গণতন্ত্র ও মানবাধিকার : বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের দুই অগ্রাধিকার
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০:১১ পিএম, ৭ জুলাই,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:৫৬ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
ঢাকা-ওয়াশিংটন অংশীদারিত্বকে আরও শানিত করতে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার এই দুই ইস্যুকে অগ্রাধিকারে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের শ্রমমানের উন্নতি, ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা ও মহামারি সামাল দেয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে নিরবচ্ছিন্ন সহযোগিতা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রটি। ওয়াশিংটন প্রণীত রাষ্ট্রভিত্তিক সমন্বিত কৌশল বা আইসিএস-এ বাংলাদেশ নিয়ে এমন পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং দেশগুলোর জোট জাতিসংঘের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আগামী দিনের সম্পর্কের ফোরকাস্ট হচ্ছে ওই আইপিএস। যার বাংলাদেশ চ্যাপ্টারে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক কেমন হবে তার বর্ণনা দেয়া ছাড়াও আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পাশাপাশি বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অবদানে সক্ষমতা বাড়ানো এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনে বাংলাদেশকে সহায়তার মতো বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্বের ১৮০টি দেশ এবং ভিয়েনা, রোম ও জেনেভায় অবস্থিত জাতিসংঘের ৩টি মিশনের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (ইউএসএআইডি) সঙ্গে মিলে ইন্ট্রিগ্রেটেড কান্ট্রি স্ট্র্যাটেজি বা আইসিএস নামে ওই পজিশন পেপার তৈরি করা হয়েছে। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত ওই পজিশন পেপারে বলা হয়, একটি দেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে ওই দেশে কর্মরত মার্কিন মিশন প্রধান লক্ষ্য ও পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে আইসিএস বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেবে।
আইসিএস এর বাংলাদেশ চ্যাপ্টারে ৪টি পর্ব রয়েছে। ২১ পৃষ্ঠার ওই পজিশন পেপারের মিশন প্রধানের অগ্রাধিকার, মিশনের কৌশলগত রূপরেখা, মিশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং মিশনের ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যের বিষয়গুলো আলাদা আলাদাভাবে সবিস্তারে উল্লেখ করা হয়েছে। ঢাকায় মার্কিন মিশন প্রধানের প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে বলা হয়েছে, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার জোরালো করতে হবে। কারণ, বাংলাদেশ অধিকতর গণতন্ত্রের পথে হাঁটবে নাকি আরও বেশি স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে উঠবে, তা নির্ধারণের ক্ষেত্রে ২০২৩ সালের নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের নড়বড়ে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক, সহনশীল এবং বহুমতের ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনা জরুরি।
২০২৩ সালের নির্বাচনের আগে গণতান্ত্রিক সংস্কারের অংশ হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংস্কার সুনির্দিষ্টভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাব’র ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তারই অংশ। গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, মৌলিক নাগরিক অধিকারের ওপর বিধিনিষেধের মতো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকারের বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে তরুণ, নারী, শ্রমিক, তৃণমূল পর্যায়ের প্রতিনিধিসহ নাগরিক সমাজের সঙ্গে কাজ করে যাবে।
সমন্বিত মার্কিন কৌশলে ঢাকায় মিশন প্রধানের দ্বিতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে বাংলাদেশের শ্রমমান ও ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা ও মহামারি সামাল দেওয়ার সক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের বাইরে পণ্যের ভবিষ্যৎ বাজার ও বিনিয়োগের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর আগ্রহ ক্রমে বাড়ছে।
যদিও বাংলাদেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে নানা রকম বাধা, ব্যবসা পরিচালনায় নানা রকম চ্যালেঞ্জ এবং কিছু প্রশ্নবিদ্ধ ও অস্বচ্ছ ব্যবসায়িক চর্চা করে থাকে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের কিছু প্রতিযোগী দেশ। কাজেই অর্থনৈতিক ওই সম্ভাবনার পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে হলে বাংলাদেশের শ্রমমানের উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি কর্মপরিবেশের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ও জাতীয় কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী শ্রম খাতের সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে। অবকাঠামোর ক্ষেত্রে ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি বাংলাদেশকে অব্যাহত দুর্নীতি দূর করা, প্রক্রিয়াগত বিষয়ের সমাধান করতে হবে।
উল্লেখ্য, মার্কিন ওই পজিশন পেপারের সঙ্গে চাওয়া-পাওয়ার মিল-অমিল খতিয়ে দেখছে ঢাকা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিষয়টি পর্যালোচনা করছেন জানিয়ে দায়িত্বশীল এক প্রতিনিধি বলেন, এ ধরনের প্রকাশিত পেপার থেকে ভবিষ্যৎ সম্পর্কের রূপরেখা কেমন হবে সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন, শ্রম অধিকার, মানবাধিকার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।