বাংলাদেশে শনাক্ত হয়েছে পেরুর ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:২১ পিএম, ১৬ আগস্ট,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৪০ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
বিশ্বের ২৮টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়া পেরুর ভ্যারিয়েন্ট ল্যাম্বডা (সি.থার্টি সেভেন) বাংলাদেশেও শনাক্ত হয়েছে। রাজধানীতে ৪৯ বছর বয়সী এক নারীর নমুনা সিকোয়েন্সিং করে এই ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া যায়। জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা, জিআইএসএআইডি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। গত মার্চ মাসে এ নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
জিআইএসএআইডি -তে সিকোয়েন্সের তথ্য আপলোড করেছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)। জিনোম সিকোয়েন্স যৌথভাবে করেছে বিসিএসআইআর ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধিকাংশ মিউটেশনই উদ্বেগের কারণ নয়। কিন্তু সেটি যখন স্পাইক প্রোটিনে মিউটেশন হয় এবং ভাইরাসের বিপজ্জনক চরিত্রগত পরিবর্তন হয় তখন সেটি বড় ধরনের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। স্বস্তির বিষয় হলো, বাংলাদেশে পাওয়া ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্টে তেমন কোনো ক্ষতিকর মিউটেশন দেখা যায়নি।তবে তারা বলছেন, ভ্যারিয়েন্ট যাই হোক না কেন সংক্রমণ এড়াতে চাইলে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। ভাইরাসের মিউটেশন হতেই পারে। তাই ভ্যারিয়েন্টের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ মাস্ক পরে সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করা। ইতোমধ্যেই দেশে বিভিন্ন সময়ে নমুনার সিকোয়েন্সিং করে যুক্তরাজ্যের আলফা, দক্ষিণ আফ্রিকার বেটা, ভারতের ডেল্টা, ব্রাজিলের গামা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। ডেল্টাসহ চারটি ভ্যারিয়েন্টকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন বলে ঘোষণা করেছে।
নাইজেরিয়ার ভ্যারিয়েন্ট বলে পরিচিত ইটার উপস্থিতিও দেশে পাওয়া গেছে। ল্যাম্বডা ও ইটাকে বর্তমানে ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ভ্যারিয়েন্ট কি
২০১৯ সালের শেষদিকে প্রথম মানবদেহে সংক্রামক করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব জানা যায়। এরপর গত দেড় বছরে এটির হাজার হাজার মিউটেশন হয়েছে। মিউটেশনের মাধ্যমে যে পরিবর্তিত ভাইরাস তৈরি হয়, তাকে বলা হয় ভ্যারিয়েন্ট।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বেশিরভাগ মিউটেশনের ফলে ভাইরাসটির মূল গঠনের ওপর খুব কম বা একেবারেই কোনো প্রভাব পড়ে না। কিছু কিছু মিউটেশন ভাইরাসটিকে টিকে থাকে এবং বংশবৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
ল্যাম্বডা শুধু দ্রুত বিস্তার লাভের জন্য নয়, পেরুতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর জন্যেও দায়ী। এটি বর্তমানে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে প্রভাব বিস্তার করছে। আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, কলম্বিয়া ও যুক্তরাজ্যসহ কমপক্ষে ২৮টির বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুতে প্রথম ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয় এবং ব্যাপকভাবে সংক্রমিত করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, বর্তমানে এর প্রভাব কমে এসেছে। এই ভ্যারিয়েন্টের মূল উৎপত্তিস্থল এখনও অস্পষ্ট।
পেরুর জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালের মে, জুন, জুলাই মাসে পেরুতে শনাক্ত হওয়া করোনা রোগীদের মধ্যে ৮০ শতাংশই ছিল এই ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত।
বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের দেশে পাওয়া ভ্যারিয়েন্টটিকে ল্যাম্বডা বলা হলেও এটিতে তেমন ক্ষতিকর মিউটেশন নেই। এই তথ্যটি কিছুটা স্বস্তি যোগালেও সবাইকে মাস্ক পরে ভ্যাকসিন নিয়ে সংক্রমণ মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।