জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রথম রাষ্ট্রপতি
প্রকাশ: ০১:১৪ এএম, ২১ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২০ | আপডেট: ০৮:৩৯ পিএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
শহীদ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান ও একজন বীরউত্তম খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম। যিনি চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেছেন এবং পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। শহীদ জিয়ার জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৯শে জানুয়ারি বগুড়া জেলায়। তিনি করাচি একাডেমী থেকে ১৯৫২ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে ১৯৫৩ সালে করাচিতে ডি. জে. কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে তিনি কাকুল পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশন প্রাপ্ত হন। সেখানে দুই বছর চাকরি করে ১৯৫৭ সালে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে বদলি হন। ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করেছেন স্বাধীনতার এই মহান অধিনায়ক। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে একটি কোম্পানির কমান্ডার হিসেবে খেমকারান সেক্টরে অসীম বীরত্বের পরিচয় দেন জেনারের জিয়াউর রহমান। বীরত্বের জন্য পাকিস্তান সরকার তাঁকে হিলাল-ই-জুরাত খেতাবে ভূষিত করে। ১৯৬৬ সালে তিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে পেশাদার ইনস্ট্রাক্টর পদে নিয়োগ লাভ করেন। সে বছরই তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের কোয়েটার স্টাফ কলেজে কমান্ড কোর্সে যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে তিনি মেজর পদে উন্নীত হয়ে জয়দেবপুরে সেকেন্ড ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড পদের দায়িত্ব লাভ করেন। উচ্চ প্রশিক্ষণের জন্য তিনি পশ্চিম জার্মানিতে যান। ১৯৭০ সালে একজন মেজর হিসেবে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং চট্টগ্রামে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড পদের দায়িত্ব লাভ করেন।
১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ রাজধানী ঢাকায় পশ্চিম পাকিস্তানী বাহিনীর বর্বর আক্রমণের পর জিয়াউর রহমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করে বিদ্রোহ করেন এবং ২৭শে মার্চ তিনি চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। জিয়াউর রহমান এবং তাঁর বাহিনী সামনের সারি থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন। তারা বেশ কয়েকদিন চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হন। ১৭ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হলে তিনি ১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার নিযুক্ত হন। তিনি সেনা সদস্যদের সংগঠিত করে পরবর্তীতে তিনটি সেক্টরের সমন্বয়ে জেড ফোর্সের অধিনায়ক হিসেবে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে জিয়াউর রহমান, যুদ্ধ পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালের জুন পর্যন্ত ১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ও তারপর জেড-ফোর্সের প্রধান হিসেবে তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বের জন্য তাঁকে বীরউত্তম উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১৭ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হলে তিনি ১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার নিযুক্ত হন। স্বাধীনতা যুদ্ধে জিয়াউর রহমান যুদ্ধ পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালের জুন পর্যন্ত ১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ও তারপর জেড-ফোর্সের প্রধান হিসেবে তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমানকে কুমিল্লায় সেনাবাহিনীর ব্রিগেড কমান্ডার নিয়োগ করা হয় এবং ১৯৭২ সালের জুন মাসে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ-অফ-স্টাফ নিযুক্ত হন। ১৯৭৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে ব্রিগেডিয়ার পদে এবং বছরের শেষের দিকে তিনি মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৭৫ সালের ২৫শে আগস্ট জিয়াউর রহমান চীফ অফ আর্মী স্টাফ নিযুক্ত হন। ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর সিপাহী-জনতা বিপ্লবের পর তিনি রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। ১৯শে নভেম্বর ১৯৭৬ সালে তাঁকে পুনরায় সেনাবাহিনীর চীফ অফ আর্মী স্টাফ পদে দায়িত্বে প্রত্যাবর্তন করা হয় এবং উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব দেয়া হয়। জিয়াউর রহমান ১৯৭৬ সালের ৮ই মার্চ মহিলা পুলিশ গঠন করেন, ১৯৭৬ সালে কলম্বোতে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন সম্মেলনে যোগদান করেন এবং বাংলাদেশ ৭ জাতি গ্রুপের চেয়ারম্যান পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৭৬ সালেই তিনি উলশি যদুনাথপুর থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে খাল খনন উদ্বোধন করেন। ১৯৭৬ সালের ২৯শে নভেম্বর তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হন। ১৯৭৬ সালে গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠন করেন, ১৯৭৭ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি একুশের পদক প্রবর্তন করেন। ২১শে এপ্রিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন জিয়া দেশে আবার গণতন্ত্রায়নের উদ্যোগ নেন। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র চালুর সিদ্ধান্ত নেন।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ছিলেন বহু দলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা। তাইতো রাজনীতিতে ঢোকার আগে ১৯৭৬ সালের ১ মে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক বিশাল জনসভায় জিয়া বলেন, বাংলাদেশ আজ সার্বভৌম ও স্বাধীন। এর প্রতি ইঞ্চি মাটি রক্ষায় বাংলাদেশের সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, বিডিআর, পুলিশ ও আনসার, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা এবং দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ প্রস্তুত। মে দিবস উপলক্ষে জিয়াউর রহমান শ্রমিকদের উদ্দেশে একই ভাষণ দেন। জিয়াউর রহমান বলেন, আমরা সবাই শ্রমিক। শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সরকার সর্বাত্মক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, মে দিবসের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবার জন্য সরকার এ আশ্বাস দিচ্ছে যে, শ্রমিকদের স্বার্থ সর্বদাই অক্ষুণ্ন রাখা হবে। জেনারেল জিয়া বলেন, শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য সরকার অব্যাহতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এসবের মধ্যে তাদের স্বাস্থ্য রক্ষার ব্যবস্থা ট্রেড ইউনিয়ন ট্রেনিং, পেশাগত ও কারিগরি, মেধা ও যোগ্যতা বৃদ্ধি, চাকরির নিশ্চয়তা বিধান, পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থা প্রভৃতি রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। জেনারেল জিয়া আত্মনির্ভশীলতা অর্জনের প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘অলসতা দূর করে আমাদের অধিক পরিশ্রম করতে হবে। শতকরা ২০-২৫% উৎপাদন বৃদ্ধির শপথ নিতে হবে। তিনি বলেন, ব্রিটিশ বা পাকিস্তানী আমলে আমরা ৭ ঘন্টা কাজ করতে পারলে নিজেদের দেশ গড়ার জন্যে প্রয়োজনে আমারা ২০ ঘন্টা করে কাজ করতে প্রস্তুত।’ ১৯৭৬ সালের ৬ মে চীনের রাষ্ট্রদূত চুয়াং ইয়েন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্টাফ প্রধান ও উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় চুয়াং বলেন, বাংলাদেশের প্রতি চীনের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। তখন জিয়া বলেন, সমতার ভিত্তিতে সবার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা হবে।
মুক্তিযোদ্ধাদের জাতীয় ভিত্তিতে সংগঠিত করার উদ্দেশ্যে জিয়াউর রহমান একটি স্কিম প্রণয়ন করেন। ১২ জুন ’৭৬ ঢাকায় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় দপ্তর উদ্বোধন উপলক্ষে সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান এক বাণীতে বলেন, যে উৎসাহ-উদ্দীপনা, দৃঢ়তা ও সজাগ দৃষ্টি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুর মোকাবেলা করেছিলেন, তার সদ্ব্যবহার করা হয়নি। পরের দিন বেইলি রোডে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নতুন কার্যালয় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন এবং তাদের দেশগঠনের কাজে নিযুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা শৌর্য-বীর্য ও আত্মত্যাগের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা ইতিহাসে অতুলনীয়। তিনি বলেন, অতীতে নজিরবিহীন স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের খ্যাতিই বিনষ্ট করা হয়নি বরং জাতির মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে যে দেশপ্রেম দিয়ে আপনারা অংশ নিয়েছিলেন, সেই দেশপ্রেম নিয়ে এবার অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে শামিল হবেন। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠা করেন। রাষ্ট্রপতি জিয়া এই দলের সমন্বয়ক ছিলেন এবং এই দলের প্রথম চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এর প্রথম মহাসচিব ছিলেন। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টায় রমনা রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের যাত্রা শুরু করেন। জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘোষণাপত্র পাঠ ছাড়াও প্রায় দুই ঘণ্টা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। মূলনীতিÑবিএনপির লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিক উন্নয়ন, গণতন্ত্রায়ন, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য এবং জনগণের মধ্যে স্ব-নির্ভরতার উত্থান ঘটানো। বিএনপির রাজনীতির মূল ভিত্তি হল-
১. সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র উপর বিশ্বাস, ২. জাতীয়তাবাদ, ৩. গণতন্ত্র, ৪. সমাজতন্ত্র (অর্থনৈতিক ও সমাজিক ন্যায়বিচারের অর্থে)।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য-
(১) বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ-ভিত্তিক ইস্পাতকঠিন গণঐক্যের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় অখন্ডতা ও গণতন্ত্র সুরক্ষিত ও সুসংহত করা।
(২) ঐক্যবদ্ধ এবং পুনরুজ্জীবিত জাতিকে অর্থনৈতিক স্বয়ম্ভরতার মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ, নয়া-উপনিবেশবাদ, আধিপত্যবাদ ও বহিরাক্রমণ থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করা।
(৩) উৎপাদনের রাজনীতি, মুক্তবাজার অর্থনীতি এবং জনগণের গণতন্ত্রের মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচারভিত্তিক মানবমুখী অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জাতীয় সমৃদ্ধি অর্জন।
(৪) জাতীয়তাবাদী ঐক্যের ভিত্তিতে গ্রামে-গঞ্জে জনগণকে সচেতন ও সুসংগঠিত করা এবং সার্বিক উন্নয়নমুখী পরিকল্পনা ও প্রকল্প রচনা ও বাস্তবায়বানের ক্ষমতা ও দক্ষতা জনগণের হাতে পৌঁছে দেওয়া।
(৫) এমন এক সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করা যেখানে গণতন্ত্রের শিকড় সমাজের মৌলিক স্তরে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনে দৃঢ়ভাবে প্রোথিত হয়।
(৬) এমন একটি সুস্পষ্ট ও স্থিতিশীল সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার নিশ্চিতি দেওয়া যার মাধ্যমে জনগণ নিজেরাই তাদের মানবিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতি আনতে পারবেন।
(৭) বহুদলীয় রাজনীতির ভিত্তিতে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত একটি সংসদীয় পদ্ধতির সরকারের মাধ্যমে স্থিতিশীল গণতন্ত্র কায়েম করা এবং সুষম জাতীয় উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি আনয়ন।
(৮) গণতান্ত্রিক জীবনধারা ও গণতান্ত্রিক বিধি-ব্যবস্থার রক্ষাকবচ হিসাবে গণনির্বাচিত জাতীয় সংসদের ভিত্তি দৃঢ়ভাবে স্থাপন করা এবং জনগণের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করা।
(৯) রাজনৈতিক গোপন সংগঠনের তৎপরতা এবং কোন সশস্ত্র ক্যাডার, দল বা এজেন্সী গঠনে অস্বীকৃতি জানানো ও তার বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করা।
(১০) জাতীয় জীবনে মানবমুখী সামাজিক মূল্যবোধের পুনরুজ্জীবন এবং সৃজনশীল উৎপাদনমুখী জীবনবোধ ফিরিয়ে আনা।
(১১) বাস্তবধর্মী কার্যকরী উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাতীয় জীবনে ন্যায়বিচার-ভিত্তিক সুষম অর্থনীতির প্রতিষ্ঠা, যাতে করে সকল বাংলাদেশী নাগরিক অন্ন, বস্ত্র, স্বাস্থ্য, বাসস্থান ও শিক্ষার ন্যূনতম মানবিক চাহিদা পূরণের সুযোগ পায়।
(১২) সার্বিক পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচিকে অগ্রাধিকার দান করা ও সক্রিয় গণচেষ্টার মাধ্যমে গ্রামবাংলার সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা।
