সরদার সিরাজ
২০১২ সাল থেকে ২০১৭ এই পাঁচ বছরে অতিধনীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। ওই পাঁচ বছরে বাংলাদেশে ধনকুবেরের সংখ্যা বেড়েছে বার্ষিক ১৭.৩% হারে। আঙ্কটাড, জিএফআই ও টিআইবিসহ অনেক গবেষণা সংস্থার তথ্য মতে, গত ১৫ বছরে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে কমপক
বেড়েছে দারিদ্র্য, কমেছে বিনিয়োগ
প্রকাশ: ০৩:৩১ এএম, ২ জানুয়ারী,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০১:২২ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
সাম্প্রতিককালে কতিপয় মন্ত্রী, এমপি ও ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দ প্রায় ক্ষেত্রেই বলেন, এটা উন্নয়ন মডেল, ওটা উন্নয়ন মডেল, কিছুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশ উন্নতিতে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ইত্যাদি দেশকে ছাড়িয়ে যাবে। এছাড়া, তারা আরও বলেন, দেশে যেটুকু উন্নতি হয়েছে, তা শুধুমাত্র আ’লীগ সরকারের সময়ই হয়েছে। অন্য সরকারের সময় দেশের কোন উন্নতি হয়নি। এখন দেখা যাক দেশের উন্নতির খতিয়ান ও সময়। দেশে কৃষি, নারীর শিক্ষা, প্রসবকালীন মৃত্যুহার হ্রাস ইত্যাদিতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। এবং তা হয়েছে ধারাবাহিকভাবে। এতে নির্দিষ্ট কোন সরকারের একক কৃতিত্ব নেই। এছাড়া, দেশের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত উন্নতি হয়নি। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায়ও নয়। তবে, সার্বিকভাবে দেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হয়েছে ২০১৫ সালে, অন্য ১১টি দেশের সাথে। এটা হয়েছে এমডিজির ভিত্তিতে। তথা ২০০০-২০১৫ সালের উন্নতির ভিত্তিতে। উপরন্তু শর্ত পূরণ হলে ২০২৪ সালে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তীর্ণ হবে, আরও ১১টি দেশের সাথে। এটাও হচ্ছেÑপূর্ববর্তী সময়ের উন্নতির ধারাবাহিকতায়। যা’হোক, দেশের উন্নয়নের মাপকাঠি বিবিএস’র তথ্য। কিন্তু সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বিবিএস’র বেশিরভাগ তথ্য সঠিক নয় বলে আমলে নিচ্ছে না। এমনকি দেশের বেশিরভাগ মানুষও বিশ্বাস করছে না। তাই দেশের উন্নতির প্রকৃত মাপকাঠি হচ্ছেÑআন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর বৈশ্বিক র্যাংকিং। যার ব্যাপারে দেশের মানুষ, এমনকি সরকারেরও কোন আপত্তি উঠেনি। ফলে এটাই গ্রহণযোগ্য । ফাও’র ২০১৯ সালের তথ্য মতে, ‘বর্তমানে বিশ্বে কৃষি উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থানÑচালে চতুর্থ, মাছে অষ্টম, স্বাদু পানির মাছে তৃতীয়, ইলিশে শীর্ষে (৮৬%), সবজিতে তৃতীয়, আলুতে অষ্টম, ফলে দশম, কাঁঠালে দ্বিতীয়, আমে সপ্তম, পেয়ারায় অষ্টম, পেঁপেতে ১৪তম, ছাগলে চতুর্থ ও ছাগলের মাংসে পঞ্চম এবং গবাদিপশুতে দ্বাদশ (অবশ্য দেশের কৃষির এ উন্নতি হয়েছে স্বাধীনতার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে। তবে যান্ত্রিকরণ তেমন না হওয়া, কৃষি জমির ২৭% সেচ সুবিধার বাইরে থাকা, কৃষি উপকরণ ও কৃষি শ্রমিকের মজুরি খুব বেশি হওয়ায় দেশের কৃষির উৎপাদন ব্যয় অত্যধিক। তাই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না, কৃষক ফসলের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে)। দ্য ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানীদের গবেষণা প্রতিবেদন মতে, ‘উচ্চতায় যে দেশের মানুষেরা এগিয়ে, তাদের তুলনায় বাংলাদেশসহ মোট চারটি দেশের মেয়েরা নিম্নমানের পুষ্টির কারণে সাত ইঞ্চির বেশি উচ্চতা হারাচ্ছে। বাকি তিনটি দেশ নেপাল, গুয়াতেমালা ও তিমুর’। ইউএনডিপি’র মানব উন্নয়ন সূচক-২০২০ মতে, ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৩তম (২০১৯ সালে ১৩৫তম, ২০১৮ সালে ১৩৬তম, ২০১৭ সালে ১৩৯তম ও ২০১৬ সালে ছিল ১৪২তম)। ২০২০ সালের স্কোর ০.