জাতীয়তাবাদীরাই স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের অতন্ত্র প্রহরী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৫৫ পিএম, ১ জুন,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ১২:৫৯ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’- এই সীমানাই আমার শেষ কথা। পদ্মা- মেঘনা-যমুনা আমার শেষ ঠিকানা। একে ঘিরে গড়ে উঠেছে শস্য-শ্যামল এক বিশাল সবুজ জনপদ। যে জনপদের নাম আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ। লাল সবুজের পতাকায় আচ্ছাদিত বাংলাদেশ। বাংলাদেশ আমার জীবনের শেষ ঠিকানা। আমি দিব্য স্বপ্ন দেখি এ দেশের মাটি-মানুষের। এ দেশের বিপর্যস্ত, ক্লিষ্ট, মুহ্যমান, আশাহীন, ভাষাহীন, স্বপ্নহীন জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য একদিন যিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন, এ দেশের মাটি-মানুষকে ঘিরে।
যিনি একদিন গেয়েছিলেন ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’, জীবন বাংলাদেশ, আমার মরণ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ’। তিনি কে? নাইট্রিক এসিডে পোড়া শত বছরের শ্রেষ্ঠ খাঁটি সোনার মানুষ, মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক, কিংবদন্তি রাষ্ট্রনায়ক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের রূপকার শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। মুক্তিযুদ্ধের অসীম সাহসিকতায় তার নেতৃত্বে রণাঙ্গনে ’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার লাল গোলাপ বাংলার কাননে-কাননে প্রস্ফুটিত হলেও, স্বাধীনতার স্বপ্ন সাধ থেকে যায় আজও অধরা।
তাই তিনি জাতির কান্ডারি হিসেবে বিশ্বের বুকে একটি স্বতন্ত্র আত্নমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। তিনি ছিলেন একজন জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমিক সাচ্চা সৈনিক। বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা। তিনি দেশময় জাগিয়ে তুলেছিলেন কর্মোদ্যম এবং কর্মযোগের এক নবজাগরণ। ‘কাজ-কাজ-কাজ’ এই ছিল তার ডাক। বর্ধিত উৎপাদন প্রয়াসকে তিনি সংযোজন করেছিলেন এ দেশের রাজনীতিতে। যার নাম দিয়েছিলেন উৎপাদনমুখী রাজনীতি। সত্যিকার অর্থে তিনি চেয়েছিলেন স্বনির্ভর এক বাংলাদেশ গড়তে। মুদ্দা কথা, তিনি জাতিকে দিয়েছিলেন নতুন একটি কনসেপ্ট। যার নাম ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’। এই তল্লাটে তিনি চেয়েছিলেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী চেতনায় সমৃদ্ধ শোষণমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত এক নতুন বাংলাদেশ গড়তে।
জাতীয়তাবাদী দল গঠন : রাষ্ট্রপতি জিয়া বুঝেছিলেন বিভেদ, অনৈক্য এ দেশের সকল উন্নয়নের একমাত্র অন্তরায়। তাই তিনি চেয়েছিলেন বিভেদকে পরিহার করতে। বিভেদই নানা বাদ সৃষ্টি করে। আর নানা মতবাদ একটি জাতিকে কুরে কুরে ধ্বংস করে, দুর্বল করে। এভাবে চললে একদিন আগ্রাসী শক্তি স্বাধীন রাষ্ট্রীয় সত্তাকে গ্রাস করবে। এইভাবে একটি জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্য একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তাই ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে তিনি দেশকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।
