আগামীকাল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০৯ এএম, ১০ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২০ | আপডেট: ০৩:০২ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
জাতিসংঘ ১৯৫০ সালের ১০ ডিসেম্বরকে ‘মানবাধিকার দিবস’ ঘোষণা করে। সেই থেকে প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর ‘মানবাধিকার দিবস’ পালিত হয়ে আসছে। জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাণী দিয়েছেন। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিএনপি কেন্দ্রীয় দফতরের চলতি দায়িত্বে থাকা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স স্বাক্ষরিত বাণীতে বলা হয়,
এই দিনে আমি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মৌলিক মানবিক অধিকারহারা নির্যাতিত মানুষের প্রতি সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছি। যারা বাক, ব্যক্তি, চিন্তা, প্রার্থনা, মুদ্রণসহ নাগরিক স্বাধীনতার জন্য সোচ্চার হতে গিয়ে ক্ষমতাসীন ও স্বেচ্ছাচারী গোষ্ঠির নৃশংস নিপীড়নে জীবন দিয়েছেন তাদের আত্মার প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষদের প্রতি জানাচ্ছি সহমর্মিতা।
আজও বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে মানুষ একদলীয় স্বেচ্ছাচারী শাসন, গোষ্ঠী, বর্ণ ও জাতিগত সংঘাতে অবলীলায় খুন ও গুপ্ত হত্যার শিকার হচ্ছে এবং গুম তথা অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হচ্ছে নানা বয়সী অসংখ্য প্রাণ। জাতিসংঘের সার্বজনীন ঘোষণায় বলা হয়েছে- বিশ্বের সব জাতির সকল মানুষের মানবাধিকার সংরক্ষণের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। কিন্তু দেশে দেশে নিষ্ঠুর স্বৈরাচারী শাসকেরা জাতিসংঘ কর্তৃক মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণার নির্দেশনাগুলোকে তাচ্ছিল্য করে নিজ দেশের জনগণের ওপর চালিয়ে যাচ্ছে বর্বোরোচিত দমন-পীড়ন। শুধুমাত্র ক্ষমতাকে চিরস্থায়ীভাবে ধরে রাখার জন্য ন্যায়-নীতি অগ্রাহ্য করতে হয়, আর সেজন্য এই সকল গণবিরোধী শাসক গোষ্ঠী জনগণের মানবাধিকারের তোয়াক্কা করেনা। দুঃশাসনের অচলায়তন তৈরি করতে গিয়ে তারা প্রতিবাদী জনগণের ওপর চালায় পৈশাচিক উৎপীড়ন। যারা সত্য উচ্চারণ করতে চায় তারা রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, ছাত্র, শ্রমিক, পেশাজিবিসহ নাগরিক সমাজের যেই হোকনা কেন, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয় এবং কারাবাস, শারীরিকভাবে নির্যাতনসহ জখম, হত্যা ও গুমেরও শিকার হতে হয়।
‘মানবাধিকার দিবস’-এর এ বছরের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে “মানবাধিকার সুরক্ষায় তারুণ্যের অভিযাত্রা” অর্থাৎ মানুষের মৌলিক মানবাধিকার সুরক্ষার প্রধান দায়িত্ব তরুণদের। তাই তাদের সংঘবদ্ধ হয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে জনগণের না আছে নাগরিক স্বাধীনতা, না আছে মৌলিক মানবিক অধিকার। দেশের বিপুল জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সকল ধরনের মানবাধিকার কেড়ে নিয়ে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে তাঁকে অন্যায়ভাবে বন্দি করা হয়েছে। তিনি স্বৈরশাসকের প্রতিহিংসার শিকার। সুতরাং এই নৈরাজ্যকর দুঃশাসনের ছোবল থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের এই মুহূর্তে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। আর সেজন্য গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অবিসংবাদিত নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন ত্বরান্বিত করতে হবে। দেশের মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার জন্য জনগণের মিলিত কন্ঠের আওয়াজ তুলে বর্তমান অপশাসনের অবসান ঘটাতে হবে। জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গিকার।”
জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে অপর এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার দিবসে আমি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মৌলিক মানবিক অধিকারহারা নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের প্রতি জানাই গভীর সমবেদনা। বাংলাদেশে এখন ভয়াবহ দুঃসময় বয়ে চলছে। ক্ষমতাসীনরা বাংলাদেশকে বধ্যভূমিতে পরিণত করেছে। বর্তমান অবৈধ ক্ষমতাসীন সরকার সীমাহীন রক্তপাত ও বেপরোয়া নিপীড়ন নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে জনগণের সকল গণতান্ত্রিক অধিকারকে হরণ করে নিয়েছে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার মানবাধিকারের পরিপূরক। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের মানবাধিকার শূন্যের নিচে অবস্থান করছে। এদেশে শুধু মাত্র বিরোধীদলের নেতাকর্মিরাই শুধু নয়, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিক, নারী, শিশুসহ কারোই কোনো নিরাপত্তা নাই। এদের অধিকাংশই গুম, গুপ্ত হত্যা এবং বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার হচ্ছেন। সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করলেই বিরোধীদলের নেতাকর্মীরা ছাড়াও দল নিরেপক্ষ রাজনৈতিক বিশ্লেষক, টকশো আলোচকদের বিরুদ্ধেও মিথ্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে এবং কাউকে কাউকে কারান্তরীণও করে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশে চলছে অমানবিক স্বৈরশাসন। শাসকগোষ্ঠী পদে পদে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চরম কর্তৃত্ববাদী দুঃশাসন কায়েম করেছে। গণতন্ত্রের জন্য যিনি বারবার আপোসহীন লড়াই চালিয়ে গেছেন সেই আপোসহীন নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সকল মানবাধিকার কেড়ে নিয়ে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো মামলায় সাজা দিয়ে বন্দি করে রাখা হয়েছে। আজকের এই মানবাধিকার দিবসে আমি বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি মনুষ্যত্বহীন নির্দয় আচরণের নিন্দা জানাই। আমি অবিলম্বে তাঁর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।
‘মানবাধিকার দিবস’-এর এ বছরের মূল থীম হচ্ছে “মানবাধিকার সুরক্ষায় তারুণ্যের অভিযাত্রা” অর্থাৎ মানুষের মৌলিক মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। এই বাক্যটির মূল ভাব অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। যুগে যুগে তরুণরাই সমাজের অসঙ্গতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। আজও মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই মানবাধিকারের পক্ষে তরুণদেরকে সাহসের সাথে এগিয়ে আসতে হবে। বর্তমান সরকারের শাসনামলে মানুষের ন্যূনতম বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা নেই। নিয়ন্ত্রিত রাজনীতির সীমিত সুযোগও কেড়ে নেয়া হচ্ছে। সভা-সমাবেশ তথা প্রতিবাদ করার ন্যূনতম সুযোগ অবশিষ্ট নেই। নাগরিক অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার দিবসে এই হোক আমাদের দৃঢ় সংকল্প।