৬৩২, যা ২০১৯ সালে ছিল ০.৬১৪, ভারত ১৩১তম, পাকিস্তান ১৫৪তম, শ্রীলঙ্কা ৭২তম, মালদ্বীপ ৯৫তম, ভুটান ১২৯তম, নেপাল ১৪২তম ও আফগানিস্তান ১৬৯তম। উক্ত প্রতিবেদন মতে, প্রতি ১০ হাজার নাগরিকের জন্য গড়ে চিকিৎসক আছেনÑবাংলাদেশে ৫.৮, ভারতে ৮.৬ ও পাকিস্তানে ৯.৮ জন। বাংলাদেশের সবচেয়ে গরিব ৪০% মানুষের আয় মোট জাতীয় আয়ের মাত্র ২১%। আর সবচেয়ে ধনী ১০% আয় মোট জাতীয় আয়ের প্রায় ২৭%। বাংলাদেশের গিনি সূচকে পয়েন্ট দশমিক ৪৭৮। কোনও দেশের এই স্কোর দশমিক ৫০-এর ঘর পেরলেই উচ্চ বৈষম্যের দেশ হিসেবে ধরা হয়। ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের ২৪.৬% মানুষ বহুমুখী দারিদ্র্যের শিকার। এছাড়া, ১৮.২% মানুষ বহুমুখী দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২.৬ বছর, যা ভারতে ৬৯.৭ বছর। বাংলাদেশে প্রতি এক লাখ জীবিত শিশু জন্মগ্রহণকালে ১৭৩ জন মা মারা যান। বাংলাদেশের ২৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী মানুষের মাধ্যমিক পাস- নারী ৩৯.৮% ও পুরুষ ৪৭.৫%। শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ৩৬.৩%। ১৯৯০ থেকে ২০১৯ সাল নাগাদ বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ১৪.৪ বছর, গড় শিক্ষাকাল ৩.৪ বছর, প্রত্যাশিত শিক্ষাকাল ৬ বছর ও মাথাপিছু আয় প্রায় ২২০.১% বেড়েছে। অর্থাৎ গত ৩০ বছরে মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ ৬০.৪% এগিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ মানব উন্নয়নে মধ্যম দেশের স্তরে রয়েছে।
‘গ্লোবাল সাসটেইনেবল কম্পিটিটিভনেস ইনডেস্ক-২০২০’ মতে, ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১১৫তম, ভারত ১২৭তম, নেপাল ৫৩তম, ভুটান ৫৫তম, মালদ্বীপ ৬৫তম, শ্রীলংকা ৮৬তম, পাকিস্তান ১৭৪তম ও আফগানিস্তান ১৮৮তম। ওয়াটার এইড’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্যানিটেশন ও ক্লাইমেট ভালনারেবিলিটি ইনডেক্স-২০২০ মতে, ১৮১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৩৬তম (৫২% মানুষ সীমিত পরিসরে ও অনুন্নত স্যানিটেশন সুবিধার আওতায় রয়েছে)। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন-২০২০ মতে, প্লাস্টিক দূষণের দিক থেকে গঙ্গা, পদ্মা, যমুনা বিশ্বের দ্বিতীয় দূষিত অববাহিকা। এসডিও’র প্রতিবেদনÑ২০১৯ মতে, বাংলাদেশের জলে-স্থলে বর্তমানে ৬৫ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হয়েছে। প্রতিদিন এর সঙ্গে ৩ হাজার টন করে যোগ হচ্ছে। দেশের পরিবেশের জন্য অন্যতম প্রধান হুমকি প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যাগ। বিশ্বব্যাংকের ২০১৯ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী পরিবেশ দূষণের কারণে মৃত্যু দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ শীর্ষে। টাইমস হায়ার এডুকেশন ২০২১ সালের বিশ্বের ৯৩টি দেশের ১,৪০০টি সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। তাতে বাংলাদেশের ২টি, ভারতের ৬৩টি, পাকিস্তানের ১৭টি, শ্রীলঙ্কার ২টি ও নেপালের ১টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। বিশ্বসেরা গবেষকদের বৈশ্বিক ডাটাবেজ তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। প্রায় ১.