প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘরের জন্য টাকা নিলো কারা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১:৪৫ এএম, ২৭ জানুয়ারী,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:৩৬ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
একদিনে প্রায় ৭০ হাজার পরিবারকে আশ্রয় দিয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত ইচ্ছায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে এই ঘর উপহার দেয়ার কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়। গত শনিবার প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৭০ হাজার পরিবারকে তাদের আশ্রয় বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬৬ হাজার পরিবারকে দেয়া হয়েছে বারান্দা, রান্নাঘর, শৌচাগারসহ দুই কক্ষের ঘর। সা¤প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় এই মানবিক প্রকল্পের ঘর পেয়ে আনন্দের বন্যা বয়ে যায় প্রকল্প এলাকায়। যারা আশ্রয় পেয়েছেন তাদের অনেকের স্বপ্নেও ছিল না এমন পাকা বাড়িতে থাকার। তবে এই প্রকল্প ঘিরে বাণিজ্যের অভিযোগও পাওয়া গেছে বিভিন্ন স্থান থেকে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অসাধুদের মাধ্যমে অর্থ নেয়া হয়েছে উপকারভোগীদের কাছ থেকে। কোথাও কোথাও নেয়া হয়েছে নির্মাণসামগ্রীর দাম। আবার কোথাও মালামালের ভাড়ার কথা বলে নেয়া হয়েছে অর্থ। এমন বেশকিছু অভিযোগের সরাসরি তথ্য দিয়েছেন উপকারভোগীরা। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে ভূমিহীন ও গৃহহীদের ঘর নির্মাণের জন্য ৩০-৩৫ হাজার টাকা নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ উপজেলায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ থেকে ৪৯১টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে ১৫০টি ঘরের কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ঘর তৈরিতে শর্ত রয়েছে সেমিপাকা প্রতিটি ঘরে থাকতে হবে দুইটি বেডরুম, ১টি বাথরুম, বারান্দা এবং উপরে উন্নতমানের রঙিন টিন। যার জন্য ঘরপ্রতি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। তবে এসব ঘর বিনামূল্যে দেয়ার কথা থাকলেও এ উপজেলায় ঘটছে ভিন্নতা। জনপ্রতি দিতে হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা করে। অভিযোগ রয়েছেÑ টাকা দিয়ে ঘর পাওয়ার পরও ইট-বালুসহ অর্ধেক নির্মাণসামগ্রী কিনতে হচ্ছে নিজেদের। যাতে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে আরো ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। ঘর উপহার পাওয়া উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ১নং ওয়ার্ডের মো. শাবু হাওলাদার জানান, ঘরের জন্য নাম দিতে ইউপি সদস্য মিন্টু হাওলাদারকে ৩৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। কিন্তু ঘরের জন্য সরকার যে নির্মাণসামগ্রী দিয়েছে তাতে ঘরের কাজ সম্পন্ন হচ্ছে না এমন কথা বলে আমার কাছ থেকে আরো ১১শ ইট এবং ৩০ ব্যাগ সিমেন্ট নেয়া হয়েছে। একই ওয়ার্ডের মো. শাকিল বলেন, ইউপি সদস্য মিন্টু হাওলাদারকে ঘরের জন্য প্রথমে ৩০ হাজার ও ১৫ দিন পর মালামালের ভাড়া বাবদ ৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। একই ওয়ার্ডের হাসি বেগম জানান, আমার মা সাফিয়া বেগমের নামে বরাদ্দকৃত ঘরের জন্য ইউপি সদস্য মিন্টু হাওলাদারকে ৩৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এছাড়া একই ওয়ার্ডের শাহিনুর বেগম জানান, ঘর পেতে ঠিকাদার শাওনকে ৩০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। চরমোন্তাজ ইউনিয়নের উত্তর চরমোন্তাজ ৬নং ওয়ার্ডের জাহাঙ্গীর ফরাজী বলেন, ঘর পেতে আমাকে ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের মহিলা সদস্যের স্বামী জলিল হাওলাদার প্রথমে ২০ হাজার ও পরে মালামালের ভাড়া বাবদ ১৫ হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু তারা ঘর নির্মাণের জন্য যে নির্মাণসামগ্রী দিয়েছে তারপরও আমাকে ২৪ হাজার টাকার নির্মাণসামগ্রী কিনতে হয়েছে। ইট ২ হাজার, রড ১৩ কেজি, সিমেন্ট ৩০ ব্যাগ নিজের টাকায় কিনেছি। একই অভিযোগ করেন এ ওয়ার্ডের মাহাবুব হাওলাদারও। চরমোন্তাজ ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হালিম খান বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান মো. হানিফ মিয়া আমার মাধ্যমে ৩টা ঘরের নাম দিয়েছেন, প্রতিটি ঘরের জন্য তাকে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এমনকি আমার আপন ভাইয়ের জন্য ঘরের নাম দিতে ১২ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এ ব্যাপারে ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিন্টু হাওলাদার বলেন, আমার বিরুদ্ধে শত্রæপক্ষ এসব অভিযোগ ছড়িয়েছে। এ অভিযোগ সত্য নয়। ৩নং ছোটবাইশদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান হাজী আব্দুল মান্নান জানান, ঘরের জন্য কোনো টাকা নেয়া হয়েছে কিনা তা তার জানা নেই। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। চরমোন্তাজ ইউপি চেয়ারম্যান মো. হানিফ মিয়া জানান, ইউপি সদস্যরা টাকা নিয়ে থাকলে নিয়েছে। আমাকে কোনো টাকা-পয়সা দেয়নি। কেউ আমার কাছে অভিযোগও করেনি।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, ঘরের তালিকা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে করা হয়েছে। অনিয়ম হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। তবে কেউ যদি টাকা দিয়ে থাকে সে তো আরো বড় অন্যায় করেছে। আগে তার বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত। পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চৌধুরী জানান, এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওদিকে বগুড়ার শেরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে উপজেলায় ১৬৩টি ভূমিহীন পরিবারকে ০২ শতাংশ করে খাসজমি বন্দোবস্ত দিয়ে সেখানে একটি সেমিপাকা গৃহ নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। যার প্রতিটি গৃহ নির্মাণের জন্য সরকারি ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে শেরপুর উপজেলায় প্রায় তিন কোটি টাকার এই কাজের দেখভাল করছে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। শেরপুর উপজেলায় ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে সুঘাট ও শাহবন্দেগী এই দুই ইউনিয়ন বাদ রেখে বাকি ৮টি ইউনিয়নে এই দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের মাকড়কোলা গ্রামের আলাউদ্দিন রনি জানান, আমাদের গ্রামে ভূমিহীনদের জন্য তিনটি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে নিম্নমানের ইট-সিমেন্ট দেয়া হচ্ছে। সেখানে ইটের খোয়ার পরিবর্তে বিল্ডিং ভাঙা পচা রাবিশ আর নি¤œমানের বালু ও কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই কারণে কয়েকটি ঘরের দেয়ালে হস্তান্তরের আগেই ফাটল ধরেছে। প্রকল্পের ১২নং উপকারভোগী শেরপুর উপজেলার ১নং কুসুম্বী ইউনিয়নের বাগড়া কলোনী গ্রামের মৃত আবু বক্করের স্ত্রী বাছিরন বেগম। তিনি জানান, ঘরের কাজ ভালো করার জন্য ৫ বস্তা সিমেন্ট আমি নিজে কিনে দিয়েছি। তাছাড়া ঢালাইয়ের কাজে রডসহ প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ দিতে হয়েছে। এই প্রকল্পের ১নং উপকারভোগী একই গ্রামের সেকেন্দার আলীর স্ত্রী গৃহিণী রুবিয়া খাতুন জানান, তিনিও কাজ ভালো করার জন্য দুই বস্তা সিমেন্ট দিয়েছেন। কিন্তু ঘরের কাজ ভালো হয়নি। ঘরের মেঝেসহ অন্যান্য কাজ ভালো হয়নি। দেয়ালের পলেস্তরা খসে পড়ছে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী হাসান ওয়াদুদ জানান, প্রকল্পের কাজ এখনো চলছে। তাই এ বিষয়ে এখন বক্তব্য দেয়া যাবে না। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোছা. শামছুন্নাহার শিউলী জানান, প্রকল্পের নকশা ও প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। ঘর নির্মাণে যে টাকা বরাদ্দ রয়েছে তা অপ্রতুল। দু-একটি জায়গায় নিম্নমানের কাজের অভিযোগ পাওয়ায় সেগুলো ঠিক করা হয়েছে। এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. লিয়াকত আলী সেখ জানান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে শেরপুর উপজেলায় ১৬৩টি গৃহ নির্মাণ করে ভূমিহীনদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। গৃহনির্মাণ কাজে কোনো অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। উপকারভোগীদের কাছ থেকে নির্মাণসামগ্রী নেয়া হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।
