তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে ১৭ জুলাই পর্যন্ত
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:২৫ পিএম, ১৩ জুলাই,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০১:১৮ পিএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
দেশের কয়েকটি জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। প্রচণ্ড গরম আর রৌদ্রের তীব্রতায় জনজীবনে নাভিশ্বাস ওঠেছে। এই অবস্থা আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
অধিকাংশ স্থানে বৃষ্টিপাত না হওয়ার জন্য দায়ী জেট স্ট্রিম। এটি মেঘ সৃষ্টিতে বাঁধা দিচ্ছে, এর ফলে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় জলীয় বাষ্পও ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারছে না। এতে করে গরম অনুভূত হচ্ছে বেশি। কিছু কিছু স্থানে হালকা বৃষ্টিপাত হলেও গরম কমেনি।
গতকাল মঙ্গলবার (১২ জুলাই) সন্ধ্যায় পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার জন্য দেওয়া পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, রাজশাহী, পঞ্চগড় ও নীলফামারী জেলাসহ সিলেট বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে।
এদিকে উড়িষ্যা উপকূলের অদূরবর্তী উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ অবস্থান করছে, এর একটি বর্ধিতাংশ পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র মাঝারি ধরনের সক্রিয় রয়েছে।
অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ ড. মো. আবদুল মান্নান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী জেলায় ও রংপুর বিভাগের সৈয়দপুরে। এই দুই স্থানে ৩৭.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল রাঙ্গামাটি জেলায়, সেখানে ২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। কোনো স্থানেই উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়নি।
আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, 'আবহাওয়া পূর্বাভাসের বিভিন্ন মডেল বিশ্লেষণ করে দেখতে পাচ্ছি, দেশের বিভিন্ন জেলার ওপর চলমান তাপপ্রবাহ আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকবে। অনাবৃষ্টি অব্যাহত থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে জুলাই মাসের ১৭ তারিখ পর্যন্ত। এরপর ১৮ তারিখ থেকে সিলেট ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলোতে বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে। ১৯, ২০ ও ২১ জুলাই সারাদেশেই বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।'
তিনি আরও জানান, দেশের পশ্চিমাঞ্চলে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের জেলাগুলোতে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে পৌঁছাতে পারে। বর্ষাকাল হওয়ায় দেশের বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অনেক বেশি, যে কারণে গরমে কষ্ট পাচ্ছে মানুষ। মেঘ তৈরি না হওয়া এবং বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এই জলীয় বাষ্প ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারছে না। চলমান অনাবৃষ্টি পরিস্থিতির অন্যতম কারণ হলো জেট স্ট্রিম, যা ভূ-পৃষ্ঠের ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার উচ্চতায় পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত বায়ু; এর পেছনের অর্ধেক অংশের একটি তরঙ্গ এখন বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিহারের ওপর অবস্থান করছে। জেট স্ট্রিমের এই অংশ মেঘ সৃষ্টিতে বাঁধা দিচ্ছে, তাই বৃষ্টিপাত হচ্ছে না।
মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, জেট স্ট্রিমের অগ্রভাগের অংশ যেখানে অবস্থান করে সেখানে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত হয়। ওই অংশটি বর্তমানে পাকিস্তানের করাচি, ভারতের মুম্বাইসহ বিভিন্ন বন্দর এলাকার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং সেসব এলাকায় প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছে। অতিবৃষ্টিতে সেখানে সিলেট বিভাগের মতো বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জেট স্ট্রিমটি যখন আরও পশ্চিমে অগ্রসর হবে তখন তা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার এবং বাংলাদেশের ওপর অবস্থান করার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। ফলে জুলাই মাসের ১৮ তারিখ থেকে আবারও বাংলাদেশে বৃষ্টিপাত হবে। তবে নতুন করে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি বা অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
বঙ্গপোসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ প্রসঙ্গে এই গবেষক বলেন, লঘুচাপটি এক পর্যায়ে ভারতের উপকূল দিয়ে অতিক্রম করতে পারে, তবে বাংলাদেশের ওপর এর কোনো প্রভাব পড়বে না বললেই চলে। বড়জোর চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে ১৪ বা ১৫ জুলাই স্বল্পপসময়ের জন্য সামান্য বৃষ্টিপাত হতে পারে। আগামী কয়েকদিনে দেশের কোথাও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এতে তাপমাত্রা কমারও সম্ভাবনা নেই।