৬ লাখ বিজ্ঞানীর এই তালিকায় বাংলাদেশের ২৬ জন ও ভারতের প্রায় দেড় হাজার গবেষক রয়েছেন। ইউরোপীয় সেন্টার ফর ডিজিটাল কম্পিটিটিভনেসের ‘ডিজিটাল রাইজার রিপোর্ট-২০২০’ মতে, ‘প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও ডিজিটাল রূপান্তরে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এখনো পেছনের সারিতেই বাংলাদেশের অবস্থান। ডিজিটাল উত্থানে দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ ও পয়েন্ট মাইনাস ৪৯।’ ইউনেস্কোর গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট-২০২০ মতে, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের হার : বাংলাদেশে-৫০%, ভুটানে-১০০%, নেপালে-৯৭%, মালদ্বীপে- ৯০%, শ্রীলংকায়- ৮৩%, পাকিস্তানে- ৭৮% ও ভারতে- ৭০%। এছাড়া, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের হার : বাংলাদেশে-৩৪%, ভুটানে-১০০%, নেপালে-৮৩%, শ্রীলংকায়- ৮২% ও ভারতে- ৭৬%। উপরন্তু সংস্থাটি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের হারের ভিত্তিতে দেশগুলোকে উচ্চ, মধ্যম ও নিম্ন ভাগে ভাগ করেছে। সে তালিকায় বাংলাদেশ ‘নিম্ন’, পাকিস্তান উচ্চ ও মালদ্বীপ মধ্যম ক্যাটাগরিতে রয়েছে (দেশের উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষকের অবস্থাও প্রায় অনুরূপ। অর্থাৎ দেশের বেশিরভাগ শিক্ষক প্রশিক্ষণহীন! ফলে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান নিম্ন। সে সাথে শিক্ষার মান অতি নিম্নতর। উপরন্তু দেশের শিক্ষা প্রধানত সেকেলে, কর্মমুখী নয়। তাই দেশে কারিগরি শিক্ষার হার বর্তমানে ৮-১০%, যা জার্মানিতে ৭৩% ও জাপানে ৭১%। প্রযুক্তি শিক্ষাও নগণ্য। সর্বোপরি করোনার কারণে প্রায় এক বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অটোপাস দেওয়া হয়েছে। ফলে শিক্ষার মান আরও নিম্নতর হবে)। ইউএনডিপির গ্লোবাল নলেজ ইনডেক্স-২০২০ মতে, ১৩৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১১২তম (স্কোর ৩৫.৯), ভারত ৭৫তম, শ্রীলংকা ৮৭তম, ভুটান ৪০.৯, নেপাল ৩৬.২ ও পাকিস্তান ৩৫.৯ স্কোর। বাংলাদেশ ২০১২ সালেও ১১২তম ছিল।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কম্পিটিটিভনেস রিপোর্ট- ২০১৯ মতে, পর্যটনে বিশ্বের ১৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১১৪তম (আগে ছিল ১০৪তম), ভারত ৩৪তম, শ্রীলঙ্কা ৭৭তম ও নেপাল ১০২তম। আইএলও’র এশিয়া প্যাসিফিক এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক অ্যান্ড হিউম্যান সেন্ট্রেড ফিউচার অব ওয়ার্ক শীর্ষক প্রতিবেদন মতে, করোনায় সরকারি সহায়তার ক্ষেত্রে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের সরকারি সহায়তা তলানিতে। এ অঞ্চলের ৩৬টি দেশের সহায়তার গড় জিডিপির প্রায় ১৪%, আর বাংলাদেশে সেটা জিডিপির ৪%-এর নিচে।এছাড়া, এ অঞ্চলে শ্রমিকের উৎপাদনশীলতায় বাংলাদেশ গত এক দশকে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে। ২০০১-২০০৯ সালের তুলনায় পরবর্তী দশকে বাংলাদেশে শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা কমেছে। আইএলও’র গ্লোবাল ওয়েজ রিপোর্ট-২০২০-২১ মতে, ক্রয়ক্ষমতার বিবেচনায় ২০১৯ সালে মাসিক ন্যূনতম মজুরি ছিল- বাংলাদেশে ৪৮ ডলার (বাংলাদেশে শোভন মজুরি প্রয়োজন ২৫২ মার্কিন ডলার), পাকিস্তানে ৪৯১ ডলার, ভারত ও শ্রীলঙ্কায় ৫০ ডলার করে। