পুকুরেই হবে গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদন : গবেষণা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৫৬ এএম, ১৩ জুলাই,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:১৭ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
পুকুরে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাপ, লবণাক্ততা ও অক্সিজেনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। হ্যাচারিতে নয়, এবার পুকুরেই উৎপাদন করা যাবে গলদা চিংড়ির পোনা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) গবেষকরা উপকূলীয় বটিয়াঘাটার ছয়ঘরিয়া গ্রামের পুকুরে গবেষণা চালিয়ে গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদনে সফল হয়েছেন। পুকুরে গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদন এবং তা দিয়ে চিংড়ি চাষ সম্প্রসারিত হলে প্রাকৃতিক ও হ্যাচারি উৎসের ওপর নির্ভরতা কমবে। অপরদিকে পুকুরে গলদা চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধি হলে রফতানিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকরা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন সম্প্রতি বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ প্রকল্প পরিদর্শনকালে পুকুরে উৎপাদিত গলদা চিংড়ির পোনা দিয়ে চাষা করা চিংড়ির বৃদ্ধি প্রবণতা অবলোকন করেন। তিনি গবেষকদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে আরও বৃহত্তর পরিসরে এই গবেষণা সম্প্রসারণ ও এই দ্রুত মাঠ পর্যায়ে হস্তান্তরের তাগিদ দেন। যাতে চিংড়ি চাষিরা উপকৃত হতে পারেন। একইসঙ্গে তিনি এ প্রকল্পে অর্থ যোগানদাতা সলিডারেডাড ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গেয়ারকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। প্রকল্পের প্রধান গবেষক ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মো. নাজমুল আহসান জানান, গলদা চিংড়ি হ্যাচারিতে পোনা উৎপাদনে ধস নামায় এবং উপকূলের প্রাকৃতিক উৎস থেকে পোনা আহরণ সরকারিভাবে নিষিদ্ধ হওয়ায় চাষিদের পোনা সংগ্রহে সঙ্কটে পড়তে হচ্ছে। ফলে উৎপাদন ও রফতানিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। প্রতিকূলতার কারণে চাষিরাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এ অবস্থায় তাদের গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল- বিকল্প হিসেবে পুকুরের পানিতে গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদন নিয়ে গবেষণা করা এবং এর মাধ্যমে পোনার চাহিদা পূরণ করা। চাষিরা তাদের পুকুরে পোনা উৎপাদন প্রযুক্তি আয়ত্ত করতে পারলে তা সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। গ্রামের পুকুরে পুকুরে গলদা চিংড়ির চাষ বাড়লে চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ২০২০ সালের শুরু থেকে এই গবেষণা চালিয়ে পুকুরের পানিতে গলদার পোনা উৎপাদনে লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন। খুলনার উপকূলীয় এলাকা বটিয়াঘাটার ছয়ঘরিয়া গ্রামে পুকুরের জমি লিজ নিয়ে তারা এ গবেষণা প্রকল্প পরিচালনা করেন। পুকুরের পানিতে উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে তারা কিছু প্রাকৃতিক ও প্রযুক্তিগত কলাকৌশল কাজে লাগান। এখানে পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা, অক্সিজেনের উপস্থিতি, খাদ্য ব্যবস্থাপনা, পানির প্রবাহ, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ উল্লেখযোগ্য। প্রাকৃতির পরিবেশ ও লাগসই প্রযুক্তির সমন্বয়ে তারা গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদনে সাফল্য লাভ করেন। যা গলদার পোনা উৎপাদনে হ্যাচারি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পোনা প্রাপ্যতা সহজলভ্য করবে। তাদের গবেষণা পুকুরের পোনা দিয়ে এখন কয়েকটি অধিক্ষেত্রে চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কয়েকটি মিনি পুকুরও রয়েছে।
প্রকল্পের কো-ইনভেস্টিগেটর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহীন পারভেজ জানান, সলিডারেডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া, বাংলাদেশের সহযোগিতায় সেন্টার অব এক্সিলেন্স ফর ক্লাইমেট রেজিলেন্ট কোস্টাল ফুড সিস্টেমের আওতায় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গ্রান্টস ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন এডুকেশনের (গেয়ার) অর্থায়নে এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিগরি সহযোগিতায় এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।