৩০ বছর পানিচুক্তির ২৪ বছরেও চুক্তি অনুযায়ী পানি পায়নি বাংলাদেশ
পদ্মায় পানির প্রাপ্যতা এবারও ১৪ হাজার কিউসেক কম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩৪ এএম, ৪ জানুয়ারী,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:৩৬ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
বাংলাদেশ-ভারত পানি চুক্তির কোন বছরেও চুক্তি অনুযায়ী পানি পায়নি বাংলাদেশ। ৩০ সালা পানিচুক্তি অনুযায়ী পানি না পাওয়ায় ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে পদ্মা গড়াই নদীসহ ১৮ টি নদী পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। পদ্মা নদীতে পানি শূন্যতার কারণে হাডিঞ্জ ব্রিজের ১১টি স্প্যান চরের উপর দাঁড়িয়ে আছে। বৃহত্তর কুষ্টিয়ায় পানির অভাবে কৃষি আবাদে দেখা দিয়েছে মরুময়তা। কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, মাগুড়া ও যশোর জেলার ১৩ টি উপজেলার ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত গঙ্গা পানিচুক্তির দু যুগ পূর্তির বছরেও পদ্মা নদীতে যৌথ পর্যবেক্ষণ দলের পানি পরিমাপ শুরু হচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারতের ছয় সদস্যের বিশেষজ্ঞ টিম শনিবার (২ জানুয়ারি) থেকে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি পরিমাপের কাজ শুরু করছেন। ৩১ মে পর্যন্ত এ পরিমাপ ও পর্যবেক্ষণ চলবে। গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় এবার একই সময়ে পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পয়েন্টে অন্তত ১৪ হাজার কিউসেক পানি কম বিদ্যমান রয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। গঙ্গা চুক্তি অনুযায়ী, পানিপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ শুরু হয় প্রতি বছরের জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে। কিন্তু এবার বছরের প্রথম দিন শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় ২ জানুয়ারি থেকে পানিপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ শুরু করা হচ্ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড পাবনা জানিয়েছে। শনিবার দুপুর নাগাদ হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পর্যবেক্ষণ কাজ শুরু হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উত্তরাঞ্চলীয় পরিমাপ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোর্শেদুল ইসলাম শনিবার সকাল ৯ টায় জানান, ভারত থেকে দুজন আর বাংলাদেশ থেকে চারজনের বিশেষজ্ঞ টিম পর্যবেক্ষণ কাজ করছেন। ভারতের প্রতিনিধিরা হলেন- সেদেশের কেন্দ্রীয় নদী কমিশনের (সিডব্লিউসি) উপপরিচালক (ডিডি) শ্রী ভেংক্টেশ্বর লুই এবং সিডব্লিউসির সহকারী পরিচালক (এডি) নগেন্দ্র কুমার। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে রয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুদ্দিন আহমদ, নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম, নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন মিয়া এবং উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সিব্বির হোসেন। পাউবো উত্তরাঞ্চলীয় পরিমাপ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোর্শেদুল ইসলাম জানান, বর্তমানে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে প্রায় ৮৮ হাজার কিউসেক পানি বিদ্যমান। গত বছর ১ জানুয়ারি থেকে প্রথম ১০ দিনে ফারাক্কা পয়েন্টে গঙ্গায় এক লাখ ৬১ হাজার কিউসেক পানি ছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশের হিস্যা ছিল ৬০ হাজার ৬১ কিউসেক এবং ভারতের ৪০ হাজার কিউসেক পানি। একই সময় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির পরিমাণ ছিল এক লাখ দুই হাজার ৫৭৪ কিউসেক। গত বছরের তুলনায় এবার পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে অন্তত ১৪ হাজার