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গড় ৩৮১ ডলার। ২০২০ সালে করোনাকালে বাংলাদেশের শ্রমিকদের অবস্থা আরও নাজুক হয়েছে। অথচ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতার প্রবৃদ্ধিÑবাংলাদেশে ৫.৮%, মিয়ানমারে ৫.৯%, পাকিস্তানে ২.২%, নেপালে ৪.৩%, শ্রীলঙ্কায় ৪% ও আফগানিস্তানে ১.৭%। মাস্টারকার্ডের ‘দ্য মাস্টারকার্ড ইনডেক্স অব ওমেন এন্ট্রাপ্রেনিওর্স-২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদন মতে, ৫৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৫৮তম (গত বছর ছিল ৫৭তম)। দেশের ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যে নারীদের প্রতিনিধিত্ব ১৫ শতাংশের নিচে। পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তারা মূলত কৃষি ও মৎস্যের মতো প্রাথমিক ব্যবসায় জড়িত। যেসব খাতের প্রভাব অর্থনীতিতে বেশি, সেসব খাতে নারী নেতৃত্বের অনুপাত ২০.৭%। ভেরিস্ক ম্যাপেলক্রপটের মডার্ন সেøভারি ইনেডক্স২০২০ মতে, বাংলাদেশ ও ভারতের অবস্থার অবনতি হয়েছে। প্রথমবারের মতো এই দু’টি দেশ ‘ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ’ দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে। ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ ৩২টি দেশের তালিকায় চীন ও মিয়ানমারও রয়েছে। আইএমএফ'র পিপিপিকে ডলারে জিডিপি’তে রূপান্তরিত করার তথ্য নিয়ে বৈশ্বিক ধনী-গরিব দেশের তালিকা-২০২০ তৈরি করেছে গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিন ও হাউমাচ ডটনেট। সে তালিকায় ১৯১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৪৩তম (৫,০২৮ ডলার), মালদ্বীপ ৬৬তম, শ্রীলঙ্কা ৯৯তম, ভুটান ১১২তম, ভারত ১২৪তম, মিয়ানমার ১৩৪তম, পাকিস্তান ১৩৮তম, নেপাল ১৬২তম ও আফগানিস্তান ১৭৬তম। ওয়েলথ এক্সের ওয়ার্ল্ড আলট্রা ওয়েলথ রিপোর্ট-২০১৮ মোতাবেক ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ এই পাঁচ বছরে অতিধনীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। ওই পাঁঁচ বছরে বাংলাদেশে ধনকুবেরের সংখ্যা বেড়েছে বার্ষিক ১৭.৩% হারে। আঙ্কটাড, জিএফআই ও টিআইবিসহ অনেক গবেষণা সংস্থার তথ্য মতে, গত ১৫ বছরে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে কমপক্ষে ১২ হাজার কোটি ডলার পাচার হয়েছে। জিএফআই বলছে, ২০১৫ সালেই বিশ্বব্যাপী অবৈধ অর্থ পাচারের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৩০ নম্বরে। গেল কিছুদিনে প্রতিবছরই পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ ২৮% হারে বাড়ছেÑভোয়া। ট্রেস ২০২০ সালে ঘুষ লেনদেনের ঝুঁকি নিয়ে একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকায় বিশ্বের ১৯৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৬৬ নম্বরে (গত বছর ছিল ১৭৮তম), ভুটান ৪৮, ভারত ৭৭, মালদ্বীপ ৮৫, শ্রীলঙ্কা ৮৭, নেপাল ১০৭, চীন ১২৬, পাকিস্তান ১৫৩ ও আফগানিস্তান ১৭১ নম্বরে (প্রাক্তণ অর্থমন্ত্রী মুহিত একবার জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপনকালে বলেছিলেন, দেশের জিডিপির ৬০% কালো টাকা)।
