রানা প্লাজা ধসের ৮ বছর, এখনো শেষ হয়নি বিচারকাজ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৬:৪১ পিএম, ২৪ এপ্রিল,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:০৯ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজায় ভয়াবহ ধসের ৮ বছর পূর্ণ হল আজ। সেদিনের ভবন ধসের ঘটনায় ১ হাজার ১৩৫ জন শ্রমিক মারা যান। ওই ঘটনায় রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়। কিন্তু সেই মামলার বিচারকাজ এখনো শেষ হয়নি।
সেই মামলার সাক্ষী ইউসুফ আলী। আট বছরেও বিচারকাজ শেষ না হওয়ায় হতাশ হতদরিদ্র এই কৃষক। গত সোমবার তিনি বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। কষ্টের সংসার। তাই আমার ছোট ছেলে ঢাকায় গিয়ে গার্মেন্টস কারখানায় কাজ শুরু করে। কিন্তু ছেলে আমার লাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছে।’ তিন ছেলে ও এক মেয়ের বাবা ইউসুফ আলী আরও বলেন, ‘একটি টাকাও ক্ষতিপূরণ পাইনি। আশা করেছিলাম, মৃত্যুর আগে অন্তত ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসি হবে। কিন্তু এখনো বিচারকাজই তো শেষ হয়নি।’
রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় মামলা হয়েছে তিনটি। এর মধ্যে একটি হত্যা মামলা। একটি হয়েছে ইমরাত নির্মাণ আইনে। ভবনের নকশা-সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে সোহেল রানার বিরুদ্ধে অপর মামলাটি করা হয়। তবে একটি মামলারও বিচার শেষ হয়নি।
আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হত্যা মামলায় ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালত। আসামিদের মধ্যে কেবল সোহেল রানা কারাগারে। ৩২ জন জামিনে আছেন, পলাতক ৬ জন। ২ আসামি মারা গেছেন।
সরকারি কৌঁসুলিরা জানান, অভিযোগ গঠনের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে আট আসামি উচ্চ আদালতে আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে আদালত অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দেন। পরে ছয়জন আসামির পক্ষে দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। তবে দুজন আসামির পক্ষে স্থগিতাদেশ বহাল থাকায় মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়নি বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, সাভার পৌরসভার তৎকালীন মেয়র রেফায়েত উল্লাহ এবং তৎকালীন কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী খানের পক্ষে স্থগিতাদেশ এখনো বহাল আছে। যে কারণে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, করোনা পরিস্থিতির পর আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হলে মামলাটি যাতে সচল হয়, সে ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে রানা প্লাজা নির্মাণের অভিযোগে মামলাটি করেছিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এই মামলায় রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ওই বছরের ১৪ জুন ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত অভিযোগ গঠন করেন। তবে মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী সরকারি কৌঁসুলি আনোয়ারুল কবীর বলেন, এ মামলায়ও সাভার পৌরসভার তৎকালীন মেয়র রেফায়েত উল্লাহর পক্ষে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম শুরু হয়নি।
আর ভবনের নকশা–সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে করা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম চলছে ঢাকার বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে। এই মামলায় আসামি সোহেল রানার আইনজীবী ফারুক আহমেদ এ তথ্য জানিয়েছেন।
রানা প্লাজা ধসের দিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান মাদারীপুরের হাসি বেগম। তবে বুকে ও পায়ে গুরুতর আঘাত পান তিনি। চিকিৎসা নিলেও তিনি আর কাজে ফিরতে পারেননি। সেদিন মারা যান তাঁর সহকর্মী রেহানা। সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় হাসি বেগমকে।
কিন্তু যাঁদের কারণে এত শ্রমিক মারা গেলেন, এতগুলো মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করলেন, এখনো তাঁদের বিচার শেষ না হওয়ার বিষয়টি কিছুতেই মানতে পারেন না হাসি বেগম। তিনি বলেন, ‘আট বছর হয়ে গেল, আমরা বিচার পেলাম না। আমি পাইনি ক্ষতিপূরণের টাকাও।’
বিচারকাজ এখনো শেষ না হওয়ার জন্য রাষ্ট্রপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করেছেন শ্রমিকনেত্রী, বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার।
তিনি বলেন, ‘কবে বিচার শেষ হবে? বিচার পাওয়ার জন্য শ্রমিকদের আর কত বছর অপেক্ষা করতে হবে? আমরা বিচারটা দেখতে চাই।’