জনতার খালেদা জিয়া এবং খালেদার জনতা
প্রকাশ: ০১:৫৬ এএম, ১৭ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ১০:১৮ পিএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের বিগত ৫০ বছরে বেগম খালেদা জিয়ার মতো এমন উত্তাল সংগ্রামশীল জনজীবন আর কেউ অতিক্রম করেনি। সন্দেহ নেই সম্মোহনী নেতৃত্বের আবহ ছিল। সেখানে ছিল একই গতিপথ। একই রাজনৈতিক তরঙ্গ। যে জিয়াউর রহমানের উত্তরাধিকার তিনি বহন করেন, সেখানেও ছিল আরেক শৃঙ্খলা। আরেক গতিময় জীবন। উভয় ক্ষেত্র থেকেই বেগম খালেদা জিয়ার জীবন ভিন্নতর, অথচ একই উৎস থেকে উৎসারিত। বলতে গেলে, তাঁর জীবন বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ। গৃহবধূ থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নেতৃত্বে আসীন হওয়ার ঘটনা পৃথিবীতে হয়তো আর নেই।
রাষ্ট্রনায়ক স্বামীর প্রেক্ষাপটে নয়, নেতৃত্বের সংকটে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাঁর নেতৃত্বের প্রতিষ্ঠা। এটিও একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। রাজনৈতিক জীবনে তাঁর ক্ষমতা দল, গোষ্ঠী, আমলা বা ষড়যন্ত্রের আকড়ে বিস্তৃত নয়। এই ক্ষমতা জনতা থেকে উৎসারিত। তাঁর রাজনৈতিক আদর্শ, কর্মসূচী ও কর্মকৌশল আবর্তিত, বিবর্তিত ও পরিচালিত হয়েছে জনতা নির্ভরতায়। তাই বলা হয়, খালেদা জিয়া হয়েছেন জনতার এবং জনতা হয়েছে খালেদা জিয়ার। কোটি কোটি মানুষের এই মহীয়ষী নেত্রী এখন যে নিপীড়িত জীবন যাপন করছেন তাও পৃথিবীতে বিরল। নেলসন মেন্ডেলা অথবা নিকট অতীতের গান্ধী-নেহেরু-মুজিব কারাবরণ করেছেন উপনিবেশিক অথবা অভ্যন্তরীণ উপনিবেশবাদের কাছে। আর খালেদা জিয়া বন্দি জীবন যাপন করছেন স্বদেশের সগোত্রের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের হাতে। তৃতীয় বিশ্বে এই নির্যাতনের বিষয়টি অসম্ভব নয়। কিন্তু অসম্ভব হচ্ছে তার তীব্রতা-ব্যাপকতা। উপনিবেশিক আমলে ‘রাজবন্দী’ এর মর্যাদায় ও সীমাবদ্ধতায় ন্যায় বিচার পাওয়ার প্রত্যাশা ছিল। এখনকার ক্ষমতা কাঠামোয় তা দূরাশা। রাজনেতিক প্রতিদ্বন্দ্বীতা শত্রুতায় পর্যবসিত হয়েছে। অবশেষে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাড়িয়ে বঞ্চিত হচ্ছেন মৌলিক মানবাধিকার থেকে। যে খালেদা জিয়া জনতার, তিনি বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেত্রী। কোন পর্যায় বা কোনভাবেই কোন নির্বাচনেই তিনি পরাজিত হননি। জনতার আবেগমন্ডিত সর্বোচ্চ ভালোবাসা অর্জন করেছেন তিনি। তাঁর সেই জনতা এখন শক্তির শাসনে নিষ্পিষ্ট।
অস্বীকার করার উপায় নেই, জিয়াউর রহমানের উত্তরাধিকার ধারণ করেন তিনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, যেখানে জিয়ার শেষ, সেখান থেকেই খালেদা জিয়ার শুরু। দুজনের জীবনের গতি এবং ছন্দ একইরকম। স্বাধীনতার যুদ্ধকালে জিয়াউর রহমান ঝাপিয়ে পড়েছিলেন সম্মুখ সমরে। সে সময়ে শিশু সন্তান নিয়ে বন্দি ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। রাজনৈতিক নিপীড়নের অভিজ্ঞতা সেখানেই শুরু। যে ঝুঁকি ও সাহস নিয়ে তিনি ন’মাসের মুক্তিযুদ্ধ অতিক্রম করেছিলেন, তা বিরল। তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বন্দীদশা যদি মহিমান্বিত হয়, তাহলে খালেদা জিয়ার বন্দিদশাও ত্যাগের ও মহত্বের। বরাবরই মুক্তিযুদ্ধকে জিয়াউর রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়া শ্রেষ্ঠতম অর্জন মনে করেছেন