১৪ ডিসেম্বর, সিরাজগঞ্জ মুক্ত দিবস
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:১৬ এএম, ১৪ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২০ | আপডেট: ০৩:০২ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
১৪ ডিসেম্বর, সিরাজগঞ্জ মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর রাতে প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আঞ্চলিক কমান্ডার আমির হোসেন ভুলুর নেতৃত্বে সদর উপজেলার শৈলাবাড়ীতে পাকহানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখযুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। এই যুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনী পরাস্থ হয়ে ঈশ্বরদীর দিকে ট্রেনযোগে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
পরদিন ১৪ ডিসেম্বর ভোরে অকুতভয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা সিরাজগঞ্জের দায়িত্ব নিয়ে শহরকে শত্রুমুক্ত করে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে স্বাধীন বাংলার লাল-সবুজ মানচিত্র খচিত পতাকা উড়িয়ে সোনার বাংলা গড়ার শপথ নেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি শহর ও শহরতলীর আশপাশ থেকে হাজার হাজার কৃষক-শ্রমিক-জনতা জাতীয় পতাকা হাতে শহরে প্রবেশ করে। বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠে সিরাজগঞ্জবাসী। আর এভাবেই মুক্ত হয় সিরাজগঞ্জ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী আব্দুল আজিজ সরকার, আশরাফুল ইসলাম জগলু, কোরবান আলী বিন্দু বলেন, ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ শহরকে হানাদারমুক্ত করতে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রথমেই সদর উপজেলার খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের শৈলাবাড়ী পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পে হামলা করেন তারা। প্রচণ্ড যুদ্ধে ওইদিন শহীদ হন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা সুলতান মাহমুদ। সেদিন হানাদারদের অত্যাধুনিক অস্ত্রের সঙ্গে টিকে থাকতে না পেরে পিছু হটেন মুক্তিযোদ্ধারা।
১০ ডিসেম্বর থেকে সিরাজগঞ্জে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মনোবল ভাঙতে শুরু হয়।
১১ ও ১২ ডিসেম্বর দফায় দফায় আক্রমণ চালানো হয় পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পে। ১৩ ডিসেম্বর থেকেই হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা সিরাজগঞ্জ শহরকে হানাদার মুক্ত করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। তিনদিক থেকে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মোজাম্মেল হক ও ইসহাক আলীর নেতৃত্বে পূর্ব দিক থেকে, সোহরাব আলী ও লুৎফর রহমান দুদুর নেতৃত্বে পশ্চিম দিক থেকে এবং আমির হোসেন ভুলু ও জহুরুল ইসলামের নেতৃত্বে উত্তর দিক থেকে আক্রমণ করে।
এছাড়াও দক্ষিণ দিক থেকে ইসমাইল হোসেন ও আব্দুল আজিজের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ওইদিন রাত ৩টা পর্যন্ত প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণে টিকতে না পেরে হানাদার বাহিনী ট্রেনে করে ঈশ্বরদীর দিকে পালিয়ে যায়।
১৩ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা পাক হানাদার বাহিনীকে তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে স্থল ও নৌপথ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। একমাত্র রেলপথ পাক হানাদারদের দখলে থাকে। বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত আমির হোসেন ভুলু, মরহুম ইসমাইল হোসেন, পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরের প্রয়াত আব্দুল লতিফ মির্জা, লুৎফর রহমান অরুনসহ বীর মুক্তিযোদ্ধারা সিরাজগঞ্জের রেলওয়ে ঘাট, যমুনা নদীর তীর এলাকা, কাজীপুর মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় সমবেত হন।
এ সময় পাক হানাদার তাদের নিশ্চিত পরাজয় জেনে মুক্তিযোদ্ধাদের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য ট্রেনে ঈশ্বরদীর দিকে পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রবর্তী বাহিনীও রেকি করতে পাঠানো মুক্তিযোদ্ধাদের মাধ্যমে হানাদারদের পালিয়ে যাবার খবর সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। পরে জয় বাংলা ধ্বনি ও ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে ধ্বংস করে ফেলা শহীদ মিনারের পাদদেশে সমবেত হন মুক্তিযোদ্ধারা। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে দেশ গঠনের শপথ নেন। এখানে আমীর হোসেন ভুলুকে মুক্তিবাহিনীর আঞ্চলিক অধিনায়ক ও ইসমাইল হোসেনকে প্রশাসনিক প্রধান হিসাবে ঘোষণা করা হয়। সিরাজগঞ্জ শহর থেকে পাক হানাদারদের পালিয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে জেলার বেলকুচি, কামারখন্দ, রায়গঞ্জ, চৌহালী, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর থানা এলাকাসহ অন্যান্য এলাকাগুলিও শত্রু মুক্ত হয়।