কুয়াকাটা সৈকতে সেই চিরচেনা দৃশ্য
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৪৫ এএম, ১১ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:৪৫ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
দক্ষিণের নির্মল বাতাস। সাগরের একের পর এক ঢেউ তীরে এসে আছড়ে পড়ছে। আর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসা আগত পর্যটকরা নেচে গেয়ে হৈ হুল্লোড়ে মেতে রয়েছেন। করোনা পরিস্থিতি কমে যাওয়ার সাথে সাথে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সৈকত যেন স্বরূপে ফিরেছে।
লেম্বুর চর, ঝাউবন, গঙ্গামতির লেক, কাউয়ার চর, শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার, মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ মন্দির, কুয়াকাটার কুয়া, রাখাইনদের তাঁতপল্লীসহ পর্যটন স্পটগুলোতে হাজারো পর্যটকদের পদভারে এখন মুখরিত। তবে এখানে স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না কেউই। পরছেন না কেউ মাক্স।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাখির কলতানে মুখরিত সবুজ প্রকৃতি সাথে বালুকাবেলায় লাল কাকড়ার ঝাঁক। তাদের অবাধ বিচরণে সৈকতে ফুটে উঠেছে আল্পনা। ঝিনুকের সারি ও প্রকৃতির নিজস্ব খেয়ালে সৃষ্টি বিভিন্ন গুল্মলতা নতুন রূপ দিয়েছে সাগর কন্যা কুয়াকাটাকে।
কেউ ঘোড়ায় চড়ছে, কেউ সৈকতে সাগরের ঢেউয়ে সাথে গোসল করছে। কেউ কেউ প্রিয়জনের হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ বা আবার গা এলিয়ে উপভোগ করছেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এমন দৃশ্য আবার নিজ নিজ হাতে থাকা স্মার্ট ফোন দিয়ে সেলফি তুলে ধারণ করছেন অনেকে। এর ফলে পর্যটকের এমন ভিড়ে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ফিরে পেয়েছেন প্রাণচাঞ্চল্য।
পর্যটন ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা জানান, প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুয়াকাটা। এ প্রকৃতিকে কাজে লাগিয়ে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে গড়ে তোলা হয়েছে ছোট-বড় পর্যটন স্পট। কিন্তু ঊর্ধ্বগামী পর্যটন শিল্পের বিকাশে থাবা বসিয়েছে মহামারি করোনাভাইরাস। এতে বিনিয়োগকারীদের মাথায় হাত উঠেছে। সেই সাথে পর্যটনমুখী সংশ্লিষ্টদের জীবন-জীবিকা পড়ে হুমকির মুখে। এদিকে হোটেল-মোটেল রিসোর্টসহ সকল বিনোদন কেন্দ্র খুলে দেয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মধ্যে ফিরে এসেছে স্বস্তির নিঃশ্বাস। এখন তারা আবার নতুন করে দেখছে আশার আলো।
খুলনা থেকে আগত পর্যটক দম্পতি নুরু আলম ও জিনিয়া আক্তার সাথী বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন ঘরবন্দি ছিলাম। শুক্রবার সকালে কুয়াকাটায় এসে পৌঁছেছি। আরো একদিন থাকবো এখানে। এখানকার নির্মল বাতাস, সাগরের ছোট ছোট ঢেউ, সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের মনোলোভা দৃশ্য যেন যে কাউকে বিমোহিত করে।’
ট্যুরিস্ট ব্যবসায়ী আমির হোসেন বলেন, ভাবতেও পারেনি দেশের এরকম পরিস্থিতিতে এত পর্যটকের আগমন ঘটবে। এসব পর্যটকদের সমুদ্র ঘুরে দেখার জন্য এখানে বেশ কয়েটি ট্যুরিস্ট বোট রয়েছে। তাই বোট মালিকরা ডিসকাউন্ট দিয়ে খুব কম খরচে ফাতরার বন ও চরবিজয় নিয়ে যাচ্ছে। আর পর্যটকরা অপরূপ দৃশ্য অবলোকন করছেন।
হোটেল সমুদ্রবাড়ির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম মিরন বলেন, তার হোটেলে ১৭টি রুম রয়েছে। পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী রুম বুকিং দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে পর্যটকদের ব্যাপক চাপ রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি মো. মোতালেব শরীফ বলেন, স্বাস্থবিধি মেনেই সকল হোটেল- মোটেলে পর্যটক রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ হয়েছে। গত ১৯ আগস্ট পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র খুলে দেয়ার পর পর্যটকরা আসতে শুরু করেছে। আশা করছি শীতের মৌসুমে পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে যাবে।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আব্দুল খালেক বলেন, শুক্রবার কুয়াকাটায় পর্যটকের সংখ্যা সব সময়ই বেশি থাকে। তবে আগত পর্যটকদের সংঘবদ্ধভাবে না চলা ও বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহারের জন্য বারবার মাইকিং করে বলা হচ্ছে।