ভ্যাকসিনের দাম নিয়ে বিভ্রান্তি
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১:০১ এএম, ১৫ জানুয়ারী,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:৩৫ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
সরকার এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড আবারও বলছে, ভারত যে দামে কিনবে সেই এই দামে ভ্যাকসিন কিনবে বাংলাদেশ। ফলে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের দাম নিয়ে বিভ্রান্তি থেকেই যাচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট (এসআইআই) ও বেক্সিমকোর সঙ্গে সরকারের যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে তা থেকে বিচ্যুত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন বলেন, কোভিশিল্ডের ভ্যাকসিনের জন্য ভারতের চেয়ে এক পয়সাও বেশি দেবে না বাংলাদেশ।
গত সোমবার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সেরাম বাংলাদেশের কাছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের একটি ডোজ বিক্রি করবে চার ডলারে। ভারত যে দামে ভ্যাকসিন কিনবে তার চেয়ে প্রায় ৪৭ শতাংশ বেশি দাম পড়বে বাংলাদেশের। এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসব কথা বলেন। ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত সরকার ছয় কোটিরও বেশি ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহের আদেশ দিয়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে এই ভ্যাকসিনের ৫০ মিলিয়ন ডোজ মজুত করেছে সেরাম। এর মধ্যে ভারত সরকারের কাছে ২০০ রুপি বা দুই দশমিক ৭২ ডলার দরে ১১ মিলিয়ন ডোজ বিক্রি করার জন্য প্রাথমিক চুক্তি সই করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ভলিউম অনুসারে বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন উৎপাদক প্রতিষ্ঠান সেরাম। রয়টার্সের প্রতিবেদন প্রকাশের পর, বাংলাদেশ ভ্যাকসিনের জন্য বেশি দাম দিচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী এএইচএম মোস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, দাম (বাংলাদেশের জন্য) বেশি কিনা আমি জানি না। ভারত যদি (ভ্যাকসিন) উৎপাদন করে, তবে তাদের উৎপাদন ব্যয় স্বাভাবিকভাবেই কম হবে। যখন তারা ভ্যাকসিন বিক্রি করবে, তখন তারা উৎপাদন খরচের সঙ্গে লাভ যোগ করেই বিক্রি করবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা এটা আশা করতে পারি না যে, উৎপাদন খরচে আমরা ভ্যাকসিন পাব। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে ভ্যাকসিনগুলো কত দামে বিক্রি হচ্ছে তা আমরা দেখব। দু-একটি নয়, বহু দেশ ভ্যাকসিন তৈরি করবে। এক দেশ বেশি দাম চাইলে আমরা অন্য দেশ থেকে আনার চেষ্টা করব। আমাদের সেই বিকল্প আছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমরা আমাদের চুক্তি অনুযায়ী কথা বলব। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ যে দামে ভ্যাকসিন পাবে, আমরাও একই দামে পেয়ে যাব। ভারত যদি আমাদের জন্য নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দামে ভ্যাকসিন পায় তাহলে আমরাও কম দামে ভ্যাকসিন পাব।
তিনি আরও বলেন, ভারত যদি আমাদের চেয়ে কম দামে ভ্যাকসিন পায় তাহলে সেটা আমাদের জন্য সুসংবাদ। আমরা তখন সেরাম থেকে আরও বেশি ডোজ ভ্যাকসিন নেব।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, দাম নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই। চুক্তি অনুযায়ী সব হবে। দাম যত কম হবে আমরা তত বেশি (ভ্যাকসিন) পাব। চুক্তিটি সবার সামনে আনা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, চুক্তিটি প্রকাশ্যেই সই হয়েছে। তিনি দাবি করেন, চুক্তিতে লেখা সবই ইতিমধ্যে জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়েছে। চুক্তির কোনো গোপন ধারা নেই। সরকার, সেরাম এবং বেক্সিমকোর মধ্যে হওয়া ত্রিপক্ষীয় চুক্তিটি সই হয় গতবছর ৫ নভেম্বর। চুক্তি অনুযায়ী, সেরামের কাছ থেকে প্রতি ডোজ চার ডলার হারে তিন কোটি অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন কিনবে বাংলাদেশ। সরকার সম্প্রতি জানায়, ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিনের প্রথম কিস্তি আগামী ২৫ জানুয়ারি দেশে আসবে এবং ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভ্যাকসিন বিতরণ শুরু হবে। প্রতিটি ডোজের জন্য সরকারের খরচ হবে পাঁচ ডলার। চার ডলার ক্রয় মূল্যের সঙ্গে ভ্যাকসিন পরিবহন ও সার্ভিস চার্জ হিসেবে বেক্সিমকোকে দিতে হবে এক ডলার করে। যোগাযোগ করা হলে নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ভারত সরকার যে মূল্যে ভ্যাকসিন পাবে, একই দামে বাংলাদেশ সরকার ভ্যাকসিনটি পাবে। এটা নিয়ে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রতি ডোজ ভ্যাকসিন চার ডলারে কিনছে, তবে এটি একটি সম্ভাব্য দাম। ভারত যদি কম দামে ভ্যাকসিনটি ক্রয় করে, তবে সেরাম আমাদের জন্যও দাম কমিয়ে দেবে। চুক্তি অনুসারে, সেরাম ভারতে যে দামে ভ্যাকসিন দেবে সেই একই দামে আমাদের ভ্যাকসিন দেবে বলে নিশ্চয়তা রয়েছে। (এ থেকে) বিচ্যুতির কোনো জায়গা নেই।
তিনি আরও বলেন, আমরা (ভারতের চেয়ে) এক পয়সাও বেশি দেব না। এখনও যেহেতু আমরা ভ্যাকসিনের প্রথম কিস্তি পাইনি, তাই চূড়ান্ত দাম কত হবে সে সম্পর্কে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। কারণ ভারত প্রথম কিস্তিতে প্রতি ডোজ ২০০ রুপিতে কিনেছিল এবং এই দাম ২৫০ রুপিতে যেতে পারে।
এ মাসের প্রথমদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিব এবং বেক্সিমকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জোর দিয়ে বলেন, ভারত সরকার যে দামে ভ্যাকসিন পাবে সেই একই দামে ভ্যাকসিন পাবে বাংলাদেশ।
বাজারে ভ্যাকসিন বিক্রি করবে বেক্সিমকো : বাজারে বিক্রি করার জন্য ১০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আমদানি করবে বেক্সিমকো। সেরাম থেকে এই ভ্যাকসিনগুলোর প্রতি ডোজ আট ডলারে কিনছে বেক্সিমকো।
নাজমুল হাসান পাপন বলেন, এই ডোজগুলোর মধ্যে আট লাখ ডোজ কেনার জন্য বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে অর্ডার দিয়েছে। তিনি জানান, সরকারের ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর তারা এই ভ্যাকসিন বিক্রি করবে। বেক্সিমকোর চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজা বলেন, বাজারে বিক্রির জন্য ভ্যাকসিনের দাম নির্ধারণ করা হয়নি। ভ্যাকসিন আসার পর ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর এর মূল্য নির্ধারণ করবে বলে তিনি জানান।
তিনি আরও জানান, বেক্সিমকো আরও ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন কেনার জন্য ইতিমধ্যে সেরামকে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। যোগাযোগ করা হলে, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, বাজারে বিক্রি করার জন্য ভ্যাকসিনের দাম সরকারি আইন অনুযায়ী চূড়ান্ত করা হবে।