এবং স্বাধীনতার চেতনায় অঙ্গিকারবদ্ধ থেকে সবসময়। যখন তিনি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আপোষহীন নেত্রী অথবা জাতির সর্বোচ্চ কর্ণধার তখনও কাজে কর্মে লক্ষ্যে ও উদ্দেশ্যে উদ্ভাষিত হয়েছে স্বাধীনতার চেতনা। রাজনীতি করেছেন জনতার জন্য। সে রাজনীতিতে মুখ্য হয়ে উঠেছে জনগণের জীবন স্বাধীনতা ও উন্নয়ন। জিয়াউর রহমান যেমন সচেষ্ট ছিলেন জনগণের জীবনকে নৈতিক ও কর্মচঞ্চল করে তুলতে, তেমনি খালেদা জিয়া সবসময় ছিলেন সেই অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সুদৃঢ়। জিয়াউর রহমান জনতার ঐক্যে বিশ্বাস করতেন। জাতীয় ঐক্য গড়নে একের পর এক সমন্বয় ও ঐক্যের উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। সেখানে বাধ সাধেনি ডান অথবা বাম। মুজিব নগরীয় অথবা অমুজিব নগরীয় বিরোধের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়নি। পূর্ব পশ্চিম অথবা লাল-নীলে বিভক্ত করেননি সমাজকে।
বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতার বাইরে অথবা ভিতরে কখনো ভেদ-বুদ্ধিকে প্রশ্রয় দেননি। অভিন্ন জাতীয় ঐক্যের দ্বারা অর্জন করতে চেয়েছেন অভিষ্ট লক্ষ। দুজনের ঐক্যের সুর ও ছন্দ ছিল একই রকমের। আরেকটি বিষয়ও দুজনের অপূর্ব মিল পাওয়া যায়। বলা যেতে পারে সংকটের নেতা তারা। জিয়াউর রহমান যেমন পেশাগত নেতা না হয়ে দেশপ্রেমের অপূর্ব তাগিদে ঘোষনা করেছিলেন স্বাধীনতা, আবার ৭ নভেম্বরের সংকটসময় সময়ে দিয়েছিলেন জাতির নেতৃত্ব, তেমনি বেগম খালেদা জিয়া নেতৃত্ব দিয়েছিলেন স্বৈরাচার বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে। আর এখনও বিকারগ্রস্ত ব্যক্তিতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন নিরন্তর। অবশ্যই এ লড়াই জনতাকে নিয়ে, জনতার জন্য এবং জনতার লক্ষ্যে। কাকতালীয় হলেও এটিই বাস্তব সত্য যে, গণতন্ত্রের সংগ্রামেও জিয়াউর রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়া পালন করেছেন অভিন্ন ভূমিকা। জিয়াউর রহমান একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থাকে বাতিল করে পুন:প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বহুদলীয় গণতন্ত্র। খালেদা জিয়া জাতীয় ঐকমত্যের প্রতিধ্বনী করে পুন:প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সংসদীয় গণতন্ত্র। ‘আমাদের জাতীয় জীবনে এখন পর্যন্ত যা কিছু গৌরবজনক অর্জিত হয়েছে তার প্রায় প্রত্যেকটিতেই রয়েছে তাঁর এবং তাঁর পরিবারের স্পর্শ’। (এমাজউদ্দিন আহমেদ, ২০১৮:১৩)। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা একটি ব্যতিক্রমী বিষয় হলেও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে প্রবর্তন করেছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। এটি জাতির জন্য একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা যে, যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য রক্ত ঝরালেন, তারাই ঐ ব্যবস্থা বাতিল করলেন। ক্ষমতায় থাকতে এক, আবার ক্ষমতায় না থাকতে আর এক। ‘সত্যিই সেলুকাস কী বিচিত্র এ দেশ’। বিচিত্র ছলনাময় সে রাজনীতি। (আকবর আলী খান)
