শুধু সংলাপ নয় নির্বাচনি জনসভাও দরকার
আলী মামুদ, দিনকাল
প্রকাশ: ০৯:৫৭ পিএম, ২৯ জুলাই,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:৫৮ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মুখে মুখে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা চলছে। সরকারি ও বিরোধীদলীয় অবস্থান থেকে মিডিয়ায় এসব আলোচনায় নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ঐ নির্বাচনের আগে বর্তমান নিশি-নির্বাচনপ্রসূত জাতীয় সংসদ ভাঙার দাবিও রয়েছে অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু নির্বাচনের আগে মাঠে, এমনকি ঘরোয়া সভা-সমাবেশেরও খবর নেই। নির্বাচন কমিশন-দরবারে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে কিন্তু নির্বাচনি জনমত গড়তে জনসভারও কোনো খবর নেই। পুলিশি তৎপরতা এতো বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে যে, দেশে যে একটি বেসামরিক শাসনব্যবস্থা চলছে তা বোঝা যায় না। এই পরিস্থিতিতে বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের দরবারে যেসব আলোচনা চলছে, তাতেই কথা উঠেছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে কবে সভা-সমাবেশের সুযোগ দেয়া হবে তা নিয়ে। কারণ নির্বাচন এগিয়ে আসছে কিন্তু মাঠে তেমন সভা-সমাবেশ নেই। জনমত গড়ার সুযোগও নেই। এদিকে বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি পূরণে নির্বাচন কমিশনের সামর্থ্য নেই, এটি পূরণ করতে পারে সরকার। ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন সম্পর্ক প্রধানমন্ত্রীকে হয়তো ‘ইনোভেটিভ’ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সাবেক সংসদ সদস্য ও ডাকসু’র সাবেক জিএস খায়রুল কবির খোকন বলেন, দেরি না করে মেঠো সভা-সমাবেশ শুরু হওয়া উচিত। কমিশনকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের সামনে এটি একটি অগ্নিপরীক্ষাও বটে।
উল্লেখ্য, একটি স্বাধীন দেশের বয়স অর্ধশতাব্দী হলেও গণতান্ত্রিক বিধিবিধান অনুযায়ী নির্বাচন ব্যবস্থা এখনো পোক্ত হয়ে উঠেনি এই বাংলাদেশে। অথচ গণতন্ত্রের দাবিতেই সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এ দেশটি স্বাধীন হয়েছিল। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সশস্ত্রবাহিনী, পুলিশ ও আনসার বাহিনীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ এতে অংশ নিয়েছিলেন রেডিওতে ঘোষণা দিয়ে। কিন্তু স্বাধীন দেশের মাটিতে প্রথম সাধারণ নির্বাচনেই ভোটের বাক্স (১৯৭৩) ছিনিয়ে হেলিকপ্টারে করে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এনে সরকারি দলের এক প্রভাবশালী নেতা (খন্দকার মুশতাক আহমাদ) নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল ভোলা, যশোর ও বরিশাল এলাকায়। তবে সেই বিতর্কিত নির্বাচন ৫ বছরও টিকেনি। এর মাঝামাঝিতেই একদলীয় সরকার (বাকশাল) কায়েম করা হয়, যার কোনো মেয়াদ ছিল না। বিতর্কিত সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছিল ৩টি দলের সমন্বয়ে ওই সরকার। বাকশালে অন্তর্ভুক্তি হয়েছিল আওয়ামী লীগ, সিপিবি ও মোজাফ্ফর- ন্যাপ। তখন সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা রপ্ত করার জন্য তৎকালীন সমাজতান্ত্রিক