টাকা ছাড়া মিলছে না প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর :
সূর্য তখন ঠিক মাথার ওপরে। জরাজীর্ণ ঝুপড়ি ঘরের সামনে বসে চকচকে টিনশেড সেমিপাকা ঘরের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস নিচ্ছিলেন জাহেদা বেগম। ভেবেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা ঘরগুলোর একটা দেয়া হবে তাকেও। কিন্তু দুর্ভাগ্য, ১০ হাজার টাকা দিতে না পারায় ঘরের বরাদ্দ পাননি তিনি। গত বুধবার কক্সবাজারের টেকনাফ হ্নীলা মৌলভিবাজার থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার ভেতরে সীমান্ত সড়কের কাছাকাছি ভূমিহীন-গৃহহীনদের জন্য তৈরি নতুন ঘরের পাশে নিজের পলিথিনের ঝুপড়ি ঘরের সামনে বসে এমন অভিযোগ করেন জাহেদা বেগম। তিনি ওই এলাকার ইউনুছ উদ্দিনের স্ত্রী। ঘর বরাদ্দের তালিকায় তাদের নাম ছিল, কিন্তু দাবিকৃত টাকা না দেয়ায় ঘর মেলেনি বলে অভিযোগ জাহেদা বেগমের। তিনি বলেন, জাহাঙ্গীর আলম নামে এক ব্যক্তি ঘর বরাদ্দের জন্য ১০ হাজার টাকা দাবি করেছিল। কিন্তু টাকা দিতে না পারায় ঘর পাইনি। তাছাড়া মালামাল বহন খরচের টাকাও দিতে পারেনি। বিনা টাকার ঘর, টাকা দিয়ে নিতে হবেÑ এটা কেমন বিচার? যারা টাকা দিয়েছে তারা ঘর পাচ্ছে। জাহাঙ্গীর অনেকের কাছে টাকা নিয়েছে। উল্লেখ্য, ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, গৃহহীন থাকবে না একটি পরিবার’ এই সেøাগান বাস্তবায়নে গত শনিবার (২৩ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে প্রথম পর্যায়ে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় হতদরিদ্র গৃহহীন ৫০ পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়া হয় একটি করে ঘর। কিন্তু বিনামূল্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় তৈরি করে ঘর বুঝিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও অনেক সুবিধাভোগীর কাছ ১৫ থেকে ২০ হাজার করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ এক মৎস্যজীবী নেতার বিরুদ্ধে। সুবিধাভোগীরা বলছেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে ঘরগুলো দেখভালের দায়িত্ব পাওয়ার কথা বলে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম নামে এক ব্যক্তি ঘর বরাদ্দের জন্য তাদের কাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে। এছাড়া প্রত্যেকের কাছ থেকে ঘর নির্মাণের মালামাল বহন খরচ হিসেবে নিয়েছে ১০ থেকে ১৪ হাজার টাকা। জানা গেছে, জাহাঙ্গীর বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির হ্নীলা মৌলভীবাজার ২নং ওয়ার্ডের সভাপতি। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তাদের নাম ভাঙিয়ে টাকা হাতিয়ে নেন। এমনকি টাকা না দিলে ঘর দেয়া হবে না বলেও হুমকি দিয়েছিলেন। তার কারণে ঘর বরাদ্দ পাননি বলে দাবি করেন ওই জাহেদা বেগম। ঘরে দুটি রুম, একটি করিডোর, একটি বাথরুম ও একটি রান্নাঘর থাকার কথা থাকলেও বাথরুম নির্মাণ করা হয়নি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, মুজিববর্ষে ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারসহ মোট ২২৯টি ঘর বরাদ্দ এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অর্থায়নে প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। তবে প্রথম পর্যায়ে ৫০টি পরিবারকে ঘর বুঝিয়ে দেয়া হবে। ঘরের সব কাজ শেষ হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার থেকে পূর্ব দিকে দেড় কিলোমিটার ভেতরে সীমান্ত সড়কের কাছাকাছি সরকারি উদ্যোগে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে মুজিব শতবর্ষে ‘ভূমিহীন ও গৃহহীন’ অর্থাৎ ‘ক’ শ্রেণির দুর্যোগ সহনীয় ২৮টি টিনশেড