(১৩) নারী সমাজ ও যুব সম্প্রদায়সহ সকল জনসম্পদের সুষ্ঠু ও বাস্তবভিত্তিক সদ্ব্যবহার করা।
(১৪) বাস্তবধর্মী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ এবং সুসামঞ্জস্যপূর্ণ শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক স্থাপন এবং সুষ্ঠু শ্রমনীতির মাধ্যমে শিল্পক্ষেত্রে সর্বোচ্চ উৎপাদন নিশ্চিত করা।
(১৫) বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, বাংলাদেশের সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও বাংলাদেশের ক্রীড়া সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও প্রসার সাধন।
(১৬) বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশী জনগণের ধর্ম ইসলাম এবং অন্যান্য ধর্মীয় শিক্ষার সুযোগ দান করে বাংলাদেশের জনগণের যুগপ্রাচীন মানবিক মূল্যবোধ সংরক্ষণ করা, বিশেষ করে অনগ্রসর সম্প্রদায়ের জন্য শিক্ষা সম্প্রসারণ ও বৃহত্তর জাতীয় তাদের অধিকতর সুবিধা ও অংশগ্রহণের সুযোগের যথাযথ ব্যবস্থা করা।
(১৭) পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে জোট নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব, প্রীতি ও সমতা রক্ষা করা। সার্বভৌমত্ব ও সমতার ভিত্তিতে প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে, তৃতীয় বিশ্বের মিত্র রাষ্ট্রসমূহের সাথে এবং ভ্রাতৃপ্রতিম মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে প্রীতি ও সখ্যতার সম্পর্ক সুসংহত এবং সুদৃঢ় করা। ১৯৭৮ সালের ৩রা জুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জিয়াউর রহমান জয়লাভ করেন। এরপর জিয়াউর রহমান মে মাসে ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা এবং আস্থা যাচাইয়ের জন্য ৩০শে মে গণভোট অনুষ্ঠান ও হ্যাঁ-সূচক ভোটে বিপুল জনসমর্থন লাভ করেন।
১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে প্রধান করে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) প্রতিষ্ঠা করেন। ছয়টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় ফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এই নির্বাচনে তিনি ৭৬.৬৭% ভোট পেয়ে বিজয়ী হন এবং রাষ্ট্রপতির পদে নিয়োজিত থাকেন। ১৯৭৬ সালের আগস্টের প্রথম দিকে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশে রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সরাসরি বক্তব্য দেন। ৩ আগস্ট ’৭৬ বঙ্গভবনে পদস্থ কর্মচারীদের সমাবেশে জিয়া বলেন, সরকার দেশে এমন একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সংকল্পবদ্ধ, যে ব্যবস্থা জনগণকে তাদের অধিকার ও ক্ষমতা প্রয়োগের পূর্ণ সুযোগ প্রদান করবে। আমাদের জনগণ দীর্ঘকাল ধরে শোষণ ও দুর্দশার স্বীকার। সৌভাগ্যবশত এখন তারা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সুফল লাভে সমর্থ হয়েছে। কোন অবস্থাতেই তারা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপস করে না। গোষ্ঠী ও ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য রাজনীতি ব্যবহার করা অনুচিত। জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা বাস্তবে রূপান্তরিত করা প্রত্যেকের কর্তব্য।
১৯৭৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জাতীয়তাবাদী গণতন্ত্রী দল (জাগদল) সরকারি অনুমোদন পায়। রাজনৈতিক দল বিবিধ (পিপিআর) ১৯৭৮ মোতাবেক এ নয়া দলের অনুমোদনের কথা ঢাকা পৌরসভা চেয়ারম্যান আবুল হাসনাতকে চিঠির মাধ্যমে ২২ ফেব্রুয়ারি জানানো হয়। বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে আহ্বায়ক করে জাগদলের ১৯ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ২২ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করা হয়। আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরা ছিলেনÑ প্রফেসর সৈয়দ আলী আহসান, আব্দুল মোমেন খান, শামসুল আলম চৌধুরী, ক্যাপ্টেন অব. নুরুল হক, এনায়েত উল্লাহ খান, মওদুদ আহমদ, জাকারিয়া চৌধুরী, ড. এম আর খান, সাইফুর রহমান, জামাল উদ্দিন আহমদ, আবুল হাসনাত, এম এ হক, ক্যাপ্টেন (অব.) সুজাত আলী, আলহাজ এম এ সরকার ও আবুল কাশেম। জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দলে যোগদান : ১৯৭৮ সালের ৯ এপ্রিল জিয়াউর রহমান প্রথম আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন যে তিনি রাজনৈতিক দলে যোগদান করবেন এবং ডিসেম্বরের নির্বাচনে প্রার্থী হবেন।