ফার্স্ট গ্লোবাল আয়োজিত আন্তর্জাতিক রোবটিকস প্রতিযোগিতা-২০২০ মতে, ১৭৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ওকলা’স স্পিডটেস্ট গ্লোবাল ইনডেক্স-২০২০ মতে, ১৩৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৩। নেপাল, শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের চেয়ে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। ব্রডব্র্যান্ডের গতির ক্ষেত্রে ১৭৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৯৮তম, নেপাল ১১৩, পাকিস্তান ১৫৯ ও ভারত ৭০তম। ওয়েবসাইট কেব্লডটইউকের মতে, ২০২০ সালে ব্রডব্যান্ডের গতির দিকে ২২১টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশ ১৮৪তম, আর দামের ক্ষেত্রে ৫৭তম। অক্সফোর্ড ইন্টারনেট সোসাইটির মতে, ২০১৯ সালে ইউক্রেনের আইটি এক্সপোর্ট থেকে আয় হয়েছে ৪.২৭ বিলিয়ন ডলার (প্রবৃদ্ধি ৩০.২%)। এছাড়া, ২০১৭ সালে ফিলিপাইনের বিপিও ইন্ডাস্ট্রি থেকে আয় ছিল প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে তাদের আয় প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার হবে। আইটি আউটসোর্সিং দেশটির জিডিপিতে অবদান প্রায় ১১%। আর পুরো ফ্রিল্যান্সিং কমিউনিটিতে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮তম। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি ইনডেক্স-২০২০ মতে, বিশ্বের ১৬০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৬৫তম, স্কোর ৪৪.১৬ (গত বছর ছিল ৭৩তম) এবং ভারত ৩৫তম, পাকিস্তান ৬৬তম, নেপাল ৯৩তম, শ্রীলংকা ৯৮তম, ভুটান ১১৫তম, আফগানিস্তান ১৩২তম ও মিয়ানমার ১৩৯তম। এসক্যাপ ও আইএলও’র ‘দ্য প্রোটেকশন উই ওয়ান্ট : সোশ্যাল আউটলুক ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক’ শীর্ষক প্রতিবেদন মতে, চলমান কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপটে জিডিপিতে স্বাস্থ্য-বহির্ভূত সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয়ের হার বিবেচনায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে। যেমন : বাংলাদেশের ০.৭%, ইরানের-১০.১%, তুরস্কের-৯.৯%, শ্রীলংকার- ৫.২%, ভারতের ৩.২%, মালদ্বীপের ২.৯%, নেপালের ২.১%, পাকিস্তানের ১.৮%, আফগানিস্তানের ১.৮%, ভুটানের ১%। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দ্য ব্লুমবার্গ হেলথ-এফিসিয়েন্সি ইনডেক্স-২০২০ তৈরি করেছে বিশ্বের বৃহত্তম ৫৭টি অর্থনৈতিক দেশকে নিয়ে। এই তালিকায় বাংলাদেশ নেই। আংকটাডের ‘রিভিউ অব ম্যারিটাইম ট্রান্সপোর্ট-২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদন মতে, ২০১৯ সালে বৈশ্বিক জাহাজ রিসাইকেল করেছে : বাংলাদেশ ৫৪.৭%, ভারত ২৬.৬%, তুরস্ক ৯%, চীন ৩.১%, পাকিস্তান ২.২% ও বাকি বিশ্ব ৪.৪%। ওয়াইপিএসএ-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ৭০০ মহাসমুদ্রগামী জাহাজ পরিত্যক্ত হয়। যার অন্যতম বড় ক্রেতা বাংলাদেশ। ওয়ার্ল্ড এনার্জি কাউন্সিলের ‘ওয়ার্ল্ড এনার্জি ট্রিলেমা ইনডেক্স-২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদন মতে, ১২৮টি দেশের মধ্যে সামগ্রিক পারফরম্যান্সে বাংলাদেশ ৯৪তম ও গড় পয়েন্ট-৪৭.৮ (জ্বালানি নিরাপত্তায় ৩৯, পরিবেশগত টেকসইয়ে ৫৬ এবং জ্বালানি সরবরাহ ও প্রাপ্যতায় ৫০.৪)। জ্বালানি নিরাপত্তার গ্রেড বিবেচনায় খারাপ দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ (ডি-েেগ্রডে চতুর্থ)। তবে, জ্বালানি খাতের দ্রুত উন্নয়ন করছে এমন শীর্ষ দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। গত ১৩ অক্টোবর প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট মতে, বাংলাদেশের বিদেশী ঋণের পরিমাণ ছিল ২০০৯ সালে ২৫.