কিউসেক পানি কম বিদ্যমান। মোর্শেদুল ইসলাম আরও জানান, চুক্তির শর্তানুযায়ী ১ জানুয়ারি থেকে প্রতি ১০ দিন পর পর পানি প্রাপ্তির তথ্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে এবং তা ৩১ মে পর্যন্ত চলবে। এদিকে ঈশ্বরদী উপজেলার পদ্মাপাড়ের বাসিন্দারা জানান, গত কয়েক বছর ধরে পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে পানি থাকে না। ব্রিজের ১৫ টি পিলারের মধ্যে ১০ টি পিলারই চরের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। ব্রিজের যে পাঁচ পিলারের নিচে পানি থাকে তার আশপাশে স্থানীয় কৃষকরা আখ, চিনাবাদাম, ধান, গাজরসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেন। এ বছরও কৃষকরা চাষ শুরু করেছেন। আর পানিবিহীন পদ্মার বুক থেকে স্থানীয় বালু ব্যবসায়ীরা বালু কেটে বিক্রি করেন।
এবারও শুরু হয়েছে বালি বিক্রির কাজ। নদীতে পানি কম থাকায় নদী মাছশূন্য হয়ে পড়ছে বলে পেশাজীবী জেলেরা জানান। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ৩০ বছর মেয়াদি পানিচুক্তি স্বাক্ষর হয় ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ভারতের হায়দারাবাদ হাউজে। পরবর্তী বছর ১৯৯৭ সালে ১ জানুয়ারি থেকে দু’দেশের মধ্যে ভারতের অংশে গঙ্গা নদীর পানি ভাগাভাগি চুক্তি কার্যকর শুরু হয়। বাংলাদেশের পক্ষে তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের পক্ষে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়ার মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তির সিডিউল অনুযায়ী প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমের পাঁচ মাস অর্থাৎ ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত এ চুক্তি কার্যকর হবে। পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে এই পানির প্রবাহ পরিমাপ করা হয়। দু’দেশের প্রকৌশলী ও পানি বিশেষজ্ঞরা প্রতি মাসে তিন দফা অর্থাৎ ১০ দিন পর পর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি প্রবাহের পরিমাপ রেকর্ড করে তা যৌথ নদী কমিশনের কাছে উপস্থাপন করেন। যদিও চুক্তি অনুয়ায়ী কোনো বছরেই ভারত বাংলাদেশকে পানি দেয়নি। পানি সমস্যা সমাধানের জন্য ৫০ এর দশকে ভারত যখন ফারাক্কা পরিকল্পনা গ্রহণ করে তখন প্রতিবেশী রাষ্ট্র আজকের বাংলাদেশ ওই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে নিষেধ করে। বাংলাদেশ সে সময় এর প্রতিবাদও জানায়। কিন্তু ভারত আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে একটি আন্তর্জাতিক নদীর উপর বাঁধ নির্মাণ করে। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ানের নিকট তিলকডাঙ্গা নামক স্থানে গঙ্গা নদীর উপর ভারত সরকার যে বাঁধ নির্মাণ করে তাই ফারাক্কা বাঁধ নামে পরিচিত। ১৯৭৪ সাল থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ওই বাঁধ চালু হয়েছে। প্রায় ৭৩ বছর আগে ভৌগলিক কারণে গঙ্গা নদীর প্রধান স্রোত ভাগীরথী নদী থেকে পদ্মার দিকে সরে যায়। এর ফলে ভাগীরথী নদীর স্রোত কমে যায়। পদ্মা তখন গঙ্গার প্রধান জলস্রোতে পরিণত হয়। ভাগীরথী নদীতে স্রোত কমে যাওয়ায় সেখানে পলিমাটি জমতে থাকে। এতে কলিকাতা বন্দরে জাহাজ ও নৌ চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। এই প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্যই ভারত সরকার ফারাক্কা বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা করে। ভারত নানান পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে এর কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৭০ সালে ফিডার খাল ছাড়া ফারাক্কা বাঁধের কাজ শেষ করে। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে ৪১.