২ মে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে চেয়ারম্যান করে ৬টি দলের সমন্বয়ে ‘জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট’ গঠন করা হয়। যে সকল রাজনৈতিক দল ফ্রন্ট গঠন করে, সেগুলো হলোÑ জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী), ইউনাইটেড পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ তফশিলি জাতীয় ফেডারেশন। জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের ৬টি অঙ্গদলের এক বৈঠকে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে জিয়াউর রহমানকে মনোনয়ন দেয়া হয়। ৮ মে সালে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক ছাত্রদলের ৩৬ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয় আহমেদ মির্জা খবিরকে। ১৯৭৮ সালের ২৯ মে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক মৎস্যজীবী দলকে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দলের অঙ্গসংগঠন হিসেবে অনুমোদন করা হয়।
১৯৭৮ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন : দেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনী অনুচ্ছেদ নং ১১৮ হতে ১২৬ অনুযায়ী ১৯৭৮ সালের ৩ জুন প্রাপ্তবয়স্কদের প্রত্যক্ষ সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সম্পন্ন করেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯৭৮ সালে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচন অতীব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষ্য বহন করছে। এতে বহুদলীয় রাজনীতির ভিত্তিতেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রায় সকল রাজনৈতিক দলই এ নির্বাচনে অংশ নেয়। রাষ্ট্রপতি পদের জন্য মোট ১০ জন প্রার্থী পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তার মধ্যে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী), ইউনাইটেড পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, লেবার পার্টি, তফসীল ফেডারেশনÑ এ ছয়টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। অন্যদিকে তাঁর অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন গণতান্ত্রিক ঐক্যজোটের মনোনীত প্রার্থী জেনারেল (অব.) এম এ জি ওসমানী। আওয়ামী লীগ, জাতীয় জনতা পার্টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি মোজাফফর), পিপলস পার্টি, গণআজাদী লীগ ও নিষিদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সমন্বয়ে গণতান্ত্রিক ঐক্যজোট গঠিত হয়েছিল। অন্যদের মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং নির্দলীয় প্রার্থী ছিলেন। নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট প্রার্থী জিয়াউর রহমান ১ কোটিরও বেশি ভোটের ব্যবধানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঐক্যজোট প্রার্থী জেনারেল (অব.) ওসমানীকে পরাজিত করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনে মোট ৫৩ দশমিক ৫৪ ভাগ ভোটার ভোট দেন। এর মধ্যে ৭৩ দশমিক ৬৩ ভাগ ভোট পান জেনারেল জিয়াউর রহমান। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এম এ জি ওসমানী পান ২১ দশমিক ৭০ ভাগ ভোট। (৫ জুন ১৯৭৮, দৈনিক ইত্তেফাক) ১৯৭৮ সালের ৫ জুন বিজয়-উত্তর সাংবাদিক সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বলেন, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে আরো সুসংহত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই আমাদের লক্ষ্য। তিনি বলেন, এখন দল-মত নির্বিশেষে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে এবং জাতি গঠনে উদ্যোগী হতে হবে। আমাদের সকলের লক্ষ্য হতে হবে দেশ ও জাতিকে শক্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করা। ১৯৭৮ সালের ১২ জুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে জিয়াউর রহমান বঙ্গভবনের দরবার হলে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন।