৩ বিলিয়ন ডলার, ২০১৯ সালের শেষে এসে যার পরিমাণ ছিল ৫৭ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালের আগস্টে প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন মতে, বিদ্যুৎ, সড়ক পরিবহন এবং পানি ও পয়োনিষ্কাশন অবকাঠামো ব্যবস্থায় এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ২৮তম। এমনকি বাংলাদেশ দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক মানেও নেই। বাংলাদেশে এখন জিডিপির ২-৩% বিনিয়োগ করা হয় অবকাঠামো খাতে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ব্যবসা সহজীকরণ সূচক-২০১৯ মতে, বিশ্বের ১৪১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১০৫তম। ২০১৯ সালের তথ্য মতে, বৈশ্বিক অভিবাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ৬ষ্ঠ এবং রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে ৯বম। বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন মতে, প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাবে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে শিক্ষা কার্যক্রম শেষ করার পর প্রায় ৪০% শিক্ষার্থী বেকারত্ব সমস্যায় ভুগছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিসিং অ্যান্ড এক্সপ্লয়টেড চিলড্রেনের ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, শিশুদের দিয়ে যৌনদৃশ্যে কাজ করানো, তাদের যৌন নিপীড়নের ছবি ও ভিডিও ধারণ এবং তা আদান-প্রদানের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। এ ক্ষেত্রে ভারত প্রথম, পাকিস্তান দ্বিতীয়, ইরাক তৃতীয়, আলজেরিয়ায় চতুর্থ। ব্লুমবার্গ’র প্রতিবেদন মতে, করোনা মহামারি মোকাবেলায় দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। আর বিশ্ব তালিকায় রয়েছে ২০ নম্ব^রে।
যুক্তরাষ্ট্রের মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কর্পোরেশনের ‘বাংলাদেশ স্কোর কার্ড-২০২০-২১’ প্রতিবেদন মতে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে দুর্নীতি ও রাজনৈতিক অধিকারসহ ১৩টি সূচকে ফের রেড জোনে নাম উঠেছে। এর আগের তালিকায় (২০১৯-২০) ছিল একই জোনে ১২টি সূচক। এবার নতুন করে যোগ হয়েছে ফিসক্যাল পলিসি। আর ২০১৮-১৯ সালে ছিল ১১টি ও ২০১৭-১৮ সালে ছিল ৭টি সূচক। ২০২০-২১ কার্ডে রেড জোনে থাকা সূচকগুলো হচ্ছে : কন্ট্রোল অব করাপশন, জমির অধিকার ও প্রাপ্যতা, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কার্যকারিতা, বাণিজ্য নীতিমালা, ফ্রিডম অব ইনফরমেশন, অর্থনীতিতে নারী ও পুরুষের সমতা, স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ব্যয়, প্রাথমিক শিক্ষায় সরকারি ব্যয়, প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা, রাজনৈতিক অধিকার, বেসামরিক লোকের স্বাধীনতা, মেয়েশিশু প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করার হার ও ফিসক্যাল পলিসি। ২০টি সূচকের অধিকাংশই লাল চিহ্ন হওয়ায় এবারও মিলছে না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ ফান্ডের মোটা অঙ্কের অনুদানÑযুগান্তর। এই হচ্ছে বৈশ্বিক সূচকসমূহে দেশের অবস্থান। এখন দেখা যাক অভ্যন্তরীণ পরিসংখ্যান কি? সাবেক তত্ত্বাধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. মীর্জা আজিজুল ইসলাম গত ১৬ ডিসেম্বর বলেন, দেশের গড় প্রবৃদ্ধি হচ্ছে : ১৯৮০-১৯৮৫ সালে ৩.