আলফাডাঙ্গার পাঁচুড়িয়ার চাঁদড়া জমিদার বাড়িটি সংষ্করণ অভাবে জরাজীর্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫৪ পিএম, ৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:০০ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
ফরিদপুরের আলফাডা উপজেলাধীন খান বাহাদুর জমিদার বাড়িটি পরিবারের উদ্যোগে সংষ্কার করে দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। কিন্ত প্রায় ৮৩ বছর আগে জমিদার প্রথা চালু কালে প্রায় একই সময় নির্মীত ঐতিহাসিক পাচুড়িয়া চাঁদড়া জমিদার বাড়িটি সংষ্করণের অভাবে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে।
১৯৩০-১৯৩৮ সালের দিকে এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত করেন গির্জাকণ্ঠ মুখোপাধ্যায়। গির্জাকণ্ঠ মুখোপাধ্যায় প্রথমে মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার নায়েব ছিলেন। তিনি নায়েব থাকা অবস্থায় তিনি অনেক অর্থ সম্পদের মালিক হন। পরে পাচুড়িয়ার চাঁদড়া গ্রামে জমিদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। জমিদারের ৩ ছেলে ছিল, বড় ছেলের নাম ব্যাচা মুখোপাধ্যায়, ছোট ছেলে শিবু প্রসাদ মুখোপাধ্যায় এর নাম জানা গেলেও মেঝো ছেলের নাম অজানা। তবে কেশব চন্দ্র নামে জমিদারের একজন লেখক ছিলেন।
তখনকার সময় জমিদার বাড়িটির অবস্থান ছিল মধুমতি নদীর তীরে এবং সেখানে ছিল একটি ঘাট। সেই সুবাধে জমিদার বাড়িটির কয়েকটি বড় বড় নৌকা ছিল। যেগুলো জমিদারদের চলাচল এবং তাদের মালামাল পরিবহনে ব্যবহার করা হতো। জমিদার গির্জাকণ্ঠ মুুখোপাধ্যায় তখনকার সময় তার বাড়ির সামনে একটি হাট বসান তবে এখন আর সেখানে হাট বসেনা।
জমিদারের নামানুসারে নদীয়ার চাঁদ বাজারের পশ্চিম পাশের নাম গির্জার চর। তবে ঐতিহাসিক ভাবে নদীয়ার চাঁদ ঘাটের আর একটি নাম করণ রয়েছে এখানে নদীয়ার চাঁদ নামে এক ব্যক্তি যাদু বিদ্যা শিখে তার মাকে বলে ছিলেন আমি কুমির হতে পারি। তার মায়ের মন রক্ষা করতে গিয়ে তিনি কুমির হয়ে নদীতে নামার পর আর তিনি পুনরায় মানুষ রুপে ফিরতে পারেননি। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জমিদার গির্জাকণ্ঠ মুখোপাধ্যায় তার পরিবার নিয়ে পার্শ্ববর্তী ভারতে আশ্রয় নেন। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি আর দেশে ফিরে আসেননি।
বাড়িটি দ্বিতল বিশিষ্ট। এই বাড়িটির নিচের তলায় একটি বৈঠকখানা এবং উপরের তলায় শয়ন কক্ষ রয়েছে। পূর্বে উপরের তলায় উঠার জন্য একটি কাঠের হাতল বিশিষ্ট সিঁড়ি রয়েছে। বর্তমানে হাতল ভেঙ্গে গেছে তবে সিঁড়িটি দিয়ে এখনো উপরের তলায় উঠার ব্যবস্থা রয়েছে। জমিদার বাড়িটিতে ১০ কক্ষ, ৫ টি দরজা এবং ১৬ টি জানালা রয়েছে। আগে উপরের তলায় লোহার রেলিং এবং টিনের চালযুক্ত বারান্দা ছিল। কিন্তু এখন আর তা নাই।
জমিদার বাড়িটির উপরের তলায় একটি লোহার সিন্দুক আছে যা সংরক্ষণের অভাবে মরিচা ধরেছে। জমিদার বাড়িটিতে রান্না করার জন্য একটি রান্না ঘর রয়েছে। বর্তমানে এই বাড়ির আঙিনায় পাচুড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
বর্তমান বাড়িটির যে অবস্থা তাতে সংস্করণ না করা হলে যেকোনো সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে। তাই সংশ্লিষ্ট প্রত্নতত্ব বিভাগের কাছে এলাকা বাসীর দাবী উক্ত জমিদার বাড়িটি সংস্করণ করে ওই এলাকার ঐতিহাসিক স্থাপনাটি রক্ষা করবেন।