কক্সবাজারে সামাজিক দূরত্ব মানায় অনীহা : চোখে পড়ে না মাস্কের ব্যবহার
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:৩১ এএম, ৭ ফেব্রুয়ারী,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:২৬ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার নির্দেশনা থাকলেও তা চোখে পড়ে না কক্সবাজার শহরে। জেলা প্রশাসন কার্যালয়, থানা, আদালতপাড়া এবং পাড়া-মহল্লার কোথাও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। এমনকি শহরের বিভিন্ন সড়কে চলাচলরত বেশিরভাগ যাত্রীই ব্যবহার করেন না মাস্ক।
শনিবার সন্ধ্যায় শহরের ভোলাবাবুর পেট্রোলপাম্প এলাকার প্রধান সড়কে এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে কয়েকশ যাত্রীকে পর্যবেক্ষণে মাত্র কয়েকজনকে মাস্ক পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়। বিশেষ করে সমাজের নিম্নবিত্ত ও দিনমজুরদের মাঝে মাস্ক ব্যবহার না করার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। আবার কারও কাছে মাস্ক থাকলেও তা পকেটে বা হাতে গিয়ে ঘুরতে দেখা গেছে। এসময় কথা হয় রিকশাচালক রুহুল আমিনের সাথে। করোনাভাইরাস সম্পর্কে বেশ ভালোই অবগত রুহুল। মাস্ক পরেন কি না, জানতে চাইলে রিকশার হাতলের সাথে বাঁধা মাস্ক দেখিয়ে তিনি বলেন, মাস্ক ব্যবহারে দম বন্ধ হয়ে আসে। তাছাড়া গরিবের করোনা হয় না বলেও ধারণা ঐ রিকশাচালকের। শহরের ঘুনগাছতলা মোড়ে এক মাছ বিক্রেতাকে দেখা যায় মাস্ক পরেছেন ঠিকই তবে নাকে বা মুখে নয়, থুতনির নিচে। এভাবে মাস্ক পরে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ওই মাছ বিক্রেতা জানান, করোনা নয়, মাস্ক পরেছেন পুলিশের ভয়ে। সব সময় মাস্ক পরে থাকলে, ক্রেতাদের সাথে কথা বলতে সমস্যা হয় বলেও জানান তিনি।
গোলদিঘির পাড় এলাকায় বিকেলে আড্ডা দিতে দেখা যায় কয়েকজন তরুণকে। তাদের সবার পকেটে মাস্ক থাকলেও তা ব্যবহার করতে দেখা যায়নি।
সদর থানা এলাকায়ও এমন চিত্র দেখা গেছে। মানুষের মুখে দেখা যায় না মাস্ক।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক অফিসে কাজে আসা অনেককেই মাস্ক ছাড়া দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার সকালে আদালতে আসা বেশিরভাগ লোকজনের কাছে স্বাস্থ্যবিধি ও মাস্ক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়নি। এছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সচেতনতা বা ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিষয়ও লক্ষ্য করা যায়নি। বলতে গেলে এখন করোনা এবং মাস্ক ব্যবহার কথার কথায় পরিণত হয়েছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঠেকাতে ‘স্বাস্থ্যবিধি’ মানার ব্যাপারে প্রায় সবখানেই ঢিলেঢালা ভাব চলে এসেছে। ফলে সংক্রামক ব্যাধিটির বিস্তার বৃদ্ধির ঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে নতুন করে। এমনকি মাস্ক পরে চলাফেরা করতেও অনেকের মাঝে অনীহা পরিলক্ষিত হচ্ছে। মহামারিকালে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে এমন অবহেলা নীরবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বলে সতর্ক করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
তবে জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে বাইরে বের হয়ে পড়া মানুষকে সামাজিক দূরত্ব মানার মধ্যে নিয়ে আসা এখন কঠিন হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। মানুষ এখন করোনার সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। এখন তাদেরকে যতবেশি সম্ভব মাস্ক পরতে উৎসাহিত করতে হবে।
গেল বছরের মার্চের শুরুর দিকে দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর একে একে সবকিছুই বন্ধ হয়ে পড়ে। জুলাইয়ে এসে ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক হতে চললেও দেশে ক্রমেই বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। প্রতিদিন গড়ে প্রায় এক হাজার আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হচ্ছে। আর প্রায় দিনই ১৫ জনের ওপরে মারা যাচ্ছেন। এই অবস্থার মধ্যে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের নির্দেশনা থাকলেও তাও এখন মানা হচ্ছে না।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, রবিবার ১২ হাজার ২২৫টি নমুনা পরীক্ষায় দুই হাজার ৩৬৯ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন এ নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৫ লাখ ৩৫ হাজার ১৩৯ জন।
দেশে করোনার সংক্রমণ শুরুর দিকেই সরকারের পক্ষ থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্কতার সঙ্গে কঠোরভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। যা এখনো বলবৎ আছে। শুরুর দিকে মাস দুয়েক নির্দেশনা পালনে সক্রিয়তা থাকলেও এখন সেটা নেই। বিশেষ করে লকডাউনের সময় কড়াকড়িভাবেই পালন করা হতো সামাজিক দূরত্ব।
তবে ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করলে সামাজিক দূরত্ব তো দূরে থাক ব্যক্তিগত সচেতনতায়ও দেখা দিয়েছে অনীহা। নিয়ম মেনে বাইরে বের হতে মাস্ক পরাও অনেকে বাদ দিয়েছেন। কেউ আবার নামকাওয়াস্তে পরছেন। অথচ করোনা সংক্রমণের দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ। সারা বিশ্বে অবস্থান ১৫ নম্বরে। দেশে এখন করোনার ভ্যাকসিনও চলে এসেছে। ইতিমধ্যে জেলায় জেলায় পৌছে গেছে ভ্যাকসিন। রবিবার থেকে ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম শুরু হবে কক্সবাজার জেলায়।