স্বৈরাচার পতন দিবস আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৩৯ এএম, ৬ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৫৩ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
আজ ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার পতন দিবস। গণআন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের এই দিনে পদত্যাগ করেন তৎকালীন স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এই দিনে তিনি অস্থায়ী সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। এর মাধ্যমে অবসান হয় ৯ বছরের স্বৈরশাসনের। মুক্তি পায় গণতন্ত্র। সামরিক আইন জারির মাধ্যমে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ ক্ষমতা দখল করেছিলেন তৎকালীন সেনাপ্রধান এরশাদ।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন দুই জোটসহ বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর টানা আন্দোলনের মুখে এইচএম এরশাদ ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। ২০২০ সালের ১৪ জুলাই সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ। ‘গণতন্ত্র মুক্তি দিবস’ হিসেবে দিবসটি পালন করে আওয়ামী লীগ। আর ‘স্বৈরাচার পতন ও গণতন্ত্র মুক্তি দিবস’ হিসেবে পালন করে বিএনপি। ‘সংবিধান সংরক্ষণ দিবস’ হিসেবে দিনটি পালন করে স্বৈরশাসক এইচএম এরশাদের দল জাতীয় পার্টি।
স্বৈরাচার পতন ও গণতন্ত্র মুক্তি দিবস উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাণী দিয়েছেন।
গতকাল সোমবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বাণীতে বলা হয়, ৬ ডিসেম্বর আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৯০ সালের এ দিনে দীর্ঘ ৯ বছরের রক্তস্নাত আন্দোলনের পর পতন ঘটেছিলো স্বৈরশাসনের। যে স্বৈরশাসক এরশাদ ‘৮২’র ২৪ মার্চ পেশাগত বিশ্বস্ততা ও শপথ ভেঙ্গে বন্দুকের নলের মুখে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করে গণতন্ত্র নস্যাৎ ও সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে সাংবিধানিক রাজনীতি স্তব্ধ করেছিলেন। যে সাংবিধানিক রাজনীতি ছিল বহুপাক্ষিক ও বহুদলীয়। যার পুনঃপ্রবর্তন করেছিলেন স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। স্বৈরাচারী এরশাদ একে একে সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ধারাকে করেছিল বাধাগ্রস্ত। দীর্ঘ নয় বছর গণআন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ‘৯০-এর ৬ ডিসেম্বর এই দিনে ছাত্র-জনতার মিলিত শক্তিতে স্বৈরাচারকে পরাজিত করে মুক্ত হয়েছিলো গণতন্ত্র।
আজ সেদিনের পরাজিত শক্তি ও তার দোসররা সেই আন্দোলনের কিংবদন্তিসম আপোসহীন নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় হয়রানীর জন্য অন্যায়ভাবে বন্দি রেখেছে। এখন তাকে মুক্তির নামে গৃহবন্দি রেখে আবারও গণতন্ত্রকে কবরস্থ করেছে। অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিতে হবে। তার মুক্তির মধ্য দিয়ে অপহৃত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। আজকের এ দিনে আমি ‘৮২ থেকে ’৯০ পর্যন্ত রক্তস্নাত স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে আত্মদানকারী বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই এবং তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করি।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এ স্মরণীয় দিনে আমি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী গণতন্ত্রের হেফাজতকারী দেশবাসীকে। একদলীয় বাকশালী চেতনার দল ও আশির দশকের গণতন্ত্র হত্যাকারী স্বৈরাচার একত্রিত হয়ে দেশের সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্রমান্বয়ে ধংসস্তূপে পরিণত করছে। তাদের মিলিত ইচ্ছায় নিরপেক্ষ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধান থেকে মুছে দেয়া হয়েছে। এই অগণতান্ত্রিক অপশক্তি সংবিধান বর্ণিত জনগণের মৌলিক অধিকার ক্রমাগতভাবে হরণ করে যাচ্ছে। এই অপশক্তিকে প্রতিহত করে গণতন্ত্রকে স্থায়ী রূপ দিতে দেশবাসীকে আজকের এই দিনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য আহবান জানাই।
স্বৈরাচার পতন ও গণতন্ত্র মুক্তি দিবস উপলক্ষে অপর এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার পতন দিবস উপলক্ষে আমি দেশবাসী সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। দীর্ঘ নয় বছরের স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র গণআন্দোলনে আত্মাহুতি দানকারী বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করি।
১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার পতনের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছিল আবারও বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথচলা। শুরু হয় সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা। এই দিনে গণতন্ত্রের দুশমনেরা পরাজিত হলেও আজও তারা চুপ করে বসে নেই। তাই সেই নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলনের অটল ও আপোসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে পরাজিত শত্রুরা চক্রান্তমূলকভাবে অন্তরীণ করে রেখেছে।
আমাদের চলমান সংগ্রামের এখন মূল লক্ষ্য গণতন্ত্র ও দেশনেত্রীর মুক্তির আন্দোলনকে বেগবান করা। ‘৯০-এর গণঅভ্যুথানের চেতনায় গণতন্ত্রের দুশমনদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিজয় অর্জন করা। বারবার অপশক্তিগুলো গণতন্ত্রকে বিপর্যস্ত করে আমাদের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে চেয়েছে। কিন্তু এদেশের দেশপ্রেমিক জনগণ সে অপচেষ্টাকে শক্ত হাতে প্রতিহত করেছে সব সময়।
আমাদের গণতন্ত্র বার বার হোঁচট খেয়েছে তার অগ্রযাত্রায়। কিন্তু এদেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ সকল বাধাকে অতিক্রম করে গণতন্ত্রের পথচলাকে নির্বিঘœ করেছে। শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গণতন্ত্র এখনো শৃঙ্খলমুক্ত মুক্ত নয়। নিষ্ঠুর কর্তৃত্ববাদী একদলীয় শাসনের চরিত্রগুলো ক্রমশ ফুটে উঠছে বর্তমান শাসক গোষ্ঠীর আচরণে।
একতরফা নির্বাচন করে আবারও সারা জাতিকে একদলীয় নিষ্ঠুর শাসনের শৃঙ্খলে বন্দি করে মানুষের নাগরিক স্বাধীনতাকে করা হয়েছে বিপন্ন। আমাদের গণতন্ত্র আজো নামে-বেনামে একদলীয় ফ্যাসিবাদের আক্রমণে আক্রান্ত। ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী ও নিরংকুশ করার জন্য আজ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙ্গে ফেলার আয়োজন চলছে। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে তাদের সে আয়োজন নস্যাৎ করে দিতে হবে। স্বৈরাচার পতন দিবসে এটাই হোক আমাদের দৃপ্ত শপথ।