১৯৭৮ সালের ২৯ জুন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান উপদেষ্টা পরিষদ ভেঙ্গে দিয়ে ২৮ সদস্যের একটি মন্ত্রী পরিষদ গঠন করেন। বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেন। মন্ত্রী পরিষদের সিনিয়র মন্ত্রী হিসেব শপথ নেন মশিউর রহমান যাদু মিয়া। মন্ত্রী পরিষদের অন্য সদ্যস্যরা হলেন- ড. মির্জা নুরুল হুদা, শাহ আজিজুর রহমান, কাজী আনোয়ারুল হক, অধ্যাপক মোহাম্মদ শামসুল হক, আজিজুল হক, এস এম শফিউল আজম, আবদুল মোমেন খান, মেজর জেনারেল (অব.) মাজিদুল হক, ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল হালিম চৌধুরী, বি এম আক্কাস, লে. কর্নেল (অব.) আবু সালেহ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, রসরাজ মন্ডল, মোহাম্মদ সাইফুর রহমান, জামাল উদ্দিন আহমেদ, ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কাজী জাফর আহমদ, শামসুল হুদা চৌধুরী, ক্যাপ্টেন (অব.) নুরুল হক, এ জেড এম এনায়েতউল্লাহ খান, মওদুদ আহমদ, এস এ বারী এটি, ড. মিসেস আমিনা রহমান, মির্জা গোলাম হাফিজ, কে এম ওবায়দুর রহমান, আবদুল আলীম, হাবিবুল্লাহ খান ও আবদুর রহমান। প্রতিমন্ত্রী হন দু’জন ডা. অসিউদ্দীন মাহাতাব ও ডা. এম এ মতিন। এই মন্ত্রী পরিষদেও প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের ধারণা বাস্তবায়ন করেন। মন্ত্রী পরিষদে ২৮ জন মন্ত্রীর মধ্যে ১৮ জন ছিলেন জাগদলের, ৪ জন ন্যাপ ভাসানীর, ২ জন ইউপিপির, ১ জন তপশিলী ফেডারেশনের। বিশেষত ৪ জন ছিলেন সাবেক সামরিক অফিসার, ৮ জন বেসামরিক অফিসার, ১ জন সাংবাদিক ও বাকীরা হলেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। ৯ আগস্ট প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯ দফা বাস্তবায়নে সারাদেশে ১৮টি কমিটি গঠন করেন। প্রত্যেকটির কমিটি প্রধান হিসেবে একজন মন্ত্রীকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
বাংলাদশে জাতীয়তাবদী দল (বিএনপি) গঠন : জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের শরীক দলগুলোর সমন্বয়ে ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল’ নামে একটি নতুন রাজননৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। এ পরিস্থিতিতে ২৮ আগস্ট বিচারপতি সাত্তার এক জরুরি আদেশে জাগদল ও এর সকল অঙ্গদলকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নামে একটি নতুন দল ঘোষণা করেন। ঢাকার রমনা গ্রীনে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন। সাংবাদিক সম্মেলনে জিয়াউর রহমান ঘোষিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ঘোষণাপত্রে বলা হয়Ñ বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ইস্পাত কঠিন গণঐক্য, জনগণভিত্তিক গণতন্ত্র ও রাজনীতি প্রতিষ্ঠা, ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত জনগণের অক্লান্ত প্রয়াসের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনৈতিক মুক্তি, আত্মনির্ভরশীলতা ও প্রগতি অর্জন এবং সাম্রাজ্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ, নয়া উপনিবেশবাদ ও আধিপত্যবাদের বিভীষিকা থেকে মুক্তির লক্ষ্যকে নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল’ গঠিত হয়েছে। এই চারটি লক্ষ্যকে ‘জনগণের মৌলিক দাবি।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী যখন এদেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর বর্বরের মতো ঘৃণ্য হামলা চালায় তখন এর আকস্মিকতায় দিশেহারা হয়ে পড়ে সর্বস্তরের জনগণ। ১৯৭১-এর ২৬ মার্চ ঢাকায় পাকিস্তানী বাহিনীর বর্বর আক্রমণের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করে ২৭ মার্চ চট্টগ্রামস্থ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ঘোষণা দেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে জিয়াউর রহমান যুদ্ধের পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১-এর জুন পর্যন্ত ১ নং সেক্টর কমান্ডার ও তারপর জেড-ফোর্সের প্রধান হিসেবে তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বের জন্য তাঁকে বীরউত্তম উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম রাষ্ট্রপতি হলেও তিনি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত নন। এর বিপরীতে ১৯৭৮ সালের ৩০ মে গণভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। গণভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ঘটনা ওইবারই প্রথম ঘটেছিল। জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশের জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রথম রাষ্ট্রপতি।
লেখক : সদস্য নির্বাহী কমিটি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)