৮৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ভাগীরথী নদীর সাথে একটি ফিডার ক্যানেল নির্মাণ করে কাজ শেষ করে। ওই বছরের এপ্রিলে ফারাক্কা বাঁধ আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করে। তারা বাংলাদেশকে পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করে আসছে। ফলে দেশের বৃহত্তম গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প, পাবনা সেচ ও পানি উন্নয়ন প্রকল্প, পানাসি প্রকল্প, বরেন্দ প্রকল্পসহ দেশের বৃহত্তম বিভিন্ন প্রকল্পের হাজার হাজার হেক্টর জমিতে আধুনিক প্রযুক্তি ও সেচ পাম্প ব্যবহার করেও জমিতে সেচ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এ বাঁধের মাধ্যমে বাংলাদেশের ৬ কোটি মানুষকে ধুঁকে ধুঁকে মারছে। ভারত কেবল গঙ্গা নদীর উজানে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করেই ক্ষান্ত হয়নি। তারা ৫৪ টি অভিন্ন নদীর মোহনায় মিনি ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে পানির হিস্যা থেকে বঞ্চিত করছে। বর্ষা মৌসুমে ফারাক্কা বাঁধ খুলে দিয়ে বাংলাদেশকে ভাসিয়ে দেয়। আর শুষ্ক মৌসুমে পানি আটকে দিয়ে পানিশূন্য করে এদেশকে মরুভূমিতে পরিণত করে। ফারাক্কা বাঁধের কারণেই দেশের উত্তর, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সকল নদী ধ্বংসের মুখে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। জলবায়ুর উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ২৫২ টি নদীর মধ্যে ২০০ টি নদীই পানিশূন্য। কৃষি আবাদেরও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এ বিষয়ে হক্কানী দরবারের পরিচালক এম খালিদ হোসাইন সিপাহী বলেন, বাংলাদেশ অনেক আশা ভরসা করে বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের সাথে ৩০ সালা পানি চুক্তি করেছিল। চুক্তির পর থেকে আজ পর্যন্ত চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি পায়নি। যখন বাংলাদেশের পানি প্রয়োজন হয় তখন ফারাক্কার গেট বন্ধ করে দেয়। আর যখন পানির প্রয়োজন নেই তখন বর্ষাকালে ফারাক্কার গেট খুলে দিয়ে এদেশের মানুষকে ডোবায়। তাই চুক্তি করেও সোনার বাংলা কোন ফল পায়নি। এসব বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ জাতিসংঘে অভিযোগ করে। ১৯৭৬ সালে চুক্তি অনুযায়ী পানি না দিলে কুষ্টিয়াসহ দেশের ১৫ সটি জেলা পানিশূন্য হয়ে পড়ে। পানির ন্যায্য দাবি আদায়ে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ঢাকা থেকে ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চ করে। ফারাক্কা বাঁধের এ সমস্যা সমাধানের জন্য আব্দুল হামিদ ভাসানী যে আন্দোলন গড়ে তোলেন। ফারাক্কা সমস্যার সমাধানে এদেশের মানুষ আজও মে মাসের ১৬ তারিখে ফারাক্কা দিবসটি পালন করে। এদেশের মানুষের আন্দোলনের মুখে ১৯৭৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে চুক্তি করা হয়। পরবর্তীতে দাবি আদায়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিশ্ব জনমত লাভের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালান। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নতুন কৌশলও অবলম্বন করেন। গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেন।
জানা যায়, ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বৃহত্তর ৮ টি জেলার ৬১ লাখ ৪০ হাজার একর কৃষি জমিসহ দেশের সর্ববৃহৎ গঙ্গা কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের ৩ লাখ একর জমিতে আধুনিক চাষাবাদ সেচ সুবিধা প্রদান, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, খরা মৌসুমে লবণাক্ততা রোধে ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর স্বাভাবিক রাখতে ১৯৬৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষজ্ঞ দল গঙ্গাবাঁধ নির্মাণের জন্যে পর্যবেক্ষণ শেষে নির্মাণকাল নির্ধারণ করে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধার্য করা হয় ৭ হাজার ৩’শ ২৫ কোটি টাকা। