যে কারণে মানবপাচার মামলার নিষ্পত্তি হয় না
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১:৪১ এএম, ১১ আগস্ট,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:৪৯ এএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
মানবপাচারের অভিযোগে প্রায়ই মামলা হচ্ছে। তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগও দেয়া হয়। কিন্তু নিষ্পত্তি আর হয় না। অনেক ক্ষেত্রে বাদী-বিবাদীর আপসে বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ হয়ে যায়। আবার বাদী-বিবাদী দেশের বাইরে থাকলেও ঝুলে যায় বিচার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২০২০ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেখা যায়, ওই বছর মানবপাচার সংক্রান্ত তদন্তাধীন মামলা ছিল ৬০১টি। একই বছর নতুন মামলা দায়ের হয় ৫৩৩টি। ওই বছর অভিযোগপত্র দেয়া হয় ৪৪১টির। চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া হয় ৪৫টির। তদন্ত সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে নিষ্পত্তি করা হয় ৪৫৬টি মামলার। ওই বছর মোট বিচারাধীন মামলা ছিল চার হাজার ৩৫৯টি। বিচারের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয় ১৪টির। একটি মামলায় মাত্র একজন আসামির সাজা হয়েছে। ১৩টি মামলায় ৪৩ জনই পেয়েছেন খালাস। বছর শেষে মামলা ঝুলে ছিল চার হাজার ৮৮৬টি। এসব মামলায় আসামি ২৪ হাজার ৫৪৯ জন। এর মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছিল ১০ হাজার ৭২৭ জনকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ২০১২ সালের মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে ২০১২ থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত পাঁচ হাজার ৭৩৮টি মামলা হয়েছে। মামলার তথ্যানুযায়ী ১০ হাজারের বেশি মানুষ পাচারের শিকার। মোট আসামি সাড়ে ২৪ হাজারের কিছু বেশি। কিন্তু পাঁচ হাজার ৭৩৮টি মামলার মধ্যে গত নয় বছরে মাত্র ২৮২টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩৬টি মামলায় ৭১ জনের সাজা হয়েছে। বাকিরা অব্যাহতি পেয়েছেন। বাকি সাড়ে পাঁচ হাজার মামলা এখনও চলমান। এতে দেখা যায়, মামলা নিষ্পত্তির হার মাত্র চার শতাংশ। সাজা এক শতাংশেরও কম।
পুলিশের একটি সংস্থার তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত দেড় বছরে টুরিস্ট ভিসায় দুবাইয়ের উদ্দেশে দেশ ত্যাগ করেছেন এক লাখ ৯৯ হাজার ৮৬৪ জন নারী ও পুরুষ। তাদের মধ্যে ফেরত এসেছেন মাত্র ২১ হাজার ৭৫৪ জন। বাকিরা দুবাই থেকে অবৈধভাবে ইউরোপের দেশগুলোতে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছেন বলে জানা গেছে। মানবপাচার মামলার নিষ্পত্তিতে ধীরগতি কেন জানতে চাইলে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মাদ সাইদুর রহমান খান বলেন, ‘যে মামলাগুলো দেশের ভেতরের সেগুলোর ভিকটিম উদ্ধার হয়ে যায়। ফলে আমরা মামলার নিষ্পত্তি করে ফেলি। কিন্তু যেগুলো ক্রস বর্ডারের অর্থাৎ বিদেশের ঘটনা, সেগুলোর ক্ষেত্রে ভিকটিমের স্বজনরা মামলা করেন। কিন্তু ভিকটিম আসে না। ভিকটিম বিদেশে কাজ চালিয়ে যান। দূতাবাসের মাধ্যমে তাদের তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। আবার কিছু ভিকটিম আছে যাদের কোনো হদিস পাওয়া যায় না। সেটা না পেলে তো মামলার নিষ্পত্তি সম্ভব নয়। পালিয়ে থাকা কিছু আসামিকে ধরতে না পারারও একটা কারণ আছে বলে মনে করেন সিআইডির এই কর্মকর্তা।’
তিনি বলেন, অন্য দেশে থাকা ভিকটিমদের আনতে সংশ্লিষ্ট দেশের আইনি কাঠামো বা প্রক্রিয়া শেষ করে আনতে হয়। ভিকটিম উদ্ধার না হলে বলা সম্ভব হয় না তিনি আদৌ পাচারের শিকার হয়েছিলেন কি না। তার অবস্থান জানাটা জরুরি। তিনি আরও বলেন, রাশিয়া, ভারত, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ইরাক, ইরান ও লিবিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে মানব পাচার হচ্ছে। সব সময় যে জোর করে পাচার হয় এমনও না। স্বেচ্ছায় অনেকে পাচার হয়ে যাচ্ছেন। কেউ গৃহকর্মী হিসেবে উচ্চ বেতনের লোভে কাজের সন্ধানে যাচ্ছেন। আবার টুরিস্ট ভিসায় বৈধ পথে গিয়েও অনেকে পাচারের শিকার হচ্ছেন।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মামলার তদন্ত সাধারণত পুলিশের অন্য সংস্থাগুলো করে। র্যাব মানবপাচারের ঘটনায় আটককৃতদের থানাপুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। মামলা নিষ্পত্তিতে বিলম্বের কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, বাদী-বিবাদীর আপস হয়ে যাওয়া ও বিদেশে থাকা ভিকটিম উদ্ধার না হওয়া। অনেকে আবার মামলা করে বিদেশ চলে গেলে পরে আর মামলা নিয়ে আগ্রহ দেখান না। র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, মানবপাচার চক্রের মূল হোতারা বাইরে বসে অনলাইন ভিসা ও টিকিটের ব্যবস্থা করে। দালাল চক্রের হাত থেকে এখন পর্যন্ত ৭৭২ জন পুরুষ ও ২৩৪ জন নারীসহ মোট এক হাজার ছয়জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৮৯৬ জনকে।