তারেক রহমান : তৃণমূল রাজনীতির কারিগর, নির্মাতা ও ধারক বাহক
প্রফেসর এম ফরিদ উদ্দিন, সাবেক সহ-সভাপতি, যুক্তরাজ্য বিএনপি
প্রকাশ: ১০:৩৩ পিএম, ৭ অক্টোবর,সোমবার,২০২৪ | আপডেট: ০২:০৭ এএম, ২ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
বিশিষ্ট সমাজ ও রাষ্ট্র চিন্তাবিদ John Donald Bruce Miller-এর ভাষ্যমতে "Politics is a means of getting things done, often with a strong sense of moral urgency. অর্থাৎ রাজনীতি হলো কিছু অর্থপূর্ণ কর্ম সম্পন্ন করার মাধ্যম এবং তা ও দৃঢ় নৈতিকতার প্রভাবে সম্পন্ন করা।” বাংলাদেশে বর্তমান রাজনীতির প্রাণপুরুষ, সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকার, নিরলসকর্মী বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান। Thinker are leaders and true leaders are thinkers- দেশনায়ক তারেক রহমান যেন এই কথাটির বাস্তব প্রতিচ্ছবি। ১৯৮৮ সালে বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলা বিএনপি’র সম্মানিত সদস্য হওয়ার মধ্য দিয়ে তাঁর আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতির হাতে খড়ি।
একটি সফল রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও রাজনীতিতে তিনি Automatic Choice ছিলেন না, বরং সাংগঠনিক সকল প্রক্রিয়া ও নিয়ম-নীতির মধ্য দিয়ে তৃণমূল হতে রাজনীতি শুরু করে স্বীয় মহিমায় সমুজ্জ্বল হয়ে আজ বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তারেক রহমানের মেধা, যোগ্যতা, দক্ষতা, সুযোগ্য নেতৃত্ব, দূরদর্শী রাজনৈতিক দর্শন ও চিন্তা-ভাবনা বিএনপিকে শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করেছে।
২০১৩ সালের ২৪ জুলাই যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তারেক রহমান প্রদত্ত বক্তব্যের অংশবিশেষ এখানে উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না। তিনি বলেন “আমরা রাজনীতিবিদরা যা নিয়ে আলোচনা করি বা কথা বলি না কেন, তা গিয়ে এক জায়গাতেই দাঁড়ায়, আর সেটি হলো দেশ নিয়ে, দেশের মানুষ নিয়ে আমাদের রাজনীতি। রাজনীতিকদের কাজ যেহেতু দেশ ও দেশের মানুষের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সঙ্গে জড়িত, সেই জন্য আমরা এইসব বিষয় নিয়ে সব সময় চিন্তা-ভাবনা করি। স্বাভাবিকভাবেই একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমিও সবার মতোই আগে থেকেই দেশের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে সব সময় ভাবি। আমি কোনো রাজনৈতিক বিষয়ে কথা না বলে কেবল দেশ ও মানুষকে নিয়ে আমার কিছু চিন্তা-ভাবনা ও পরিকল্পনা তুলে ধরব। কারণ আমাদের দেশটি আয়তনে ছোট হলেও ১৬ কোটি (বর্তমানে প্রায় ১৮ কোটিরও উপরে) মানুষের দেশ। জনসংখ্যার বিষয়টি অনেক বড় একটি চিন্তার কারণ। কাজেই এ দেশটি নিয়ে যখন ভাবতে হয়, তখন এতো বেশি জনসংখ্যার দেশের পরিকল্পনাও হতে হয় অনেক বড় ও ভিশনারী। তাই এই বিষয়ে সংক্ষেপে আমার চিন্তা-ভাবনা তুলে ধরতে চাই। আমার বিশ্বাস, আমার এই চিন্তাধারার সাথে আপনারাও একমত হবেন।
আমাদের রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য কী শুধু ক্ষমতায় যাওয়া? না, মূল উদ্দেশ্য শুধু ক্ষমতায়ন নয়। সেটি আমাদের রাজনীতির একটি অন্যতম লক্ষ্য হতে পারে। রাষ্ট্রীয় উন্নয়নও কিন্তু এর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। দেশে-বিদেশে যারা আমরা বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে ভাবি, আমাদের ধর্ম, বিশ্বাস, মত কিংবা আদর্শ ভিন্ন হতেই পারে। কিন্তু দেশতো আমাদের সবার। আমরা সবাই এ দেশকে ভালোবাসি। আর তাই আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গড়ে তুলতে হবে একটি সুখী-সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ। আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে বহুদূরে। এই অগ্রযাত্রার গতি হতে হবে দ্রুত। লক্ষ্য হতে হবে সুনির্দিষ্ট। অতীতমুখী নয়, আমাদের চেতনা ও দায়বদ্ধতা হতে হবে ভবিষ্যৎমুখী। গতানুগতিক রাষ্ট্র পরিচালনার ধারায় অভ্যস্ত থাকলে কিন্তু আমাদের ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বল হবে না। আমাদের উৎসাহ দিতে হবে আধুনিকতাকে, বরণ করে নিতে হবে অভিনবত্ব¡কে। সামনের দিকে দৃষ্টিপাত করে আমাদের আলিঙ্গন করতে হবে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনকে, যার আবর্তন রাষ্ট্রের উন্নয়ন পরিকল্পনায় এবং বিবর্তন জনগণের সমস্যার সমাধান।” তারেক রহমান প্রদত্ত ঐ ভাষণে তখনকার সময়ের প্রেক্ষিতে দেশের উন্নয়নের বেশকিছু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার কথা তুলে ধরা হয়েছে।
অতি সম্প্রতি ২০২৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দেশনায়ক তারেক রহমান প্রদত্ত এক ভাষণে আগামী নির্বাচনে বিএনপি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠনের সুযোগ পেলে Swapno project family card প্রকল্প চালুর ঘোষণা দেন। রাষ্ট্রকে Swapno project family card বা জনকল্যাণমুখী করার পরিকল্পনা থেকেই তিনি এই ঘোষণা দেন। তার এই ঘোষণা অত্যন্ত সাহসী ও সময়োপযোগী।
