কাপাসিয়ায় চাষ হচ্ছে মরুফল ত্বীন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:১২ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ১১:০৯ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আছে ত্বীন ফলের কথা। যা অত্যন্ত বরকতময় ও সুস্বাদু একটি জান্নাতি ফল। অন্যান্য ফলের তুলনায় ৭১টি পুষ্টি গুণাগুণ রয়েছে ত্বীন ফলে। এই ত্বীন ফল মানব দেহে পুষ্টি চাহিদা পূরণে কার্যকারী ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি।
মনবজাতির সংবিধান পবিত্র কোরআন মাজীদে আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিন ত্বীন ফলের বর্ণনা করে একটি সূরাও নাজিল করেছেন সূরা আত ত্বীন নামে। মরুভূমিতে জন্ম নেওয়া মিষ্টি ও সুস্বাদু ত্বীন ফল এখন বাংলাদেশেও চাষ করা হচ্ছে। গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বেলাশী গ্রামে 'ন্যাচারাল এগ্রো অ্যান্ড নিউট্রিশন' এ পাঁচ বিঘা জমিতে ত্বীন ফলের চাষ করা হয়েছে।
ত্বীন ফলের চাহিদাপুরণে ফার্ম কর্তৃপক্ষ ফার্মটির সম্প্রসারণ ও ফল গাছের চারা উৎপাদন পদ্ধতি ইতিমধ্যে শুরু করেছেন। ত্বীন ফল চাষের মাধ্যমে বেকারত্ব দূরীকরণের পাশাপাশি রপ্তানীতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে মনে করছেন ফার্ম উদ্যোক্তা।
১১ মাস আগে অর্থাৎ ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে ত্বীন ফল গাছের চারা সংগ্রহ করে আবাদ শুরু করেন আপন দুই ভাই তরুণ উদ্যোক্তা রাশিদুল ইসলাম ও আমিনুল ইসলাম। এই ১১ মাসে ত্বীন ফল বিক্রি করে প্রায় ৮৫ হাজার টাকা আয় করেছেন। এখন থেকে সামনের দিনগুলোতে আশানুরূপ ফলন ও আয় করবে বলে তারা আশাবাদী।
রাশিদুল ইসলাম বলেন, ত্বীন ফল গাছের চারা এক বার রোপণ করা হলে একশত বছর পর্যন্ত জীবিত থাকে। আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ডুমুর আকৃতির এই ফল সবার দৃষ্টি কেড়েছে। প্রতিটি পাতার গোড়ায় গোড়ায় ত্বীন ফল জন্মে থাকে। ত্বীন একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ সুস্বাদু ফল, যা মরু অঞ্চলে ভালো জন্মে। বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়ার সঙ্গে বেশ এখন মানিয়ে নিয়েছে ত্বীন।
ত্বীন কোনো রাসায়নিক সার ছাড়াই, মাটিতে জৈব ও কম্পোজড সার মিশিয়ে রোদে মাঠে ও ছাদে টবে লাগিয়ে ফল উৎপাদন করা সম্ভব। দেশে ছাড়াও বিদেশে এ ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দেশের বেকরাত্ব দূর এবং রপ্তানী করে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
জানা গেছে, সৌদি আরব ও বাংলাদেশে এই ফলকে ত্বীন নামে ডাকলেও অন্যান্য দেশ ভারত, তুরস্ক, মিসর, জর্দান ও যুক্তরাষ্ট্রে এটি আঞ্জির ফল নামে পরিচিত। ডুমুর জাতীয় এ ফলটির বৈজ্ঞানিক নাম Ficus Carica ও পরিবারের নাম Moraceae. এ ফলটি পুরোপুরি পাকলে রসে ঠাসা ও মিষ্টি হয়ে ওঠে। শুধু তাই নয় ব্রেস্ট ক্যান্সার রোধে, উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে ফলটি খুবই উপকারি। এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য ও হাঁপানি রোগ নিরাময়েও সহায়তা করে। মানসিক ক্লান্তি দূর করে। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও ক্যালিসিয়ামসহ নানা ভেষজ গুণ।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের প্রচার মাধ্যমে ত্বীন ফলের চাষ কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও বিদেশ থেকে ত্বীনের আমদানি নির্ভরতা কমে আসার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার অর্জন সম্ভব হবে।
ত্বীনফল সম্পর্কে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আব্দুল সালাম সরকার এ প্রতিবেদককে বলেন, এ ফলটিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি এবং মিনারেল রয়েছে। যাদের পুষ্টিহীনতা আছে বা দুর্বল রোগী তারা এ ফল খেলে সুস্থ ও সবল হবে।