নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি : ভাঙন তীব্র
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:১৩ এএম, ২২ জুন,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৩৫ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
প্রধান নদ-নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। উজানের অববাহিকায় উত্তর-পূর্ব ও মধ্য-ভারত, নেপাল, তিব্বতসহ চীনে সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে অতিবৃষ্টির কারণে আসছে ঢল। সেই সাথে দেশের অভ্যন্তরে গত কয়েকদিনে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ, অনেক জায়গায় অতিবৃষ্টি হচ্ছে। এরফলে দেশের উত্তর জনপদ, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ নদ-নদীতে পানি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। রবিবার দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহের প্রবাহ পরিস্থিতি সম্পর্কে পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, বর্তমানে তিস্তা, গঙ্গা নদী এবং বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম অঞ্চলের নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া দক্ষিণের উপকূলীয় অঞ্চলের নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধিতে তলিয়ে যাচ্ছে চর-উপকূল-দ্বীপাঞ্চলের অনেক জনপদ। দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহের ১০১টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল ৫৭টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৩৫টিতে হ্রাস ও ৮টি স্থানে পানি অপরিবর্তিত থাকে। শনিবার ৪৬টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৪৮টিতে হ্রাস পায়, ৬টি স্থানে অপরিবর্তিত ছিল। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে উত্তর থেকে মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে নদ-নদীসমূহের ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভাঙন কবলিত নদ-নদী পাড়ের অগণিত মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছে।
আবহাওয়া বিভাগ ও পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, টানা অতিবর্ষণে বৃহত্তর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পার্বত্যাঞ্চলে নদ-নদীতে পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া প্রবল বর্ষণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় পাহাড়ধস তথা ভূমিধসের সতর্কতা দেয়া হয়েছে। ভারী বর্ষণের সতর্কতায় আবহাওয়া বিভাগ জানায়, সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। উজানে ভারতে গজলডোবা বাঁধ খুলে পানি ছেড়ে দেয়ায় উত্তর জনপদে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এরফলে তিস্তার চরাঞ্চল ও নিচু এলাকাগুলো বন্যার মুখে পড়েছে। তিস্তার বিভিন্ন স্থানে ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে। পাউবোর পূর্বাভাসে জানা গেছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে এবং ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। গতকাল বিকেল পর্যন্ত পাউবোর তথ্য-উপাত্তে জানা গেছে, তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে (রংপুর বিভাগের নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলা) বিপদসীমার ৩০ এবং কাউনিয়া (লালমনিরহাট জেলা) পয়েন্টে বিপদসীমার ২৫ সে.মি. নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পাউবোর পূর্বাভাসে আরও জানা গেছে, গঙ্গা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের পানি স্থিতিশীল বা অপরিবর্তিত রয়েছে যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আপার মেঘনা অববাহিকায় প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।
বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসের তথ্য-উপাত্ত উল্লেখ করে পাউবো জানায়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জেলাসমূহ এবং এর সংলগ্ন অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ সময়ে এসব অঞ্চলের নদীসমূহের পানি সময়বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। কোথাও কোথাও আকস্মিক বন্যা সংঘটিত হতে পারে। কক্সবাজার জেলার টেকনাফ, উখিয়া, রামু, মহেশখালী, কুতুবদিয়া উপজেলাসমূহ এ সময়ে আকস্মিক বন্যার ক্ষেত্রে অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানায় পাউবো। এদিকে দেশের অভ্যন্তরে ও নদ-নদীসমূহের উজানে ভারতে সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ, কোথাও কোথাও অতিবৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় উজানে উত্তর-পূর্ব ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ১০৪, গ্যাংটকে ৮৫, ডিব্রুগড়ে ৭৪, দার্জিলিংয়ে ৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তাছাড়া দেশের অভ্যন্তরে সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে অনেক জায়গায় ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গেল ২৪ ঘণ্টায় মাদারীপুরে ১২৩, লামায় (বান্দরবান) ১১৪, বান্দরবানে ১০৬, চট্টগ্রামে ১০১, দূর্গাপুরে ৮৭, সাতক্ষীরায় ৭১, লরেরগড়ে ৭০, টেকনাফে ৫৭, মহেশখোলা ও মহাদেবপুরে ৫৪, লালাখালে ৫১ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে।