নরেন্দ্র মোদির সফর : তিস্তা, সীমান্ত হত্যা, নাগরিকত্ব আইন এসব নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে ভারত?
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৩:০৩ এএম, ১৪ মার্চ,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:৩৮ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এমন এক সময়ে ঢাকায় আসছেন, যখন ভারতের সাথে সম্পর্কে প্রত্যাশার ক্ষেত্রে হতাশা বেড়েছে বাংলাদেশে। ভারতে নাগরিকত্ব আইন এবং মুসলমিদের নিয়ে নরেন্দ্র মোদির সরকার বা বিজেপির রাজনীতি অনেক সময় বাংলাদেশকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। ট্রানজিট সুবিধাসহ ভারতের নানা চাহিদা পূরণ করার পরও বাংলাদেশ কী পেয়েছে- সেই প্রশ্ন উঠছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন ২৬ মার্চ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি এবং মুজিব জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তার এই সফর। এই সফরকে সামনে রেখে গত ৯ মার্চ সীমান্তবর্তী ফেনী নদীর ওপর একটি সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছে। সেতুটি সরাসরি যুক্ত করেছে বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোকে। এখন ভারতের এই রাজ্যগুলো সেতু দিয়ে সহজে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে পণ্য আনা নেয়া করতে পারবে। পাঁচ বছর আগেই ভারতের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার বা ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা কার্যকর হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির ফারাক এখন নানা আলোচনার জন্ম দিচ্ছে।
২০১৫ সালে ঢাকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিকে স্বাগত জানানোর আয়োজন ছিল ব্যাপক।
ভারত সবই পেয়েছে : সাবেক একজন পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ভারত তাদের চাহিদার সবই পেয়েছে। কিন্তু তার তুলনায় বাংলাদেশের প্রাপ্তি না থাকায় এখানে হতাশা বাড়ছে বলে তিনি মনে করেন। ভারতের কিছু উদ্বেগ ছিল বাংলাদেশ নিয়ে। ধরুন, উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী কিছু গ্রæপ যে কার্যকলাপ চালাচ্ছিল। তারপর তাদের ট্রানজিটের ব্যাপার ছিল। এই সমস্যাগুলোতে কিন্তু বাংলাদেশ পরিপূর্ণভাবে সহযোগিতা করেছে তাদের উদ্বেগ দূর করার জন্য। এসব ব্যাপারে ভারতের কিন্তু আর চাওয়ার কিছু নাই, মন্তব্য করেছেন তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ফেনীর নদীর ওপর এই ব্রিজ উদ্বোধন হল। তাতে করে কানেকটিভিটির আরেকটা সুযোগ সৃষ্টি হল। আসলে ত্রিপুরার মানুষের জন্য এটা বিরাট সুবিধা হল ভারতের অন্য অংশ থেকে বা বিদেশ থেকে পণ্য আনা নেয়ার ক্ষেত্রে।
মি. হোসেন আরও বলেছেন, এগুলো সবই হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের যে কয়েকটা চাওয়া ছিল, দৃশ্যত তাতে কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। এই সাবেক পররাষ্ট্র সচিবের বক্তব্য হচ্ছে, তিস্তা নদীর পানি নিয়ে কিন্তু আমরা মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম যে, তা হবে। কারণ বেশ কয়েক বছর যাবত একাধিক প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছিলেন। এবং সই হওয়ার কাছাকাছিও গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। এটা এখন অনেকটাই কোল্ডস্টোরেজে চলে গেছে। যেটা একটা হতাশার কারণ। আরেকটা খুব ছোট্ট অ্যাকশন ভারত নিতে পারে, সেটা হল সীমান্তে হত্যা বন্ধ করা। কিন্তু ভারতের নেতৃত্ব যে কারণেই হোক, এটার খুব প্রয়োজন মনে করছেন না, মন্তব্য করেন মি: হোসেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এখন যে ঢাকা সফরে আসছেন, এবারও তিস্তা নদীর পানি বন্টন প্রশ্নে সমাধানের কোনো ইঙ্গিত নেই। এই সফরকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন আগে ঢাকায় এসেছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তখন সাংবাদিকদের প্রশ্নে তার বক্তব্য ছিল, তিস্তা নদীর পানি বন্টন চুক্তি নিয়ে ভারত সরকার আগের অবস্থানেই আছে। আর সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধের প্রশ্নে তিনি সীমান্তে অপরাধ কমানোর বিষয়ে জোর দিয়ে বলেছিলেন, অপরাধ নয়, মৃত্যুও নয়। ফলে বাংলাদেশের মূল দুটি ইস্যুতে সমাধানের ব্যাপারে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। অন্যদিকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশ যে সংকটে পড়েছে, এই সংকট সামলানোর ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ভারতকে সেভাবে পায়নি।
সম্পর্কটা কেমন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন মনে করেন, বাংলাদেশের উদ্বেগগুলো ভারতের কাছে অগ্রাধিকার পাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক সম্পর্কে আমরা দেখি প্রতিটা রাষ্ট্রেরই ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট (জাতীয় স্বার্থ) কিন্তু প্রাধান্য পায়। কিন্তু তার যে প্রতিবেশীর সাথে এমন ধরনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, যেখানে বাংলাদেশ তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রণে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছে, সেখানে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত অন্তত নিরপেক্ষ ভূমিকা নেবে- সেটা আমরা আশা করেছিলাম। সেটাও কিন্তু করেনি। অধ্যাপক ইয়াসমিন আরও বলেছেন, সে কারণে এই ক্ষোভটাও কিন্তু বাংলাদেশে রয়ে গেছে যে, এখানে ভারতের সাথে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক, সেটা কিন্তু স্ট্রাটেজিক (কৌশলগত) নয়, যেটাকে আমরা বলি ট্যাকটিক্যাল। এর মানে হচ্ছে, যখন যেটা প্রয়োজন, সেই প্রয়োজনের ভিত্তিতে সম্পর্কটা নির্ধারিত হচ্ছে। তিনি বলছেন, ভারত বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের বিষয়টা দীর্ঘ মেয়াদে চিন্তা করছে না বলে দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের উদ্বেগের জায়গাাগুলোকেও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে না। এর আগেও আমি যেটা বলতাম যে, ভারতের নেইবারহুড পলিসিটা (প্রতিবেশীদেশের সাথে সম্পর্কের নীতি) ঠিকই আছে। কিন্তু তাদের এই নীতিতে বাংলাদেশের কনসার্নগুলো (উদ্বেগগুলো) কিন্তু প্রয়োরাটাইজ (অগ্রাধিকার) একদমই করা হচ্ছে না। যেটা আমরা বার বার দেখতে পাচ্ছি, বলেন অধ্যাপক ইয়াসমিন।
২০১৭ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকে ঘিরে সবচেয়ে বেশি আলোচনা ছিল তিস্তার পানি ভাগাভাগি প্রসঙ্গে। তবে দু দেশের মধ্যে ২২টি চুক্তি সই হলেও তিস্তা নিয়ে চুক্তি হয়নি।
তিস্তা চুক্তিতে জট : তিস্তা নদীর পানি বন্টন চুক্তি সই না করার ক্ষেত্রে কয়েকবছর ধরেই ভারতের পক্ষ থেকে তাদের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরোধিতার বিষয়কে কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছে। তবে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে দেশটির রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকার কেউই এর দায়িত্ব নিতে চায় না। তিস্তা ইস্যুসহ বাংলাদেশের চাহিদাগুলোর ক্ষেত্রে ভারত সংকীর্ণ স্বার্থ দেখছে বলে তিনি মনে করেন। প্রত্যেক দেশই তাদের জাতীয় স্বার্থ দেখবে। জাতীয় স্বার্থ দুইভাবে দেখা যায়, একটা হল সংকীর্ণভাবে এবং আরেকটা হল আপনি অনেক কিছু দিয়েও নিজের স্বার্থ উদ্ধার করতে পারেন। আমার মনে হচ্ছে, ভারত তাদের সংকীর্ণ অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
মি: হোসেন আরও বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকারকেইতো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরাতো পশ্চিমবঙ্গের সাথে চুক্তি সই করবো না। আমি মনে করি না যে, মমতা ব্যানার্জি প্রকৃত অর্থে খুব অসন্তুষ্ট হতেন, যদি কেন্দ্রীয় সরকার চুক্তি করে ফেলতো। তিনি (মমতা ব্যানার্জি) তার ভোটের কারণে দেখাতে চান না যে, উনিই কাজটা করেছেন। একই কারণে বিজেপিও চায় না এর দায়িত্ব নিতে। মানে তারা প্রত্যেকে তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সংকীর্ণ স্বার্থ দেখছে, বলেন মি. তৌহিদ হোসেন।
সা¤প্রদায়িকতা ছড়ানো নিয়েও উদ্বেগ বাংলাদেশে
আওয়ামী লীগের ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পরের বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের মধ্য দিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়। তখন ভারতে ছিল কংগ্রেস সরকার। সেই প্রেক্ষাপটে ২০১১ সালে ঢাকা সফরে এসেছিলেন দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড: মনমোহন সিং। পরে ভারতে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি সরকার গঠনের পরও আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ার কথা বলা হয় দুপক্ষ থেকেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১২ বছরে বাংলাদেশের প্রত্যাশার জায়গায় ফারাক রয়ে গেছে। অন্যদিকে ভারতে নাগরিকত্ব আইন এবং মুসলিমদের নিয়ে মোদি সরকার বা বিজেপির রাজনীতিও বাংলাদেশে বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ তৈরি করছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাবলিক ইউনিভার্সিটির সিস্টেমের শিক্ষক সাঈদ ইফতেখার আহমেদ মনে করেন, ভারতের বিজেপি সরকারের আচরণের কারণে বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সুযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে বা তার ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। আমরা যেটা দেখছি, ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এবং এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো ব্যক্তিরাও প্রকাশ্যে বক্তব্য রাখছেন যে, অবৈধ অভিবাসী যারা আছে, তাদের ভারত থেকে বের করে দেয়া হবে। এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে নানান নেতিবাচক ও খুব অবজেকশনমূলক বক্তব্য তারা দিচ্ছেন।
মি: আহমেদ আরও বলেছেন, এ ধরনের বক্তব্য আগে তারা শোনেননি। অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের পূর্ববর্তী সময়ে তখন সা¤প্রদায়িক যে রাজনীতিটা ছিল, সেই রাজনীতিটাকে আবার তারা সামনে এনেছেন এবং সেই সা¤প্রদায়িক রেটরিকগুলো আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যবহার করছে। যেটা বাংলাদেশ এবং ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ একটি নতুন ডাইমেনশন।
সাঈদ ইফতেখার আহমেদ বলছেন : এর প্রতিক্রিয়ায় আমরা দেখছি বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির একটা ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। যার ফলে ভারত বিরোধী সেন্টিমেন্টটা আরও ব্যাপকহারে বাড়ছে। নরেন্দ্র মোদির এবারের ঢাকা সফরেও বাংলাদেশের মূল সমস্যাগুলো দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় কতটা অগ্রাধিকার পাবে তা নিয়েও বিশ্লেষকদের অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। খুব বেশি মাথা ব্যাথার কারণ নেই। তবে সীমান্তের তিনপাশে লাগোয়া এবং বড় প্রতিবেশী দেশ হিসাবে ভারতের সাথে এখনকার সম্পর্ককে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে খুবই ইতিবাচক হিসাবে তুলে ধরা হয়। দশকের পর দশক ধরে ঝুলে থাকা ছিট মহল বিনিময় সমস্যার সমাধান হওয়া এবং ৭৪-এর মুজিব ইন্দিরা সীমান্ত চুক্তি কার্যকর করার বিষয়কে উদাহরণ হিসাবে দেখানো হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।
এদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি নিয়ে হতাশার প্রশ্নকে নাকচ করে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, দেখেন, উনি (নরেন্দ্র মোদি) বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ এবং আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসছেন। এই কোভিড-১৯-এর পরে ভারতের বাইরে এটাই ওনার প্রথম সফর। সেজন্য উই আর ভেরি হ্যাপি।