বেগম খালেদা জিয়া তাঁর কর্ম আদর্শের মধ্য দিয়ে হয়ে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশ রাজনীতির প্রধান চরিত্র। আন্দোলন-সংগ্রাম অতিক্রম করে যখন তিনি ক্ষমতার পাদপীঠে উত্থিত হলেন, তখন তা নিবেদিত হলো জনতার জন্য। তাঁর ক্ষমতার রাজনীতি শুধু ক্ষমতার জন্যই ছিল না, তা ছিল জনগণের জীবন, স্বাধীনতা ও উন্নয়নের জন্য। বাংলাদেশের জনগণের বিশ^াস ও জীবনবোধ প্রতিফলিত ছিল তাদের জীবনে। বাংলাদেশের মানুষ মধ্যপন্থী। তারা মোল্লাতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। নাস্তিকতন্ত্রেও না। জনগণের নাড়ির টান অনুভব করেছিলেন জিয়াউর রহমান। সংবিধানে বিসমিল্লাহ সংযোজন, আল্লাহর প্রতি গভীর আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন ও মুসলিম বিশ্বের সাথে বিশেষ সম্পর্কের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা সংযোজন করেছিলেন জিয়াউর রহমান। বেগম খালেদা জিয়া তাঁর সেই ইসলামী মূল্যবোধের ভারসাম্যপূর্ণ রাজনীতিকে কুসুমিত করেছেন, সুশোভিত করেছেন। জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি যে জাতীয়তাবাদ, তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জিয়াউর রহমানের দূরদর্শী রাষ্ট্রচিন্তার প্রতিফলনে। এই জনপদের ভাষা, ধর্ম, বর্ণ, জাতিসত্তা, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি নির্বিশেষে সবার ঐক্যের প্রতিফলন ঘটেছে ইতিহাসের ক্রমধারায় বাংলাদেশের ভৌগলিক সত্ত্বায়। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে জাতির পরিচিতির সংকটের সুষম সমাধান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। বেগম খালেদা জিয়া জনগণের এসব বিশ্বাসকে লালন, পালন ও ধারন করেন।
জিয়াউর রহমান রাজনীতিকে ধনিক-বণিক শ্রেনীর হাত থেকে তুলে দিতে চেয়েছিলেন সাধারন মানুষের কাছে। আমি রাজনীতিকে কঠিন করে তুলবো কথার অর্থ ছিল- শহুরে, আয়েশী, বিলাসী এবং গণবিরোধী রাজনীতিকদের জন্য রাজনীতিকে আসলেই কঠিন করে তুলবো। রাজনীতিতে সততা, সাহস ও নৈতিকতার সংমিশ্রন ঘটিয়েছিলেন তিনি। রাজনীতি মানেই ছল-চাতুরী, এ কথায় বিশ্বাস করতেন না জিয়াউর রহমান। গেম খালেদা জিয়াও তাঁর রাজনৈতিক কৌশলে সহজ-সরল পথ বেছে নিয়েছিলেন। ১৯৮৬ সালে যখন তাঁর প্রতিপক্ষ স্বৈরাচারের সাথে আপোষ করে নির্বাচনে যায়, তখন খালেদা জিয়াকেও বস্তা বস্তা টাকা ও ক্ষমতার লোভ দেখানো হয়েছিল। তিনি লোভ ও ভীতিকে অস্বীকার করে অবশেষে বন্দি জীবন বেছে নিয়েছিলেন। আবার একই সত্যের স্ফুরণ দেখি ১/১১ নাটকের অবশেষে। একইভাবে একই প্যাকেজ দিয়ে দেওয়া হয়েছিল উভয় নেত্রীকে। কেউ তা গ্রহণ করেছিলেন, কেউ তা গ্রহণ করেননি। সেই অন্যায় অনিয়মকে মেনে না নেওয়ার পরিণতিতে তিনি পরাজিত হলেন। সেই একই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে তিনি বিশ্বাস করেছিলেন সত্যিই একটি গ্রহনযোগ্য নির্বাচন পরে অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৮ সালে তাঁর প্রতিপক্ষ বলেছিলেন- ‘আমায় বিশ্বাস করুন’। তিনি এবং তাঁর দল এখন বিশ্বাসের পরিণতি ভোগ করছেন। পরবর্তীকালে যখন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশী পাঠিয়ে রাজনীতি পরিত্যাগ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তিনি তা গ্রহণ না করে মামলার মোকাবেলা করেছিলেন। মামলার মোকাবেলা করে তিনি অন্যায় দন্ড মাথা পেতে নিলেন। কারাগারে যাওয়ার সময় নেতাকর্মীদের শান্ত থাকতে বললেন। নিয়মতান্ত্রিকতার দীক্ষা দিলেন। তাঁর বিশ্বস্ত মানুষেরা তাঁর বিশ্বাসকে ধারন করেছে।
