অস্তিত্ব সংকটে কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চলের তাল গাছ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৮:১৭ পিএম, ১২ জানুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:৩৬ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চলের লাকসাম, লালমাই, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলায় এককালের গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী রসের খনি খ্যাত তাল গাছ বর্তমানে কালের আবর্তে হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এ তাল গাছ একসময় খাল-বিল, পুকুর, নদীর পাড়সহ বাড়ীর আঙ্গিনায় দেখা যেতো। তালগাছ প্রকৃতির বন্ধু হিসাবে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা জানে না। তবে বর্তমান সরকার সম্প্রতি কৃষি ও বন বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে তালগাছ রোপন ও সংরক্ষনে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র মতে, কবিরা লিখেছেন, তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে, উকি মারে আকাশে.., ঐ দেখা যায় তাল গাছ, ওই আমাদের গাঁ, ঐখানেতে বাস করে কানা বগার ছাঁ। এ অঞ্চলে সাধারনত পুরুষ ও স্ত্রী প্রজাতি দু’ধরনের তাল গাছ পাওয়া যেতো। স্ত্রী প্রজাতির তাল গাছে নানা ধরনের ছোট-বড় বিভিন্ন রংয়ের তাল ধরতো। আর পুরুষ প্রজাতির তাল গাছে তালের পরিবর্তে ছোট ছোট দানাওয়ালা লম্বা-গোলাকার এক প্রকার ছড়া বের হতো। যাকে গ্রাম্য ভাষায় তাল গাছের জট বলা হতো। গ্রীস্মের শেষে এবং চলমান শরৎকাল ও শীতকালে ওই তাল গাছের জট বিশেষ পদ্ধতিতে গাঁছিরা কেটে রস সংগ্রহ করতে দেখা যেতো। প্রাকৃতিক দূযোর্গ, বন্যা, জলাবদ্ধতা, জলবায়ু পরিবর্তন ও নানাহ সংকটের কারনে মানুষ এখন আর তাল গাছের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
সূত্রগুলো আরও জানায়, জেলা দক্ষিনাঞ্চলের উপজেলাগুলোর গ্রামগঞ্জে রসালো ফল এ তালের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরী করে হরেক রকম নামে পাঁচটি উপজেলার বিভিন্ন হাটে-বাজারে বিক্রি হতো। তবে তালপাটালি গুড় ছিল এ অঞ্চলের মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় মিষ্টি জাতীয় খাবার। এ রসে আবার কেউ কেউ তাল মিছরি বানাতো যা বিভিন্ন রোগের ঔষুধের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার হতো। জৈষ্ঠ্য-আষাঢ় মাস জুড়ে কাঁচা তালের ভিতরের রসালো শ্বাশ খেতে খুবই সু-স্বাদু। তবে ভাদ্র মাস জুড়ে শিশু-কিশোরসহ সকল বয়সী মানুষের কাছে মৌসুমী ফল পাঁকা তাল মজাদার খাবার হিসাবে পরিচিত। এ পাঁকা তাল থেকে তৈরী করা হয় অত্যান্ত রুচিকর নানা ধরনের পিঠা,পায়েস ও বড়া এবং শীতকালে এ তালের রস ছিল এ অঞ্চলের মানুষের কাছে পরিচিত রসালো খাবার।
জেলার দক্ষিনাঞ্চলের আশি দশকের বয়জেষ্ঠ্য বৃদ্ধ আবদুল লতিফ মজুমদার জানায়, এ অঞ্চলে এ তাল গাছ রন্ধনশালার জ্বালানী ও বসতঘরসহ দোকান-পাট তৈরীতে কাঠ হিসাবে বিভিন্ন সরঞ্জামে ব্যবহৃত হতো। গ্রাম-গঞ্জে কৃষকের লাঙ্গলের ঈশ, নৌকার বৈঠা, পানির তোলার দোন এবং জেলেদের মাছ ধরার ডোঙ্গা ও নৌকাসহ অন্যান্য কাজেও প্রতিনিয়ত এ তাল গাছ ব্যবহার হয়ে আসছে। তালপাতা দিয়ে তৈরী হতো হাতপাখা ও শীতল পাটি অথচ প্রয়োজনীয় এ সম্পদ সংরক্ষনের অভাবে কালের আবর্তে আজ ওই তালগাছ অস্তিত্ব সংকটে পড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে ওইসব পন্য। এখন আর আগের মত তাল গাছ দেখা যায় না। এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যেও তালগাছ রোপন ও সংরক্ষনে তেমন সচেতনতা নেই। তবে বর্তমান সরকার গত বছর ধরে এ রসালো ফল তাল গাছ রোপন ও সংরক্ষনে স্থাণীয় প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরকে জনকল্যান মূলক প্রকল্পের মাধ্যমে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জেলা-উপজেলা বন বিভাগ, কৃষি বিভাগ ও ত্রান-দূর্যোগ দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তাকে মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।