ঈদের আনন্দ ম্লান হতে পারে লোডশেডিংয়ে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৩৯ পিএম, ৯ জুলাই,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:০৯ পিএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
রাত পোহালেই পবিত্র ঈদুল আজহা। আপনজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে এরইমধ্যে গ্রামে গেছেন অনেকে। ঈদ উদযাপনে এত আয়োজনের মধ্যে দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে লোডশেডিং। চলমান বিদ্যুৎ সংকট ঈদের আনন্দ ম্লান করবে বলে মনে করছেন অনেকে। এদিকে, কয়েকদিন ধরে চলছে তাপপ্রবাহ। তাই, লোডশেডিং ভোগান্তি বাড়াবে। ফলে, ঈদের আনন্দ ম্লান হতে পারে লোডশেডিংয়ের কারণে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণকারী কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। বিশ্ববাজারে দাম চড়া, তাই খোলাবাজার (স্পট মার্কেট) থেকে আপাতত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনছে না সরকার। দেশে যে পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করা হয়, তার একটি বড় অংশ ব্যবহার করা হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে। শিল্পকারখানাতেও বিপুল পরিমাণ গ্যাস লাগে। লাইনে গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় শিল্পকারখানাতেও উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
চলমান পরিস্থিতিতে লোডশেডিংয়ের সময় নির্ধারণ করার কাজ চলছে। এরই মধ্যে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের ক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক সময় নির্ধারণ করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ খাতের চলমান সংকট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশে চলমান বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা কমানো এবং ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ চালুর জন্য জনপ্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়। দৈনিক কর্মঘণ্টা ২ ঘণ্টা কমানোর সুপারিশ করা হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশে বিদ্যুতের উৎপাদন (আমদানিসহ) সক্ষমতা আছে ২১ হাজার ৩৯৬ মেগাওয়াট। এর মধ্যে কয়লাভিত্তিক ১ হাজার ৬৮৮ মেগাওয়াট, গ্যাসভিত্তিক ১০ হাজার ৮৭৮ মেগাওয়াট, ফার্নেস অয়েলভিত্তিক ৫ হাজার ৯২৫ মেগাওয়াট, ডিজেলভিত্তিক ১ হাজার ২৮৬ মেগাওয়াট, জলবিদ্যুৎ ২৩০ মেগাওয়াট, আমদানি ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট ও সৌর বিদ্যুৎ থেকে ২২৯ মেগাওয়াট। ৮ জুলাই রাতে গ্যাস দিয়ে অর্ধেকেরও কম অর্থাৎ ৪ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি উৎপাদন করা হয়েছে।
পেট্রোবাংলা ও পিডিবির দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কোনো আভাস মেলেনি। অন্য খাত থেকে কমিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের সরবরাহ কিছুটা বাড়ানোর চেষ্টা করছে পেট্রোবাংলা। দুই দিন পর ঈদের ছুটি শুরু হলে চাহিদা কমতে পারে, এমন আশায় আছেন তারা। বর্ষাকালের বৃষ্টিও বিদ্যুতের চাহিদা কমাতে পারে।
বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় আপাতত গ্যাস আমদানি আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, উন্নত দেশগুলোতেও এখন লোডশেডিং হচ্ছে।
বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমান বলেছেন, ‘ঈদের আগে বিদ্যুৎ সংকট দূর হবে না। সবার এ বিষয়ে দায়িত্বশীল হতে হবে, যাতে আমরা এ বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারি। ঈদের পর থেকে লোডশেডিং কমবে। তখন দোকানপাট, শপিংমল আবারও রাত ৮টার মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হবে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য এরকম আরও কিছু চিন্তাভাবনা হচ্ছে।’
গ্যাস সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় চলতি মাসের শুরু থেকে দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে দেশ। পরিস্থিতি সামলাতে আলোকসজ্জা বন্ধসহ বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। তবে, লোডশেডিং তেমন কমেনি।
এর মধ্যে আজ শনিবার শুরু হচ্ছে ঈদের ছুটি। গার্মেন্টসসহ সব কলকারখানা গতকাল শুক্রবার থেকেই বন্ধ। ফলে গ্যাস-বিদ্যুতের চাহিদা কমবে বলে মনে করছে সরকার। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস বেশি দিতে পারবে পেট্রোবাংলা। তাই, লোডশেডিং সহনীয় মাত্রায় থাকবে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
তবে, সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকাসহ বিভিন্ন শিল্প এলাকায় চাহিদা কমলেও বাড়িমুখী মানুষের কারণে গ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে। কিন্তু, গ্রামাঞ্চলে বিতরণ ব্যবস্থা মানসম্মত না হওয়ায় অতিরিক্ত লোড বহন করতে পারবে না। এতে লোডশেডিং করতে বাধ্য হবে বিতরণ কোম্পানিগুলো। তীব্র গরমে লোডশেডিং জনজীবনে ভোগান্তি বাড়িয়ে দেবে।
বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের গড় চাহিদা সাড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। সেখানে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সরবরাহ করছে গড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট।
তবে, গ্যাসের যে সংকটের কথা বলা হচ্ছে, অনেকেই এরসঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। তারা বলেছেন, আমাদের সিস্টেমে কমবেশি ৩ হাজার এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২৩০০ এমএমসিএফডি দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে পাওয়া যাচ্ছে। বিদেশ থেকে গড়ে প্রায় ৮০০ এমএমসিএফডি গ্যাস আমদানি করা হতো।