নেতানেত্রীরা সরকারের লোভ-লালসা ও নিপীড়ন নির্যাতন সত্ত্বেও বিভাজিত হয়নি। শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকেছে এক ও অভিন্ন। এমনকি তৃণমূলের সাধারন কর্মী-সমর্থকরাও হাজার হাজার মামলার ৩৫ লক্ষ আসামী হওয়া সত্ত্বেও আত্মসমর্পন করেনি।
বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ইতিহাসেও বেগম খালেদা জিয়া একটি অনন্য নাম। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। দেশের সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য নির্বাচনে ১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকার গঠন করে। বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে এই ৫ বছরে বাংলাদেশে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধিত হয়। ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার নিয়মতান্ত্রিক সমাধানের লক্ষ্যে ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদের ষষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বেগম জিয়া ২য় বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তিনি জাতিকে প্রদত্ত ওয়াদা মোতাবেক আরেকটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। ঐ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় লাভ করে। বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবে সকল মত ও পথকে সমন্বিত করে বেগম খালেদা জিয়া যথার্থ ভূমিকা পালনের চেষ্টা করেন। তাঁর নেতৃত্বে চার দলীয় জোট আত্নপ্রকাশ করে। পরবর্তী ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ও চার দলীয় জোট বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করে। তৃতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন বেগম খালেদা জিয়া। এই দুই সময়কালে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটে। প্রাথমিক শিক্ষার পরিসর সম্প্রসারিত হয়। নিরক্ষতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অভিযান পরিচালিত হয়। মাধ্যমিক স্তরে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়। এই সরকার জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয়ে স্থাপিত হয়। এর মাধ্যমে দূরশিক্ষণ এর প্রবর্তন ঘটে। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রাইভেট বিশ^বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। একটি সময়োপযোগী শিক্ষানীতি প্রনয়নের লক্ষ্যে বেগম খালেদা জিয়ার সরকার একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করে। চার দলীয় সরকারের শাসনামলে মাদ্রাসা শিক্ষার মান উন্নোয়ন ঘটে। বেগম জিয়ার শিক্ষা ক্ষেত্রে যুগান্তকারী চেষ্টার মধ্যে নারী শিক্ষার প্রচলনে উপবৃত্তি ব্যবস্থা প্রচলন অন্যতম। এ সময়ে নারী শিক্ষার প্রসারে মাধ্যমিক স্তরে বিনা বেতনে শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। এই সময়কালে নকলমুক্ত শিক্ষাঙ্গন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সফলতা অর্জিত হয়। কম্পিউটার শিক্ষার প্রচলন করা হয়। বেসরকারী শিক্ষকদের উৎসব ভাতা প্রদান করা হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য ৩% নারী কোটা বরাদ্দ ও অন্যান্য সুবিধা প্রদান করা হয়। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ উন্নয়ন সাধিত হয়। অব্যাহতভাবে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে লোকসানের বোঝা কমানোর জন্য বেসরকারীকরন কমিশন গঠন করা হয়। বেসরকারী খাতে অবকাঠামো নির্মাণের জন্য নির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণিত হয়। তথ্য ও প্রযুক্তি উন্নয়ন সংক্রান্ত জাতীয় নীতিমালা গৃহিত হয়। বিনিয়োগ বোর্ড গঠিত হয়। পুঁজিবাজার সংস্কারের লক্ষে সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন গঠিত হয়। দারিদ্র বিমোচনের জন্য দীর্ঘমেয়াদী রূপকল্প (পিআরএসপি) গৃহিত হয়। সে সময়ে দারিদ্র বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকার স্বীকৃতি স্বরূপ ড. ইউনুসের গ্রামীন ব্যাংকে সকল সহায়তা দেয়া হয়। এসব কাজের ফলে দারিদ্র সীমা কমে আসে। ১৯৯০ সালে দারিদ্রের হার ছিল ৫৭%। ২০০০ সালে সেটি ৪৯% নেমে আসে। ২০০৫ সালে দারিদ্রের হার আরো কমে গিয়ে হয় ৪০%। বাংলাদেশের এই বিস্ময়কর সাফল্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে। ২০০৬ সালে বেগম খালেদা জিয়ার ছবিসহ টাইম ম্যাগাজিন ‘বাংলাদেশ পুনর্গঠন’ শিরোনামে কভার স্টোরি করে। গোল্ডম্যান স্যাক্সের রিপোর্টে বাংলাদেশ একটি অতি অগ্রগতি সম্পন্ন দেশরূপে চিহ্নিত হয়। বিশে^র সবচেয়ে প্রাচীনতম রবিবাসরীয় সংবাদপত্র দ্য অবজার্ভার বেগম খালেদা জিয়াকে বিশে^র অন্যতম প্রভাবশালী নারী হিসেবে উল্লেখ করে। দেশের জিডিপি ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পায়। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবদান এখন সুদৃঢ়। এর সূচনা ঘটে শহীদ জিয়ার মুক্ত অর্থনীতি প্রবর্তনের ফলে। বেগম জিয়া তাঁর শাসন আমলে আরও উদার ও কার্যকর করে তোলে। খালেদা জিয়ার শাসনামলে ডাল-ভাত কর্মসূচী জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
গত কয়েক দশক ধরে বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের আতিœক ও জাগতিক উন্নয়নের জন্য অব্যাহত চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বিএনপি এর দায়িত্বভার গ্রহনকাল থেকে এ পর্যন্ত তিনি যে সাহসী ও সমন্বয়ধর্মী নীতি ও কর্মসূচী গ্রহন করেছেন, তার ফলে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল মধ্যপন্থী মুসলিম জাতি হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে। গণমাধ্যম কখনো কখনো তাকে ‘জাতীয়তাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। তাঁর সময়কালে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের লালন-পালন ও অর্জনে এই অভিধা আরো যৌক্তিক প্রমাণিত হয়েছে। ধর্মীয় ক্ষেত্রে ইসলামী মূল্যবোধের কথা বলা হলেও বেগম খালেদা জিয়া ও তাঁর সরকার সকল ধর্মের প্রতি সমান আচরণ করেছেন। তাঁর ১০ বছর সময়কালে তেমন কোন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বা হাঙ্গামা ঘটেনি। পরবর্তীকালে বাংলাদেশে যখন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ব্যতিক্রম ঘটে তখনই বেগম খালেদা জিয়া অনুসৃত নীতির প্রমাণ্য উদাহরণ সৃষ্টি হয়। তাঁর ‘দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’ আন্দোলন সমগ্র জাতির প্রতি ও তাঁর জনতার প্রতি অকুণ্ঠ আনুগত্য ও প্রতিজ্ঞার উদাহরণ। দেশের মানুষ অর্থাৎ খালেদা জিয়ার জনতা তাঁকে ভালোবাসে। তাই দেশজুড়ে আবেগময় ভালোবাসার প্রমাণ মেলে সর্বত্র। আবার তিনিও যে তাঁর জনতাকে ভালোবাসেন তার প্রমাণ পাওয়া যায়, এই সংকট-সংকুল সময়ে তাঁর সাহসী উচ্চারনে। তাঁর নেতৃত্ব ‘আকাশের মতো উদার, সমুদ্রের মতো গভীর এবং মাটির মতো সহিষ্ণু’। তাই আপামর জনতার প্রার্থনা ‘যুগ যুগ জিও তুমি খালেদা জিয়া’।