পীরগঞ্জে পুঁজি ও পর্যাপ্ত পৃষ্টপোষকতার অভাবে মৃৎ শিল্পীদের দুর্দিন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:০৩ পিএম, ২৮ আগস্ট,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:৪০ পিএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাংলার আবহমান কালের ঐতিহ্য মৃৎ শিল্প এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। আধুনিকতার ছোঁয়া, পুঁজি ও পর্যাপ্ত পৃষ্টপোষকতার অভাবে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, পীরগঞ্জে প্রজাপাড়া পালপাড়া, চন্ডিপুর, মিঠিপুর, ধল্লাকান্দি ও ছিলিমপুর এ ৫টি গ্রামের প্রায় ৪ শতাধিক নারী পুরুষ কযেক যুগ ধরে মৃৎ শিল্পের সঙ্গে জড়িত থেকে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন কিন্তু বিভিন্ন কারনে সময়ের বিবর্তনে এ শিল্পে ভাটা পড়েছে। তাই তারা বাপ দাদার আমলের এ পেশা বদল করে অনেকে অন্য পেশায় জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন।
পীরগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামের মৃৎ শিল্পদের সঙ্গে জতিদের মধ্যে একটি গ্রাম উপজেলা সদরস্থ প্রজাপাড়া । সে গ্রামের প্রায় শতাধিক নারী পুরুষ এখনও এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত । গত শনিবার কথা হয় এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত ক’জনের সঙ্গে । তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের বাপ দাদার আমল থেকে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত থেকে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন । তারা বিগত ১৯৭৭ সনে নিজেদের মধ্যে একটা সমিতি গঠন করেন । যে সমিতিটি বর্তমানে “ প্রজাপাড়া পালপাড়া টালি মেশিন মৃৎ শিল্প সমবায় সমিতি লিঃ’ নামে পরিচিত । সমিতিটি উপজেলা সমবায় অফিস থেকে নিবন্ধিত । যার নং-০০৬ ।
তাদের মতে আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্লাষ্টিক, সিলভার ও এ্যালুমিনিয়াম এর তৈজসপত্রের কারনে মাটির তৈরী জিনিষ গুলো সারা বছর তেমন বিক্রি হয় না। বছরের চৈত্র, বৈশাখ ও জৈষ্ঠ মাসে গ্রামে-গঞ্জে বসে জমজমাট মেলা বসে। চৈত্র সংক্রান্তি ও পয়লা বৈশাখে হয় বড় আয়োজন। সে সময় জমে ওঠে মৃৎ শিল্পীদের ব্যবসা। মাটির তৈরি খেলনা ও তৈজসপত্র বিক্রি বেড়ে যায়। মূলত এ সময় গুলিতে যা আয় হয়, তা দিয়েই বছরের বাকি সময়টা চলেন পালপাড়ার মৃৎ শিল্পীরা। কিন্তু করোনার কারনে এবারে তারা সে আয়ের সুযোগ পাননি। বর্তমানে এ পালপাড়ার মৃৎ শিল্পিদের বড়ই দুর্দিন যাচ্ছে । অর্থ সংকটের কারনে এ পেশা ধরে রাখা তাদের জন্য অনেকটাই দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে । এমনি এক পরিস্থিতির মাঝে মাটির তৈরী জিনিষপত্র পোড়ানোর জন্য বর্তমানে তাদের নেই কোন চুল্লি, নেই কোন সেড । এ কারনে মৃৎ শিল্পের বিস্তার তো দুরের কথা, তারা পেশা সংকুচিত করে আনতে বাধ্য হয়েছেন।
তাছাড়া ভাল তৈজসপত্র তৈরীতেও তাদের রয়েছে যথেষ্ট প্রশিক্ষনের অভাব। তাই পালপাড়ার এ মৃৎ শিল্পিরা ক্ষুদ্র পরিসরে ফুলের টব, ফুলদানী, ছাইদানী, পুতুল সহ বিভিন্ন উপকরন তৈরী ও বিক্রির মাধ্যমে তাদের পেশা ধরে রেখেছেন। অনেকেই জীবিকার প্রয়োজনে বিকল্প পেশায় আয়ের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন। পীরগঞ্জের সব ক’টি মৃৎ শিল্পের অনুরুপ অবস্থা।
দুঃখ-কষ্টের মাঝে দিন কাটলেও এ সমিতির মৃৎ শিল্পিরা এখনও স্বপ্ন দেখেন, কোনো একদিন হয়তো আবারও কদর বাড়বে মাটির তৈরী এ সব পণ্যের। হয়তো জীবন যাত্রার মান উন্নত করতে পারবেন তারা।
এ ব্যাপারে প্রজাপাড়া পালপাড়া টালি মেশিন মৃৎ শিল্প সমবায় সমিতি লিঃ’ এর সভাপতি পুনিল চন্দ্র পাল এর সঙ্গে কথা হলে তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা বহু কষ্ট করে বাপ দাদার এ পেশা ধরে রেখেছি। আমরা আমাদের এমপি ও জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী মহোদয়ের কাছে আমাদের সমস্যার কথা বলেছি। তিনি আমাদের জন্য প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করেছেন এবং কিছু সরকারী সহায়তা পাচ্ছি। তবে তা আমাদের জন্য পর্যাপ্ত নয়।
একই অভিমত ব্যাক্ত করেন সমিতির সাধারন সম্পাদক নিশি কান্ত পাল। তার প্রত্যাশা সরকার আমাদের জন্য একটা চুল্লি, সেড, সকলের প্রশিক্ষন ও পুঁজির ব্যবস্থা নিশ্চিত করলে আমরা আমাদের শিল্পকে ধরে রাখতে পারব। সে সঙ্গে আমাদের জীবনমানও অনেকটা উন্নত হবে।
সমিতির সহ সভাপতি শুনিল চন্দ্র বলেন, সরকারের পর্যাপ্ত পৃষ্টপোষকতা পেলে পীরগঞ্জে মৃৎ শিল্পের বিস্তার ঘটানো সম্ভব। তাই তিনি এ ব্যাপারে- সরকারের দৃষ্টি কামনা করেন।
উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মাহফুজা বেগম এর সঙ্গে কথা হলে তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা সমিতিটির সমস্যা সমাধানে ও মৃৎ শিল্পিদের জীবনমান উন্নয়নে সাধ্যমত চেষ্টা করছি।