৮%, ২০০০-২০১০ সালে ৫.৯%, ২০১১-২০১৫ সালে ৬.২% ও ২০১৬-২০১৮ সালে ৭.৪%। দেশে গত এক দশক ধরে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ জিডিপি’র ২২-২৩%। ডিএসই ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০২০ সালের জুন শেষে জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদান : বাংলাদেশে ৯.৪১%, ভারতে ৬২.৭৫%, শ্রীলংকায় ১৪.৯২%, থাইল্যান্ডে ৮৯.২৯%, হংকংয়ে ১৩১১.১৪% ও চীনে ৩৭.২৩%। সরকারি সংস্থার তথ্য মতে, ২০১৯ সাল পর্যন্ত দেশের ৫২% মানুষ নিরাপদ সুপেয় পানি সুবিধার বাইরে রয়েছে। বিবিএস’র ‘নগর আর্থ-সামাজিক অবস্থা নিরূপণ জরিপ ২০১৯ অনুযায়ী, দেশের রাজধানী ঢাকাসহ নগরাঞ্চলের ৭% মানুষকে খাবার না পেয়ে একবেলা উপোস থাকতে হয়। আর খাবার নিয়ে চিন্তায় থাকেন ২১% মানুষ। স্রেডার তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ-৬৫০.১৫ মেগাওয়াট, যা মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ২-৩%। অথচ সরকারের পরিকল্পনা মতে হওয়ার কথা ছিল ২,১৮৮ মেগাওয়াট। অপরদিকে, দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ১৯,৬৩০ মেগাওয়াট। কিন্তু গড়ে প্রতিদিন উৎপাদন হচ্ছে ৭-৮ হাজার মেগাওয়াট। আর চাহিদা ১২ হাজার মেগাওয়াট। চাহিদা না থাকায় বাকি ক্ষমতার কেন্দ্রগুলো বসিয়ে রাখা হচ্ছে। এতে হাজার হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। অথচ সারা দেশের গ্রাম ও মফস্বলে প্রতিদিন ব্যাপক লোডশেডিং হচ্ছে সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার দুর্গতির কারণে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে গড়ে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ঘণ্টায় ৪৬৪ কিলোওয়াট, আর ভারতে ২০১৮-১৯ সালে গড়ে জনপ্রতি বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়েছে ১,১৮১ কিলোওয়াট/ঘণ্টায় বলে খবরে প্রকাশ। অর্থাৎ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গড়ে জনপ্রতি বিদ্যুৎ ব্যবহারের পার্থক্য আকাশ-পাতাল। বিভিন্ন খবরে প্রকাশ, দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর প্রায় ১২.৩% বেকার। অনেক ব্যয়বহুল কয়েকটি মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে। এগুলো সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে দেশের উন্নতি ত্বরান্বিত হবে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে ২জি ও ৩জি চলছে। কিন্তু বহুদেশে ৪জি ও ৫জি চলছে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট শুধুমাত্র শহরভিত্তিক। এসব দেশের উন্নতির চরম অন্তরায়। জিডিপির তুলনায় কর আহরণে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। বসবাসের অনুপযোগিতায় রাজধানী ঢাকা বিশ্বে দ্বিতীয়। দেশের অন্য শহরগুলোও প্রায় অনুরূপ। মহান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা তৈরি করা সম্ভব হয়নি এখনও। ২০২০ সালের মধ্যে সব রাজনৈতিক দলের সব কমিটিতে ৩৩% নারী রাখা বাধ্যতামূলক করার বিধান করেছিল ইসি। কিন্তু কোন দলই সফল হয়নি। দেশের বেশিরভাগ আইন চলছে ব্রিটিশ শাসনামলের। দেশে আঞ্চলিক বৈষম্য প্রকট। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চল চরম বৈষম্যের শিকার হয়েছে।
