দ্য হিন্দুর সম্পাদকীয়
বাংলাদেশের সঙ্গে অবশ্যই সম্পর্ক শক্তিশালী করতে হবে ভারতকে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:৫৯ এএম, ২০ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২০ | আপডেট: ০৬:৫০ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
বাংলাদেশের সঙ্গে অবশ্যই সম্পর্ক শক্তিশালী করতে হবে ভারতকে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চ্যালেঞ্জগুলোর প্রশংসা করতে হবে। ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য হিন্দুর ‘ফ্রেন্ড এন্ড নেইবার : অন ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ভার্চ্যুয়াল সামিট’ শীর্ষক ওই সম্পাদকীয়তে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে সম্প্রতি ভার্চ্যুয়াল সামিট অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে তারা সীমান্তের সহিংসতা থেকে শুরু করে কোভিড-১৯ মোকাবিলা পর্যন্ত বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে, এই সামিট বলে দেয় সেই সম্পর্ক পুনর্গঠনে তাদের সদিচ্ছা আছে। ভারতের প্রতিবেশীই প্রথম নীতির অধীনে বাংলাদেশকে একটি ‘মেজর পিলার’ বা বড় স্তম্ভ বলে অভিহিত করেছেন নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে আগামী মার্চে বাংলাদেশের ৫০তম স্বাধীনতা দিবস। এ উপলক্ষে মোদিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন শেখ হাসিনা।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বড় একটি ভূমিকা পালন করেছিল ভারত। তাই তাদের সামনে গুরুত্বপূর্ণ একটি সুযোগ এসেছে অমায়িক সম্পর্ককে পুনরুজ্জীবিত করার এবং যেসব ইস্যু এই অংশীদারিত্বে ক্ষতি করছে তা চিহ্নিত করা। বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব অটুট থাকলেও সীমান্তের বিষয়টি স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে। একটি অধিকার বিষয়ক পর্যবেক্ষকের মতে, এ বছরের প্রথম ৬ মাসে সীমান্তে ভারতীয় বাহিনী কমপক্ষে ২৫ বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে। এ ছাড়া তিস্তার পানি বন্টন নিয়ে বিরোধ রয়েছে অনিষ্পন্ন অবস্থায়। ভারতে প্রস্তাবিত ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স বা এনআরসি’কে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘অপ্রয়োজনীয়’ আখ্যায়িত করেছেন। ভারতের নাগরকিত্ব সংশোধন আইন এবং প্রস্তাবিত এনআরসি ইস্যু ভারতবিরোধী একটি নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করেছে। সর্বোপরি, অবকাঠামোখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিস্তৃত করার মাধ্যমে বাংলাদেশের গভীরে প্রবেশ করছে চীন। তাই ভারতের জন্য সব সময়ের এই বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি করা অপরিহার্য। বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছে। তাই এই সম্পর্ক বৃদ্ধি করার জন্য এর চেয়ে ভাল সময় আর হতে পারে না।
সঙ্কটের মধ্য দিয়েও বাংলাদেশকে তুলনামূলকভাবে ভালভাবে চালিয়ে নিচ্ছেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বিস্তৃত করেছে। উন্নতি করেছে সামাজিক কল্যাণে। আওয়ামী লীগ প্রশাসনকে কঠোরভাগে আঁকড়ে থাকা সত্ত্বেও ইসলামপন্থিদের পক্ষ থেকে অব্যাহত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন শেখ হাসিনা। যুদ্ধাপরাধ ও দুর্নীতির বিচারে বিরোধী দল- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি এবং পাকিস্তানপন্থি তার মিত্রদল জামায়াতে ইসলামীকে দুর্বল করে দিয়েছে। কিন্তু হেফাজতে ইসলাম নামে আরেকটি ইসলামপন্থি গ্রুপ সংবাদ শিরোনাম হয়েছে সম্প্রতি, যখন তারা ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনের বিরুদ্ধে বড় ধরনের আন্দোলন করে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনে সরকারি পরিকল্পনার বিরোধিতা করে। হেফাজত বলেছে, ইসলামে মূর্তি স্থাপন নিষিদ্ধ এবং এসব মূর্তি ভেঙে ফেলা হবে। কিন্তু সরকার দৃশ্যত তার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হবে বলেই মনে হচ্ছে। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা বলেছেন, ধর্মের ভিত্তিতে তিনি দেশকে বিভক্ত করতে দেবেন না। এর মধ্য দিয়ে হেফাজতের দিকে পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত করা হয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক ঐতিহাসিক। এই সম্পর্ককে নষ্ট করতে দেয়া উচিত নয়। নয়া দিল্লির উচিত দক্ষিণ এশিয়ায় পরিবর্তিত পরিস্থিতি এবং ক্রমবর্ধমান প্রতিদ্বন্দ্বিতার দিকে বিস্তৃত দৃষ্টি দেয়া এবং ঢাকার জন্য মুক্তমনে অগ্রসর হওয়া।