দেশে ইউএসএসআর সরকারি ক্যাডার সার্ভিসেসের লোকজনের একটি ব্যাচও পাঠানো হয়েছিল। ঢালাও জাতীয়করণ করে শিল্প- কারখানা, (বিজিএমসি-বিটিএমসি) ইত্যাদি চালাতে গিয়ে তা মুখ থুবড়ে পড়ে। অর্থাৎ অপরিণামদর্শী বাকশালীয় অর্থনীতি চলেনি, ব্যর্থ হয়েছে। বিজিএমসি’র সবচেয়ে বড় মিল ছিল আদমজী জুট মিলস। পাকিস্তান আমলেই এই মিলে ৪০ হাজার কর্মী কাজ করতেন। বাংলাদেশ আমলে সেটি একটি লোকসানি মিলে পরিণত হয়। ফলে বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে সেখানে ইপিজেড স্থাপিত হয়েছে। জাতীয়করণ নীতির বদলে বিরাষ্ট্রীয়করণ নীতি গ্রহণ করা হয়। বাকশালের কারণে যে শেয়ারবাজার (ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ) এর গেটে তালা ঝুলেছিল তা খুলে দেয়া হয়। পরে শেয়ারবাজার থেকে জনগণের অর্থ নিয়ে কল-কারখানা স্থাপনের যুগ শুরু হয়, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে অটোমোশন যুগে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শেয়ারবাজার চলছে যা বিএনপির আমলে যাত্রা শুরু করেছিল। একদলীয় বাকশাল-উত্তর বহুদলীয় রাজনীতিতে সংসদ নির্বাচন শুরু হয় ১৯৭৯ সালে। বর্তমান আওয়ামী লীগ বাকশাল ছেড়ে আবার পুরনো নামে রাজনীতি শুরু করে। এখন তারা বাকশালের কথা মুখে তেমন আনেন না। এটি অবশ্য ভালোই।
নির্দলীয় সরকার গঠনে সরকারকেই ভূমিকা নিতে হবে- শাহদীন মালিক : প্রবীণ আইনজীবী শাহদীন মালিক মিডিয়ায় এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপি তার বক্তব্যে অনড়। তারা বলছে, নির্দলীয় সরকার কায়েম না হলে কোনো নির্বাচনে অংশই নেবে না। সঞ্চালকের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের হাতে নির্দলীয় সরকার গঠনের ক্ষমতা নেই। এটি করতে হলে তা করতে হবে বর্তমান সরকারকেই। এ জন্য আলাপ-আলোচনা তো হতে পারে।
সরকারের উচিত আলোচনায় বসা- ব্যারিস্টার শামীম : প্রখ্যাত আইনজীবী ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো সংসদ নির্বাচন মানুষ চায় না। এ কারণে বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যেতে চায় না। তাদের যুক্তিও আছে। তবে এই দাবিতে সরকারকে বাধ্য করতে না পারলে তা হবে না। দুর্বার আন্দোলন ছাড়া লক্ষ্য অর্জিত হবে না। আওয়ামী লীগের উচিত বিএনপির সঙ্গে এসব নিয়ে আলোচনায় বসা।
সংলাপ নয়, জনসভাও দরকার- খায়রুল কবির খোকন : ’৯০-এর সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা, ডাকসু’র সাবেক জিএস খায়রুল কবির খোকন এ সম্পর্কে বলেন, জনমত গড়ে তুলতে প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ করতে হবে। এরশাদের শাসনামলেও আমরা মিছিল ও সভা-সমাবেশ করেছি। কিন্তু এখন তা করা যাচ্ছে না। সামনে একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে। বিএনপি এতে অংশ নিচ্ছে না। আমরা লক্ষ করছি এই সংলাপে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সভা-সমাবেশের বিষয়ে কোনো কথা বলছে না। সভা-সমাবেশ করতে না পারলে তাদের রাজনৈতিক ভাষ্য মানুষ জানবে কিভাবে? জনমত গড়তে তাদের সুযোগ দিতে হবে- এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কি পদক্ষেপ নেয় তা দেখার বিষয় বটে বলে উল্লেখ করলেন কলামিস্ট খায়রুল কবির খোকন।