রাজনীতির খেলার ময়দানে নতুন খেলোয়াড় হিসেবে আবির্ভুত হয়ে অনেকেই রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলে নাকে-মুখে ফেনা তুলছেন। অথচ তারেক রহমান দেশের উন্নয়ন ও রাষ্ট্র সংস্কারের পরিকল্পনা প্রায় দশক দশক পূর্ব হতেই করে আসছেন। বস্তুত, তারেক রহমান শুধু একটি নামই নয়, জাতীয়তাবাদী চিন্তা- চেতনায় বিশ্বাসী মানুষের আস্থা, বিশ্বাস ও নেতৃত্বের প্রতীক।
একজন Forward looking politician হিসাবে তারেক রহমান বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে গভীর সেতুবন্ধন নির্মাণ করতে তৃণমূল সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন তাঁর রাজনৈতিক জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে যা দেশে-বিদেশে ব্যাপক সাড়া জাগায় ও প্রশংসিত হয় এবং তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি করে। তারেক রহমান ওই সমস্ত Consultation program-সমূহ অর্থবহভাবে সম্পন্ন করতে দেশব্যাপী গ্রাম-গ্রামান্তরে, শহর-শহরান্তরে ক্ষিপ্রগতিতে বিচরণ করেন। তৃণমূলের নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জের সাধারণ মানুষের সাথে অভ‚তপূর্বভাবে মিশে তারেক রহমান শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিপ্লব সূচনা করেননি, বরং দলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তৃণমূলকে সম্পৃক্ত করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি এমন বৈপ্লবিক কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান এবং জাতীয়তাবাদী রাজনীতির Vanguard হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৯১ সাল ও ২০০১ সালে বিএনপি’র চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন জয় লাভ করে সরকার গঠন করতে সমর্থ হয় এবং দেশ পরিচালনার সুযোগ লাভ করে। বিএনপি সরকার গঠন করলেও তারেক রহমান সরাসরি সরকারের বা রাষ্ট্রের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হননি কেবল এই কারণে যে, দলকে পর্যাপ্ত পরিমাণে সময় প্রদান করা এবং দেশব্যাপী বিএনপিকে অধিকতর সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করা। রাষ্ট্রের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন না হয়েও তিনি বর্তমান বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিক ও দেশের কান্ডারী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। সাম্প্রতিককালে তারেক রহমানের নির্দেশনায় বিএনপি’র তিন গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল-এর শীর্ষস্থানীয় সমন্বিত নেতৃত্বের মাধ্যমে বিভাগভিত্তিক প্রতিনিধিদল গঠন করা হয়। আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকা, সংগঠনকে শক্তিশালী করা, সাংগঠনিক কাঠামো যাচাই-বাছাই করা, দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় তার বার্তা তৃণমূলে পৌঁছে দেয়ার নিমিত্তে বিভাগভিত্তিক প্রতিনিধিদল গঠন করা হয়। পাশাপাশি তৃণমূল নেতাদের মতামত নেয়া, বিএনপি’র কাছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা জানতে ওই তিন সংগঠনের সমন্বয়ে সারা দেশে জেলাভিত্তিক সাম্য ও মানবিক সমাজ বিনির্মাণে দিক-নির্দেশনামূলক যৌথ কর্মিসভার আয়োজন তাঁর তৃণমূলভিত্তিক রাজনীতির সুদূরপ্রসারী চিন্তার ফসল। ওই সমস্ত যৌথ কর্মিসভার অন্যতম স্লোগান হলো : আমরা যদি থাকি সৎ দেশ সংস্কার সম্ভব এবং ভয় নয়, উদারতা ও ভালোবাসা দিয়ে মানুষের মন জয় করুন। দেশনায়ক তারেক রহমানের ওই বার্তাসমূহ তৃণমূলকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে নিয়ামক ভ‚মিকা পালন করবে।
তারেক রহমানের রাজনৈতিক দর্শনের অন্যতম প্রধান দিক হলো Grassroots level বা তৃণমূলভিত্তিক রাজনীতি। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের Central point-এ রেখেই তিনি তাঁর রাজনৈতিক কর্মসূচি ও কলাকৌশল নির্ধারণ করে থাকেন। কেননা তিনি বিশ্বাস করেন, তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাই দলের প্রাণশক্তি ও প্রাণ ভোমরা। আর এ কারণেই তিনি সম্প্রতি এক বক্তব্যে বলেছেন, মিছিলের সবচেয়ে পিছনে থাকা কর্মীদেরকেও রাজনৈতিক পরিচয় প্রদান করা হবে। কাউকে Politically Home Less করে রাখা হবে না। আর এ জন্যই তিনি বিএনপি’র নেতা-কর্মী তথা দেশবাসীর কাছে একজন Politically Home Less হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। An extraordinary leader like Tarique Rahman win people's minds, hearts and souls. দেশনায়ক তারেক রহমানের রাজনীতির ঝিলিক, কিরণ ও সুবাস শ্রাবণের ধারার মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ুক সবখানে, সব জায়গায় ও সব মানুষের উপর।