করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইনে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ‘কিছুটা কমতে পারে’
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:১৩ এএম, ৪ ফেব্রুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:১৬ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের দুই ধরনের নতুন স্ট্রেইন শনাক্ত হয়েছে। একটি যুক্তরাজ্যে (এন৫০১ওয়াই), অপরটি দক্ষিণ আফ্রিকায় (ই৪৮৪কে)। ইতিমধ্যে বাজারে চলে এসেছে ভ্যাকসিনও। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে নতুন স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনগুলো কতটুকু কার্যকর? কিংবা আদৌ কার্যকর কি না? গতকাল বুধবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন’র এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, যুক্তরাজ্যে শনাক্ত করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইনের পরিবর্তিত রূপ (মিউটেশন) শরীরে অ্যান্টিবডি সুরক্ষা থাকা সত্ত্বেও সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এই মিউটেশনটির সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার স্ট্রেইনের মিল রয়েছে। গত সোমবার পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড (পিএইচই) ব্রিটিশ স্ট্রেইনের নমুনা পরীক্ষা নিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর অর্থ এমন হতে পারে যে নতুন রূপটি আগেরটির তুলনায় অনেক বেশি সংক্রামক, ভ্যাকসিন নেয়ার ফলে অ্যান্টিবডি তৈরি হলেও ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে এবং আগে আক্রান্ত হয়েছেন এমন মানুষও পুনরায় সংক্রমিত হতে পারেন।
ইয়েল স্কুল অব পাবলিক হেলথের এপিডেমিওলজি বিভাগের সহযোগী গবেষণা বিজ্ঞানী জোসেফ ফাওয়ার সিএনএনকে বলেন, এটি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার ক্ষেত্রে খুব ভালো সংবাদ না। এ বিষয়ে বায়ো মেডিকেল সাইন্স গবেষক ব্রিটিশ-বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম বলেন, ফাইজারের ভ্যাকসিন যুক্তরাজ্যের স্ট্রেইনের ওপর ল্যাবরেটরি পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, তা কাজ করছে। কিন্তু তারা জানিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার স্ট্রেইনের ওপর তারা পরীক্ষা চালায়নি। কিন্তু আফ্রিকার স্ট্রেইনের ওপর চালানো এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। কয়েক জায়গায় হওয়া ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় দেখা গেছে, ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ছয় থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।
তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য রেগুলেটরির রুলিং রিভিউতে থাকা নোভাভ্যাক্স সম্প্রতি সেখানে তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে তাদের ভ্যাকসিন ৮৯ শতাংশ কার্যকর বলে ঘোষণা করেছে। তবে ভ্যাকসিনটি যুক্তরাজ্যের নতুন স্ট্রেইনের ওপর ৮৬ শতাংশ কার্যকর এবং দক্ষিণ আফ্রিকার স্ট্রেইনের ওপর ৬০ শতাংশ কার্যকর। একইভাবে জনসন অ্যান্ড জনসনের তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালে সাধারণ করোনাভাইরাসের ওপর ওভারঅল কার্যকারিতা ৬৬ শতাংশ। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার স্ট্রেইনে এর কার্যকারিতা ৫৭ শতাংশ। সুতরাং ওভারঅল দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ আফ্রিকার স্ট্রেইনের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ছয় থেকে ১০ শতাংশ কমে যাচ্ছে।
নতুন স্ট্রেইনের ওপর নোভাভ্যাক্স ও জনসন অ্যান্ড জনসনের কার্যকারিতা কমে যাওয়ায় আশঙ্কা করা হচ্ছে অন্যান্য ভ্যাকসিনের কার্যকারিতাও কিছুটা কমে যেতে পারে। কারণ ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের ওপর ভিত্তি করে ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনে যেহেতু পরিবর্তন ঘটেছে, তাই দুইটি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার মানে অন্যগুলোর ক্ষেত্রেও কমে যেতে পারে, বলেন তিনি।
গতকাল যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন করোনা মহামারির সংক্রমণ কমাতে অত্যন্ত কার্যকর ফল দিয়েছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণার বরাত দিয়ে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক এ কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ভ্যাকসিনই করোনা মহামারি থেকে উত্তরণের পথ। এই প্রথম ভ্যাকসিন করোনার সংক্রমণ কমাচ্ছে বলে প্রতীয়মান হলো। তবে ওই গবেষণাটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়নি। বিবিসি’র প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যদিও ধারণা করা হচ্ছে, নতুন স্ট্রেইনের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনকে আরও প্রতিরোধী হতে হবে। তবে ওই গবেষণাটিতে নতুন স্ট্রেইনের ওপর ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। অন্যান্য ভ্যাকসিনের মতো অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের কার্যকারিতাও নতুন স্ট্রেইনের ক্ষেত্রে কমবে কি না, জানতে চাইলে ড. আকরাম বলেন, নতুন স্ট্রেইনের ওপর অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চলছে। এখনো সেই ফল পাওয়া যায়নি। সবশেষে তিনি বলেন, এখন মিউটেশনের ওপর নির্ভর করে ভ্যাকসিনের কিছুটা পরিবর্তন করা প্রয়োজন হতে পারে। ইতিমধ্যে ভ্যাকসিন যারা তৈরি করছে, তারাও বুস্টার ডোজ আনার কথা জানিয়েছে। বুস্টার ডোজে ভাইরাসের মিউটেশন অনুযায়ী ভ্যাকসিনে পরিবর্তন আনা হতে পারে।