ফরিদপুরে বাস-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে চি কিৎসকসহ নিহত ২
১১ মাসে সড়কে মৃত্যু ৭৩৭ শিক্ষার্থীর
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২১ এএম, ৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:৪৫ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
সড়কে মৃত্যুও মিছিল থামছেই না। সোমবার ফরিদপুরে বাস-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে চিকিৎসকসহ নিহত ২, দৌলতপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ফরিদপুর : ফরিদপুরে দিগন্ত পরিবহন ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকসহ দুজন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন আরো দুজন চিকিৎসক। তবে ঘাতক বাসটিকে আটক করা সম্ভব হয়নি। আজ সোমবার সকাল ৮টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কানাইপুরের মল্লিকপুর নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, বোয়ালমারী ডা. দিলীপ রায় হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রভাষক ডা. সুব্রত কুমার দাস (৩৫) ও মাইক্রোবাসের চালক মনির হোসেন মঞ্জু (৪০)। তিনি বোয়ালমারী উপজেলার কলিমাঝি গ্রামের সালাম মোল্লার ছেলে। দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়েছেন ডা. দিলীপ রায় হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. প্রণয় কান্তি লস্কর ও আলফাডাঙ্গা কাজী সিরাজুল ইসলাম হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ ডা. সমীর কুমার বালা। আহতদের ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বোয়ালমারী ডা. দিলীপ রায় হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রভাষক ডা. আবুল বাশার জানান, কলেজের অফিসিয়াল কাজে মাইক্রোবাসে ঢাকা যাওয়ার পথে কানাইপুরের মল্লিকপুর নামক স্থানে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা দিগন্ত পরিবহনের সঙ্গে তাদের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রভাষক ডা. সুব্রত কুমার দাস নিহত হন এবং হাসপাতালে নেয়ার পথে মাইক্রোবাসচালক মনির হোসেন মঞ্জু মারা যান। করিমপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল আল মামুন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
দৌলতপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় ১ জনের মৃত্যু : কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় স্বরুপপুর ব্র্যাক পাড়া নামক স্থানে গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় দিকে ইঞ্জিন চালিত অটোরিকশার চাকায় পিষ্ট হয়ে উপজেলা তারাগুনিয়া গ্রামের লন্ডি ব্যবসায়ী নিয়াত আলী (৬৫) মারা যায়। দুর্ঘটনায় নিহত নিয়াত আলী মৃত রিফাজ আলী পুত্র এ ব্যাপারে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
১১ মাসে সড়কে মৃত্যু ৭৩৭ শিক্ষার্থীর : নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনের মধ্যেই গত কয়েক দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় ঢাকায় তিন শিক্ষার্থী মারা গেছেন। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, চলতি বছরের ১১ মাসে সারা দেশে ৪ হাজার ২৬৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ১৪৪ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭৩৭ জনই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী। সে হিসাবে দুর্ঘটনাগুলোতে নিহতদের ১৪ শতাংশই শিক্ষার্থী। শুধু গত নভেম্বর মাসেই সড়কে প্রাণ গেছে ৫৪ ছাত্রছাত্রীর। এমন পরিস্থিতিতে রবিবারও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত ছিল। এদিন রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে মানববন্ধন, কফিন মিছিল ও ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করেন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তী কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার রামপুরা ব্রিজে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি শোক প্রকাশ করবেন তারা। শিক্ষার্থীরা কালো ব্যাজ ধারণ এবং মুখে কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ জানাবেন।
১১ মাসে ৪২৬৮টি দুর্ঘটনায় ৫১৪৪ জনের প্রাণহানি : রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ৪ হাজার ২৬৮টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫ হাজার ১৪৪ জন। নিহতদের মধ্যে ১৪ শতাংশই শিক্ষার্থী। গত ১১ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় সারা দেশে ৭৩৭ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৭৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৮৩, মার্চে ৭২, এপ্রিলে ৬৪, মে মাসে ৮৪, জুনে ৫৩, জুলাইয়ে ৬৮, আগস্টে ৬২, সেপ্টেম্বরে ৬০, অক্টোবরে ৫৮ এবং গত নভেম্বর মাসে ৫৪ শিক্ষার্থী মারা যান।
নভেম্বরে ৩৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১৩ মৃত্যু : রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানায়, গত নভেম্বর মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৭৯টি। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে বেশি। সারা দেশে সড়কে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪১৩ জন, আহত হয়েছেন ৫৩২ জন। এর মধ্যে ১৫৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৮৪ জন, যা মোট মৃত্যুর ৪৪.৫৫ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪১.৬৮ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ৯৬ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২৩.২৪ শতাংশ। এছাড়া নভেম্বরে ৭টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত এবং ৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ১১টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত এবং ২ জন আহত হয়েছেন।
সংস্থাটি আরও জানায়, সড়ক দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৫৬টি (৪১.১৬ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ১৩১টি (৩৪.৫৬ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৫৩টি (১৩.৯৮ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে, ৩৫টি (৯.২৩ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৪টি (১.০৫ শতাংশ) সংঘটিত হয়েছে। দুর্ঘটনাগুলোর ৮৯টি (২৩.৪৮ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৩৩টি (৩৫.০৯ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৯১টি (২৪ শতাংশ) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ৫৯টি (১৫.৫৬ শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ৭টি (১.৮৪ শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঢাকায় : রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যানুসারে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৬.৫৭ শতাংশ, প্রাণহানি ঘটেছে ২৬.৫১ শতাংশ; রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৫.৯৪ শতাংশ, প্রাণহানি ১৩.৪২ শতাংশ; চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৯.৩২ শতাংশ, প্রাণহানি ২১.৮১ শতাংশ; খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ৯.১৭ শতাংশ, প্রাণহানি ৭.৭১ শতাংশ; বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৮.২১ শতাংশ, প্রাণহানি ৬.০৪ শতাংশ; সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৭.২৪ শতাংশ, প্রাণহানি ৭.০৪ শতাংশ; রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ৬.৭৬ শতাংশ, প্রাণহানি ৯.৭৩ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৭.১৬ শতাংশ, প্রাণহানি ৭.৭১ শতাংশ ঘটেছে।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন : রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব সাইদুর রহমান বলেন, সড়কে দুর্ঘটনা কমাতে দক্ষ চালক তৈরি করতে হবে। চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে; বিআরটিএর সক্ষমতা বাড়াতে হবে; পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্বরাস্তা (সার্ভিস লেন) তৈরি করতে হবে; পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে; গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে; রেল ও নৌপথ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে সড়কপথের ওপর চাপ কমাতে হবে; টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে; ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, দেশে বিভিন্ন বিষয়ে আইন আছে; কিন্তু আইনের প্রয়োগ সব সময় হয় না। গাড়ি চালানো অবস্থায় মোবাইল ফোনে কথা বলা নিষিদ্ধ। কিন্তু এটা মানে না চালকরা। এক্ষেত্রে গাড়ি চালানোর সময় চালক ফোন ব্যবহার করলে তাৎক্ষণিক জরিমানা করার জন্য ট্রাফিক পুলিশের ক্ষমতা বাড়াতে হবে। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট আইন করে যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। সরকারি- বেসরকারি পর্যায়ে চালকদের দক্ষতা ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রশিক্ষিতরাই শুধু পেশাদার চালক হিসেবে বিশেষ করে যাত্রীবাহী ও ভারী যানবাহনের ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে পারে। মহাসড়কে নিষিদ্ধ ঘোষিত যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে হবে।