দেশের শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি, খেলা, বিনোদন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, নির্বাচন ব্যবস্থা, সুশাসন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা, এফডিআই, ন্যায় বিচার প্রাপ্তি ইত্যাদির অবস্থান বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে তলানিতে। নকল, ভেজাল, মাদক, দুর্ঘটনা, যানজট, পণ্যমূল্য বৃদ্ধি, মানব পাচার, বাল্যবিবাহ, নারী বৈষম্য ইত্যাদিতে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম। কয়েক বছর যাবৎ ব্যাংকের অবস্থা নাজুক হয়েছে ব্যাপক খেলাপি ঋণের কারণে। এর মধ্যে অনেক কুঋণ রয়েছে, যা আদায় হওয়ার সম্ভাবনা নেই। দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। তাই আবাসনে গ্যাসের নতুন সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। কিন্তু দেশের বেশিরভাগ নদী, খাল-বিল, হাওর দখল, দূষণ ও ভারতের পানি আগ্রাসনে শুকিয়ে মজে গেছে। যা কিছু আছে, তাও নাব্যতা সংকটে ভুগছে। ফলে দেশটি মরুপ্রায় হতে চলেছে। এ অবস্থায় কিছু নদী ড্রেজিং করা শুরু হয়েছে। এটা ভালভাবে বাস্তবায়িত হলে সুফল পাওয়া যাবে। দেশের বেশিরভাগ ভারী, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বন্ধ হয়ে গেছে। যে সামান্য চালু আছে, তাতেও ব্যাপক লোকসান চলছে। তাই গত জুলাই মাসে সরকারি সব পাটকল বন্ধ করা হয়েছে। এখন চিনিকলগুলোও বন্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে। দেশের রফতানি বলতে শুধুমাত্র গার্মেন্ট, যা মোট রফতানির ৮৪%। তাও করোনায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিবেশ রক্ষার জন্য প্রতিটি দেশে যে পরিমাণে বনাঞ্চল থাকতে হয়, তার অর্ধেকেরও কম রয়েছে বাংলাদেশে। দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান অতি নিম্ন কিন্তু খুবই ব্যয়বহুল। পশ্চিমা ক্রেতা সংগঠনের দাবির প্রেক্ষিতে গার্মেন্টে পরিবেশ ও নিরাপত্তা জোরদার নিশ্চিত করার কারণে প্রায় অর্ধেক গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। একই অবস্থা হতে পারে ইউরোপের জিএসপি প্লাস পেতে কর্মস্থল শ্রমিকবান্ধব করার কারণে। তাই দেশটি আমদানি নির্ভর দেশে পরিণত হতে চলেছে। উপরন্তু দক্ষ লোকের অভাবে ৭-৮ লাখ বিদেশী দক্ষ লোক দিয়ে দেশের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান চালাতে হচ্ছে। এছাড়া, জলবায়ু প্রভাবের চরম ঝুঁঁকিতে রয়েছে দেশ। অন্যদিকে, প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা দেশের শান্তি ও উন্নতিতে ব্যাপক অন্তরায় সৃষ্টি করেছে। করোনায় দেশে প্রায় ৩২% মানুষ কাজ হারিয়েছে, আয় কমেছে ৮৪% মানুষের, ৮৮% ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ও দারিদ্র্য বেড়ে ৪০% হয়েছে। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে। অর্থাৎ করোনা মহামারি বাংলাদেশের মানুষের জীবন-জীবিকাসহ সামগ্রিক জীবনকেই বিপন্ন-বিপর্যস্ত-লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। অধিকাংশ মানুষ ক্রমশ হারিয়েছে তার টিকে থাকার সক্ষমতাÑভোয়া। এ ক্ষতি সহজে পূরণযোগ্য নয়। এই অবস্থায় শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ও নতুন ধরনের করোনা। এটাও খুব দ্রুত বিশ্বায়ন হয়েছে। এর পরিণতি কি তা ভবিষ্যৎই জানে। বর্তমান ও ভবিষ্যতের উন্নতির প্রধান সোপান হচ্ছেÑবিজ্ঞান, প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানী। এসব ক্ষেত্রে যারা যত উন্নতি করবে তারা তত টেকসই উন্নতি করবে।