উপকূলবাসী এখনও ভুলতে পারেনি তালতলীর সিডর ম্যানের কথা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৪৫ এএম, ২৭ মে,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:০৮ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২৪
উপকূলের নেভিগেশন লাইট জয়দেব দত্ত বরগুনার তালতলী উপজেলার বড়বগী ইউনিয়নের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ইউনিট প্রধান ও ওয়্যারলেস অপারেটর ছিলেন। দীর্ঘ ২৫ বছর উপকূলবাসীদের সেবার কাজ করেছেন। উপকূলবাসীদের কাছে তিনি সিডর ম্যান নামে পরিচিত।
২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডরের সময় তালতলীর নদী ও সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আগাম সতর্কতা সংকেত প্রচার করে হাজার হাজার মানুষের জীবন রক্ষা করেছিলেন জয়দেব দত্ত। এ খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হন তিনি। পরে জনপ্রিয় বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র পক্ষ থেকে তাকে পুরুস্কৃত করা হয়। এ সময় ইত্যাদির পক্ষ থেকে তাকে ‘সিডরম্যান’ উপাধি দেওয়া হয়েছিল।
ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডরের কবল থেকে বেঁচে যাওয়া হাজার হাজার মানুষের কাছে জয়দেব একটি প্রিয় নাম। স্থানীয়রা তাকে বলেন উপকূলের নেভিগেশন লাইট।
সিডর ম্যান জয়দেব দত্ত বেঁচে নেই কিন্তু তার কথা এখনো ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড় কথা শুনলেই মনে করেন উপকূলবাসীরা। গতবছর আম্পানের ক্ষতিগ্রস্থদের ঘরবাড়ি মেরামত করে এখনো ঠিক করতে পারেনি এর মধ্যেই এ বছর আবার ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এর সম্ভাব্য বন্যার কারণে আতঙ্ক বিরাজ করছে উপকূলবাসীদের মাঝে। জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ে গেছে কয়েকটি গ্রাম। দমকা হাওয়া ও থেমে থেমে বৃষ্টি যেনো সিডরের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
উপকূলবাসীরা বলেন, জয়দেব দত্ত যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে বন্যার পূর্বাভাস পেলে তিনি সকলকে সতর্ক করতেন ও সঠিক খবরটি দিতেন জয়দেব দত্ত।
চর এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ২০০৭ সালে জয়দেব বাবুর কারনে হাজার হাজার মানুষ বেঁচে গিয়েছিলো। সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এর তান্ডব উপকূলবসী কিছুটা টের পাচ্ছে দমকা বাতাস ও থেমে থেমে বৃষ্টি যেনে সিডরের কথা মনে করিয়ে দেয়। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস কথা শুনলেই জয়দেব দত্তের কথা মনে পড়ে উপকূলবাসীদের।
সিডর ম্যান জয়দেব দত্ত নেই কিন্তু চায়ের দোকানে থেকে শুরু করে সর্বত্রই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু জয়দেব দত্ত। ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস যেকোন কিছুর আভাস পেলেই সাধারণ মানুষ জয়দেব দত্তের কথা এখনো মনে করেন। সাহসী নিবেদিতপ্রাণ এখন আর আমাদের মাঝে নেই কিন্তু তাঁর স্মৃতি রয়ে গেছে।
জয়দেব দত্ত ইত্যাদিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ২০০৭ সালের ১৪ ই নভেম্বর রাত ৮ টায় তিনি জানতে পারলেন মহাবিপদ সংকেত ১০ নম্বর সিঙ্গেল চলছে। হাফ প্যান্ট ও লাল রেইনকোট পরে ভাড়া করা মোটরসাইকেল নিয়ে নেমে পড়ি উপকূলবাসীদের সতর্ক করতে। তিনি শুধু একটি কথাই বলেন ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ২০ ফুট পানি আপনারা সবাই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। পরের দিন ১৫ ই নভেম্বর দুপুরে ঝড় আসে নাই মানুষ তাকে পাগল বলল কিন্তু তিনি উপকূলবাসীদের রক্ষার কথা চিন্তা করে সকলকে আবারো সতর্ক করলেন বললেন রাতেই বন্যা হতে পারে সকলে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। সেদিন রাতেই ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় হয় হাজার হাজার মানুষ মারা যায়।
জয়দেব দত্তের কারণে হাজার হাজার মানুষ বেঁচে গিয়েছিলেন। জয়দেব দত্তের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ুর জন্য প্রতিটি মসজিদ ও মন্দিরে দোয়া ও প্রার্থনা করেন উপকূলবাসীরা।
উল্লেখ্য, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে ২৬ মে সন্ধ্যার দিকে ভারত-বাংলাদেশের সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকা অতিক্রমের বার্তা দিচ্ছে আবহাওয়া অধিদফতর। ঘূর্ণিঝড়ের পূর্ব প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে উপকূলীয় জনপদে কর্মরত পাউবো, বিদ্যুৎ ও সিপিপি’র মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবায় যুক্ত সকলকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় থাকতে বলা হয়েছে।