পাকাঘর নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে আশপাশে অস্থায়ী পলিথিন ছাউনিতে বসতি করছে ‘ভূমিহীন ও গৃহহীন’ সুবিধাভোগীরা। এ সময় জালাল উদ্দিন নামে এক সুবিধাভোগী জানান, ‘টমটম চালিয়ে সীমান্তের বেড়িবাঁধে ঝুপড়ি ঘরে কষ্টের জীবন যাপন করতাম। সীমান্ত সড়ক নির্মাণকাজ শুরু সেখানে থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। এরপর ভূমিহীন ও গৃহহীন হয়ে পড়ি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিকতায় সীমান্ত সড়কের পাশে আমাদের তিন শতক জমিসহ সেমিপাকা একটি করে ঘর বরাদ্দ দেয়। তবে এই ঘর বরাদ্দে নাম ভাঙিয়ে মো. জাহাঙ্গীর আলম ১০ হাজার টাকা নিয়েছে। এছাড়া ঘর নির্মাণের মালামাল বহন খরচের জন্য ১১ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এরপরও ঘরগুলোর টয়লেট নির্মাণ করেনি। তবু প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই একটি করে নতুন ঘর দেয়ার জন্য।’ আরেক অসহায় সুবিধাভোগী নূর বেগম জানান, আমাকে হুমকি দিয়ে ১৫ হাজার করে টাকা নেয়া হয়েছে। কেউ গবাদিপশু বিক্রি করে, কেউ শেষ সম্বল একমাত্র ফসলের জমি বন্ধক রেখে, কেউ স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে আবার কেউ ঋণ নিয়ে জাহাঙ্গীরকে টাকা দিয়েছেন। বিষয়টি সাংবাদিকদের অবহিত করায় জাহাঙ্গীরের লোকজন আমাদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় মারধরের হুমকি দিয়েছিল অভিযোগ করে সুবিধাভোগী হাবিব উল্লাহ জানান, ‘ওপর মহলে টাকা দিতে হবে, না হলে ঘর পাবে না’Ñ শুরুতে এমন হুমকি পান জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে। পরে কোনো উপায় পেয়ে টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বলেন, ঘরের জন্য ৩৮ হাজার টাকা নিয়েছে সে। এর মধ্যে ঘর বরাদ্দের ১০ হাজার টাকা এবং বাকি টাকা মালামাল খরচ বহনে। এরা কেমন মানুষ অসহায়দের জন্য প্রধানমন্ত্রী বিনা টাকায় ঘর বরাদ্দ দিলেও সেখানে মিলেমিশে টাকা খাচ্ছে সবাই। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ঘর বরাদ্দ দেয়ার কথা বলে কারো কাছ থেকে কোনো টাকা নেইনি। তবে মালামাল বহন খরচের জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৪ হাজার ২শ টাকা করে নিয়েছি। আমি প্রকৃত খরচের টাকাগুলো নিয়েছি। কারণ ঘর নির্মাণে মালামালের বহন খরচ কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি দেয়নি। আমিও নিজে একটি ঘর বরাদ্দ পেয়েছি। তাছাড়া এসব ঘর নির্মাণের কাজ দেখাশুনা করতে উপজেলা প্রশাসন আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে। আর কোথায় কি ব্যয় করেছি তার হিসেব কর্তৃপক্ষকে দিয়েছি।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ‘হ্নীলায় মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী উপহার ঘর বরাদ্দকৃত উপকারভোগীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। তাছাড়া জাহাঙ্গীর নামে কাউকে ঘরগুলো নির্মাণের দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয়নি।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পিআইও সঙ্গে কথা বলতে বলেন। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. সিফাত বিন রহমান জানান, ‘জাহাঙ্গীর আলমকে ঘর নির্মাণে তদারকি দায়িত্বে দেয়া হয়নি। সে সেখানকার মাঝির দায়িত্ব আছে, ফলে তাকে দেখাশোনা করতে বলা হয়েছে। কিন্তু কোনো উপকারভোগীদের কাছ থেকে ঘর এবং মালামাল বহনের কোনো টাকা নেয়া নির্দেশনা ছিল না। সে রকম কোনো নিয়মও নেই। টাকা নেয়ার বিষয়ে অফিশিয়ালি কেউ আমাদের অবহিত করেনি।’ তিনি আরও জানান, ‘জাহেদা বেগমের জায়গা সমস্যা ছিল। তাছাড়া তার খোঁজ পাওয়া পাওয়া যাচ্ছে না। সে জায়গা চিহ্নিত করে দিলে ঘর পাবে।’ কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মামুনুর রশিদ জানান, ‘গৃহহীন মানুষ প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য একটি করে ঘর পাচ্ছেন, এটাই হবে মুজিববর্ষের সেরা উপহার। এখান থেকে কেউ নাম ভাঙিয়ে টাকা নিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’