ছাত্র-জনতার ঐক্য সফলতা পেলেও গণতন্ত্র আজ পতিতপ্রায়
স্বৈরাচার এরশাদের পতন : ফিরে দেখা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৬:৫৭ এএম, ৭ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২০ | আপডেট: ০৬:৪০ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতনে ঐক্যবদ্ধ ছাত্রঐক্য গড়ে তুলে বিজয় অর্জনকারী ছাত্র নেতৃবৃন্দ দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় গর্ববোধ করলেও বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেন, ‘১৯৮২-এর ২৪ মার্চ তৎকালীন সেনাপ্রধান এইচ এম এরশাদ একটি নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে যখন ক্ষমতা দখল করেছেন, তখন প্রথম প্রতিবাদ মিছিলটি বের করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদী ছাত্ররাই। এই ছাত্ররাই এই স্বৈরাচারী সরকারের পতনে শুধু নিজেরাই রক্ত দেননি, দেশের রাজনীতিক, আইনজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ সকল শ্রেণির পেশাজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলেছিলেন। এতে করে স্বৈরাচারের পতনে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল। গণতন্ত্রের পক্ষে গণমানুষের মধ্যে তীব্র আকাক্সক্ষা গড়ে ছিল। বাস্তবে গণতন্ত্র আজ পতিতপ্রায়।
সাড়ে তিন দশক আগে সূত্রপাত হওয়া ওই অভূতপূর্ব ছাত্র-জনতার আন্দোলনের স্মৃতিচারণে এসব কথা বলা হয়েছে। স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল আই-এর মধ্যরাতের আলোচনা পর্বে এসব কথা বলা হয়েছে। আলোচনায় অংশ নিয়ে ’৯০-এর ডাকসুর ভিপি আমানউল্লাহ আমান (পরে এমপি) বলেন, এরশাদের ক্ষমতা দখলে যে নেত্রী বলেছিলেন আইএম নট আনহ্যাপী, তিনিই ১৯৮৬ সালে হঠাৎ করে এরশাদের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেন। এতে করে এরশাদের ক্ষমতার মেয়াদ ’৯০ পর্যন্ত বেড়ে যায়। এই আলোচনায় অংশ নিয়ে ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন (পরে এমপি) বলেন, ডা. শামসুল আলম মিলনের রক্ত এরশাদের পতনকে ত্বরান্বিত করেছিল। তৎকালীন ছাত্রলীগ সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ে উঠতে জাতীয় নেতৃবৃন্দ সহযোগিতা করেছিলেন। স্বৈরাচারের পতনই ছিল লক্ষ্য। ছাত্রলীগ নেতা ও তৎকালীন ঢাবির আইনের ছাত্র শফি আহমদ বলেন, এরশাদের ক্ষমতা দখলে তৎকালীন সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নেয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, ’৯০-এর ছাত্রঐক্য যা অর্জন করেছিল এখন তা হাতছাড়া। আলোচনার প্রথম দিন আরো অংশ নেন তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান বাবুল, শেষ দিন অংশ নেন ডাকসুর সাবেক ভিপি আক্তারুজ্জামান, তৎকালীন ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি জহিরউদ্দিন স্বপন ও ছাত্র ফোরামের নূরুল কবীর।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতা-উত্তরকালে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হলেও নির্বাচন ব্যবস্থার অবনতি ঘটে। সরকারবিরোধী প্রচ- আন্দোলনের মুখে দেশে একদলীয় সরকার (প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতি) চালু হয়। পরে একদলীয় পদ্ধতি বিলুপ্ত হলেও সরকারপ্রধান হতেন একজন রাষ্ট্রপতি। ওই পন্থায় প্রেসিডেন্ট পদ দখল করেন এরশাদ।
এরশাদ বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র তথা সংসদীয় গণতন্ত্র কায়েম। ১৯৯০-এর ৬ ডিসেম্বর এরশাদের পতন হলে নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে দলগতভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং তৃতীয় অবস্থানে আসে জাতীয় পার্টি। ওই নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৫টিতেই বিজয়ী হন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় দুটিসহ ৩টি আসনে প্রার্থী হয়ে শুধু গোপালগঞ্জের আসনেই বিজয়ী হন। তিনি ঢাকার দুটি আসনেই পরাজিত হন। অপরদিকে এরশাদ রংপুরের ৫টি আসনে বিজয়ী হন।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার দাবি ছিল দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। কিন্তু বিএনপির দলীয় গঠনতন্ত্রে রাষ্ট্রপতি পদ্ধতি সরকার ব্যবস্থা থাকায় সমস্যার সৃষ্টি হয়। ছাত্র-জনতার দাবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বেগম খালেদা জিয়া জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধন করে সংসদীয় ব্যবস্থার প্রত্যাবর্তন করেন। এখানে আরো উল্লেখ্য, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থার জন্য সংবিধান সংশোধনও করেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তৎকালীন ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি জহিরউদ্দিন স্বপনও এ বিষয়ে বলেন ঐক্যবদ্ধ ছাত্র আন্দোলন অটুট রাখতে বেগম খালেদা জিয়ার বিশেষ ভূমিকার কথা মনে পড়ে। কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হয়। এতে করে সংসদীয় ব্যবস্থা ফিরে এলেও তা নতুন করে স্বৈরাচারের প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।