা তাদের কর্মচ্যুত করে বেকার করা কি সরকারের দায়িত্ব ? এ প্রশ্নকেও তো অযৌক্তিক মনে করার কোন সুযোগ নেই। আমাদের সরকার ব্যবসাবিমুখ হলেও চীন, রাশিয়া ও ভারতের সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ব্যবসা করছে দেদারছে। কেবল বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংস্থাই ব্যবসা করলে সমস্যা। এমন অবাস্তব দাবিও হালে পানি পাচ্ছে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, গোটা দশক ধরে ‘কর্মসংস্থানহীন উন্নয়ন’ করে গেছে সরকার। অথচ বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল ঘরে ঘরে চাকরি দেয়া। কিন্তু ঘটেছে তার পুরোপুরি উল্টোটা। এখন ঘরে ঘরে চাকরিচ্যুতির ঘটনায় এখন ওপেন সিক্রেট। এতে লাভবান হচ্ছে একশ্রেণির অতিমুনাফাখোর গোষ্ঠী। ফলে অতিধনীর সংখ্যা বৃদ্ধির হারে চীন-ভিয়েতনামকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ সবার ওপরে ওঠে এসেছে। যা আমাদের মত তৃতীয় বিশে^র রাষ্ট্রের জন্য মোটেই সুখবর নয়। পাটশিল্প অতিগুরুত্বপূর্ণ শিল্প বলেই এবিষয়ে একটি স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয়ও রয়েছে আমাদের দেশে। কিন্তু এই মন্ত্রণালয় পাট শিল্পের আন্তর্জাতিকীকরণ বা এই সেক্টরের অনিয়ম বন্ধে কোন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটা মন্ত্রণালয়ের নাকের ডগায় দিনের পর দিন অবলীলায় লুটপাট হয়েছে; তসরুফ হয়েছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ। কিন্তু বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করা হয়েছে। এসব অনিয়মের সাথে কারা জড়িত সেটি কারোরই অজানা নয়। পরিচালনায়, পরিবহনে আর পাট কেনার প্রটিতি স্তরে নজিরবিহীন অনিয়ম কারা করে সে বিষয়টিও খুবই স্পষ্ট। প্রাপ্ত তথ্যমতে, রাজনৈতিক ফরিয়া, সিবিএ নেতা, প্রকল্পপ্রধান, ব্যবস্থাপক ও সরবরাহকারীদের একাংশ এসব অনিয়মের সাথে সরাসরি জড়িত। এদের কারণেই সঠিক সময়ে পাট কেনার বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। বেসরকারি মালিকরা কম দামে পাট কেনেন আর মৌসুম চলে গেলে বেশি দামে পচা পাট কেনে বিজেএমসি! যন্ত্রাংশ রক্ষণাবেক্ষণের খরচ দুই গুণ, তিন গুণ বেশি দেখানো হয়েছে। ফলে সকল পাটকল বন্ধের মত অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে।
আমাদের দেশের পাটশিল্প কাকতালীয়ভাবে গড়ে ওঠেনি বরং এই শিল্পের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল হিসেবেই এই শিল্প মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল। সঙ্গত কারণেই আমাদের পাটশিল্প ছিল রেমিট্যান্স আহরণের উল্লেখযোগ্য মাধ্যম। কিন্তু অনিয়ম ও লাগামহীন দুর্নীতির কারণে তা এখন একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে নেমে এসেছে। করোনা মহামারির কারণে দেশ যখন বিপর্যস্ত এবং মানুষের আয়-উপার্জন যখন প্রান্তিক পর্যায়ে নেমে এসছে তখন পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্তকে কেউই যৌক্তিক ও কাক্সিক্ষত মনে করছেন না। যারা দীর্ঘদিন এই শিল্পকে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন তাদের সাথে এমন নির্মম পরিহাস কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। দেশে দারিদ্র্যবিমোচন ও বেকারত্ব দূরীকরণের যখন ব্যাপকভিত্তিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রয়োজন তখন সরকার কর্মসংকোচনের নীতি গ্রহণ করেছে । শুধু পাটকল নয় বরং চিনিকল, কাগজকল বিভিন্ন উৎপাদনমুখী কারখানাগুলো বন্ধের তালিকায় আসতে শুরু করেছে। অথচ সরকারি গণমাধ্যমগুলো দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে বলে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে ঘটছে তার উল্টোটা। কারণ, মানুষের কর্মসংস্থান না করে কর্মচ্যুতি করা কখনোই উন্নয়নের রোল মডেল হতে পারে না। আর কর্মহীন উন্নয়ন কখনো টেকসই উন্নয়ন নয়। তাই দেশ ও জাতিকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে হলে বেকারত্ব দূরীকরণের মাধ্যমে কর্মযোগ্য সকল নাগরিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় আমাদের কোন অর্জনই টেকসই হবে না।
প্রায় ছয়মাস হলো আমাদের দেশের সরকারি পাটকলগুলো নানা অজুহাতে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কারখানা বন্ধের সময় শ্রমিকদের যাবতীয় পাওয়া পরিশোধের কথা বলা হলেও এক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোন অগ্রগতি নেই বরং নানা অজুহাতে শ্রমিকদের পাওনা থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে। ফলে কর্মচ্যুত পাটকল শ্রমিকদের গন্তব্য অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো জনগণের সকল সমস্যার সমাধান করা। তাই অবিলম্বে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করে তাদের যথাযথভাবে পূনর্বাসন করার দায়িত্ব সরকারের। বিষয়টি সরকার যত তাড়াতাড়ি উপলব্ধি করবে ততই মঙ্গল। সরকারের কাছে দেশের মানুষ দায়িত্বশীল আচরণ আশা করে।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
smmjoy@gmail.com