মন্ত্রী মি: মোমেন বলেছেন, আর আপনি যে হতাশার কথা বলছেন, সেগুলো আমাদের ডিকশনারিতে নাই। কারণ ভারতের সাথে যত ধরনের বড় বড় সমস্যা, সেগুলো আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করেছি। ছোটখাট কিছু সমস্যা এদিক ওদিক থাকতে পারে-একটি যেমন আছে যে, মাঝে মধ্যে সীমান্তে লোক মারা যায়। কিন্তু উভয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, একটা লোকেরও যেন মৃত্যু না হয়। বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু ঘাটতি আছে। কিন্তু নীতিগতভাব উই হ্যাভ টেকেন দ্য ভাও। সুতরাং আমাদের হতাশা নাই। মাঠে সিদ্ধান্ত ইমপ্লিমেনটেশনের দুর্বলতা বা ঘাটতি দূর করার জন্য আমরা যৌথভাবে মনিটর করার ব্যবস্থা নিচ্ছি, বলেন মি: মোমেন।
তিস্তা নদীর পানি বন্টন ইস্যু নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য হচ্ছে, তিস্তা চুক্তি সই হয়ে আছে। বাস্তবায়ন হয়নি, কারণ তাদের কিছু সমস্যা আছে। আর চুক্তি হলে আমরা যে পানি পেতাম, আমরা এখনও তা পাচ্ছি। সুতরাং এনিয়ে আপনাদের মাথা ব্যথা খুব বেশি হওয়ার কোনো কারণ নাই। ভারতের বিশ্লেষকদেরও অনেকে দুই দেশের সম্পর্কের এখনকার পরিস্থিতিকে ইতিবাচক দিক থেকেই ব্যাখ্যা করছেন। দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে কাজ করেন ভারতের একটি বেসরকারি সংস্থা বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের শ্রীরাধা দত্ত।
তিনি বলেছেন, ভারত সরকার বাংলাদেশের চাওয়াকে অগ্রাধিকার দেয় বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, দুই দেশের সরকারের মধ্যে বা রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্কের ভিত্তিতে বহুমাত্রিক অনেক কাজ হচ্ছে। কিন্তু আমি এটাও মানি, বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হচ্ছে পানি। আর পানি চুক্তি হচ্ছে না বলে একটা হতাশা বলুন বা চিন্তা বলুন- সেটা আছে।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদিতো বারবারই বলেছেন যে, এটা সংশ্লিষ্ট রাজ্যের কারণে সমস্যা হওয়ায় আটকে আছে। কিন্তু ভারতের কাছে বাংলাদেশ এখন পার্টনারশিপের চেয়ে অনেকে বেশি কিছু। সেজন্য বাংলাদেশ কী চাইছে বা কী দরকার- তা নিয়ে আমাদের চিন্তাতো করতেই হবে। সেটা নিয়ে কোনো দোমনা নেই, মন্তব্য করেছেন শ্রীরাধা দত্ত।
কানেকটিভিটি ও ব্যবসা-বাণিজ্য : এখন বাংলাদেশ- ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে কানেকটিভিটির ওপর জোর দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সেখানেও ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের লাভ-ক্ষতির বিষয়টি আলোচনায় আসছে। ঢাকায় একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এখনও অনেক চাওয়া এবং পাওয়ার বিষয় রয়েছে। বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাচ্ছে। তখন শুল্ক বা কোটামুক্ত বাণিজ্য সুবিধা পাওয়ার বিষয়টা চলে যাবে। সেখানে বাংলাদেশের চাওয়ার বিষয়টা হচ্ছে, বাংলাদেশ উন্নয়নমীল দেশ হওয়ার পরও ভারত যেন সেই সুবিধাগুলো আরও কয়েকবছর অব্যাহত রাখে। বন্ধু দেশ হিসাবে ভারতের কাছে এখন বাংলাদেশের এটা বড় চাওয়া হতে পারে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের বক্তব্য হচ্ছে, দুই দেশ যোগাযোগের বিষয়কে প্রাধান্য দেয়ায় তা বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য অনেক লাভজনক হবে। এই ট্রেড এবং যোগাযোগের ফলে আমাদের কত যে উন্নতি হচ্ছে। আমরা জিনিস বিক্রি যেমন করছি, তেমনি আমরা এখন তাদের কাছে বিলিয়ন ডলার এক্সপোর্ট করি। আগে দুইশ মিলিয়ন হতো, এখন তার চেয়ে পাঁচগুণ বেড়েছে।
মি: মোমেন বলেছেন, আমরা বিশ্বাস করি, কানেকটিভিটির কারণে আমাদের সারা দেশের উন্নতি হবে। যারা হতাশা দেখে তারা নানা কথা বলে। কিন্তু থিংকস আর মুভিং।
তিনি আরও বলেছেন, দুই দেশের এখনকার গভীর সম্পর্কের পটভূমিতে বাংলাদেশের সমস্যাগুলোর দ্রæত সমাধান সম্ভব হবে বলেই তারা বিশ্বাস করেন। তবে বিশ্লেষকরা বলেছেন, মানুষের মাঝে হতাশা বৃদ্ধির কারণগুলো বা বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের এগুনো উচিত।