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশের পক্ষে এ বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন অসম্ভব হয়ে পড়ে। কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, ফরিদপুর, রাজশাহী ও পাবনার উপর দিয়ে প্রবাহিত প্রায় ২৯ টিরও বেশি নদী, হাজার হাজার পুকুর, অসংখ্য খাল বিল বাঁওড় খরা মৌসুমে পানি শূন্য হয়ে পড়ে। ১৯৮০ সালের প্রথমদিকে তৎকালীন বিএনপি সরকার গঙ্গাবাঁধ নির্মাণ করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তৎকালীন বিদ্যুৎ পানি সম্পদ ও বন্য নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী কাজী আনোয়ার-উল হক ১৯৮০ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থানার বাহিরচরে গঙ্গাবাঁধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এখানে গেস্ট হাউজ ও প্রকল্পের গবেষণা মডেল তৈরি করেন। সময়ের ব্যবধানে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পদ্মা নদীর ভাঙনে মডেলের কিছু অংশ বিলীন হয়ে গেছে। বাকি যেটুকু রয়েছে তাও গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। তথ্যসূত্রে জানা যায়, ১৯৮০ সালের পরিকল্পনা মোতাবেক গঙ্গাবাঁধের দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করা হয় ৬ হাজার ৯শ ৯০ ফুট। ভারতের ফারাক্কার বিকল্প বাঁধ বা এন্টি ফারাক্কা হিসাবে পরিচিত গঙ্গা ব্যারেজের গেটের সংখ্যা ছিল ১০০ টি । ৬০ ফুট ও ৩৫ ফুট দৈর্ঘ্য প্রস্থ বিশিষ্ট এ সকল গেটে পানির নির্গমন ক্ষমতা ধরা হয়েছিল ২৫ লাখ কিউসেক।
একই সাথে বিশাল জলধারা সৃষ্টি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। গঙ্গা ব্যারেজের মূল উদ্দেশ্য ছিল পদ্মা নদীর ডান পাশ দিয়ে বয়ে চলা মাথা ভাঙ্গা, চন্দনা ও গড়াই নদীকে খাল হিসাবে ব্যবহার করে বিস্তীর্ণ এলাকায় সেচ সুবিধা ও পানির হিস্যা পৌঁছে দেয়া। ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ খালের মাধ্যমে গড়াই, নবগঙ্গা, কুমার, চিত্রা নদী, আড়িয়াল খাঁ ও কপোতাক্ষ নদের সারা বছর পানি প্রবাহ ঠিক রেখে এসব এলাকায় চাষাবাদ পদ্ধসঢ়;ঝতির উন্নয়নসহ এ অঞ্চলের পানি প্রবাহ ঠিক রাখার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পটি দীর্ঘ ৪০ বছরেও সম্পন্ন হয়নি। ফারাক্কার বিরূপ প্রভাব ও বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিস্তৃর্ণ এলাকা ও জনপদ রক্ষার জন্য ফারাক্কা বাঁধের বিকল্প হিসাবে গঙ্গাবাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করা আজ এ অঞ্চলের গণমানুষের দাবিতে পরিণত হয়েছে। দেশের বিস্তৃীর্ণ এলাকা প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও মরুময়তা থেকে রক্ষার জন্য এবং কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নের গঙ্গাবাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা এতদাঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি ছিলো।
পানি সমস্যার সমাধানে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে একদিকে গঙ্গাবাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়ন যেমন জরুরি। ভারতের সাথে ৩০ সালা পানি চুক্তিতে তার নিশ্চয়তা বিধান করাও একান্ত জরুরি ছিলো। কিন্তু তা বাস্তবায়নের মুখ দেখলো না বাংলাদেশ। পানি চুক্তির ২৪ বছর পার হলেও চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি না পাওয়ায় ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে এদেশের নদী নালা খাল বিল পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। ভারতের সাথে চুক্তি করে সেই চুক্তি অনুযায়ী পানি না পাওয়ায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হতে শুরু করেছে। হুমকির সম্মুখীন হতে চলেছে দেশের ৫ কোটি মানুষের জীবন। দেশের মাটি ও মানুষের জীবন বাঁচাতে পানি চুক্তির যথার্থ বাস্তবায়ন করে এ সরকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা করবেন এটাই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল মানুষের দাবি।