অতঃপর রাষ্ট্রপতি জিয়া দিপ্ত কন্ঠে ঘোষণা করলেন ঐতিহাসিক মুক্তি সংগ্রামের সোনালী ফসল বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব আমাদের পবিত্র আমানত এবং অলংঘনীয় এক অধিকার। ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহত গণপ্রচেষ্টা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের কালজয়ী এক রক্ষাকবচ। তাই তিনি দেশ গঠনে মহান জাতীয় ঐক্যের তাগিদে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মহান জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ১৯ দফা সম্বলিত এক বৈজ্ঞানিক কর্মসূচি হাতে নিয়ে দেশ গড়ার মহান অঙ্গীকারে তিনি গড়ে তুললেন ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী’ দল।
১৯ দফা কর্মসূচি জনমনে বিরাট আলোড়ন সৃষ্টি করল। এ দেশের সর্বস্তরের জনতা ১৯ দফা কর্মসূচির প্রতি অকুন্ঠ সমর্থন জ্ঞাপন করল। এ দেশের কোটি কোটি জনতা যেন নতুন পথের সন্ধান পেল। তারা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের পতাকার তলে সমবেত হতে লাগল। সারাদেশে প্রশাসন ব্যবস্থা সুদৃঢ়করণ ও গতিশীল হয়ে উঠল। আইনশৃঙ্খলা ফিরে এলো। মানুষ ফিরে পেল জীবনে শান্তি স্বস্তির এক নিঃশ্বাস। সারা দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে গেল। কৃষক-শ্রমিক, ক্ষেত মজুর হাটে-মাঠে-কলকারখানায় ঝাঁপিয়ে পড়ল। চারদিকে যেন ‘সরব- রব, সাজ-সাজ' এক নতুন পরিবেশ। সর্বত্রই সৃষ্টি হলো উন্নয়নের এক জোয়ার। সময়টা মনে হয়েছিল এ যেন কর্মচঞ্চল এক নতুন বাংলাদেশ। কিন্ত দুর্ভাগ্য! সে দিন এ দলটি ছিল শক্তিতে মূর্তিমান। সিংহের মত গর্জন-তর্জন। নেতা-কর্মীদের মধ্যে ছিল এক কর্মচাঞ্চল্য। ছিল সর্বত্রই এক জাতীয়তাবাদী চেতনা। আর আজ। সে দিনের জাতীয়তাবাদী শক্তি আর আজকের মধ্যে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। কিন্তু কেন? কেন জাতীয়তাবাদী শক্তির এই দুরবস্থা? কেন নানা ক্ষেত্রে শক্তি নুইয়ে আসছে? একমাত্র চেতনা শক্তি বিন্যাসে নেই কোন পরিকল্পনা। নেই কোন শৃঙ্খলা। ফলে জাতীয়তাবাদী শক্তি দিনের পর দিন দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে। বিষয়টি অনুধাবনের প্রয়োজনীতা রয়েছে বলে মনে করি।
জিয়ার আদর্শ: শহীদ জিয়ার আদর্শের সাথে মিশে আছি আমি এবং আমার গোটা পরিবার। এ দলের মৌল আদর্শ বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের চেতনাকে বাস্তবায়ন করতে যেয়ে মাসকে মাস কারা প্রকোষ্ঠে থাকতে হয়েছে। নানা জলুম-নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। তবুও দলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করিনি। আমৃত্য জাতীয়তাবাদী দর্শন প্রচার করাই আমার মিশনারি ব্রত। এ প্রবন্ধটি লিখতে যেয়ে অপ্রিয় হলেও অনেক সত্য কথা বলতে হয়েছে। এ ব্যাপারে কারো না কারো গাত্রদাহ হতে পারে। বিনম্র চিত্তে নিবেদন করি গোস্তাকি মাফ করবেন। কারণ আমি জানি সব সত্য কথা সব সময় বলা যায় না। তবে সাহসীদের উচ্চারণ কখনও থেমে থাকে না।
শেক্সপিয়ার তার ‘ওথেলো’’ নাটকে যেমনটি বলেছিলেন, -To be direct and honest is not safe. (স্পষ্টবাদিতা এবং সততা নিরাপদ নয়)। সত্য অপ্রিয় হলেও সত্য। আমি এ সব জানি। তবুও যখন দেখি আমার প্রাণের চেয়ে প্রিয় সংগঠনের এ দুরবস্থা, তখন থমকে দাঁড়াই। কিছু বলার চেষ্টা করি। কারণ এই দলের জন্য আমি রক্ত দিয়েছি। আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছি। চোখের সামনে হয়েছে দলটির জন্ম। আমি একজন সাধারণ কর্মী। দল আমাকে অনেক উপরে নিয়ে গেছে। ইজ্জত দিয়েছে। দায়িত্ব দিয়েছে। শহীদ জিয়া ৬৮ হাজার গ্রাম বাংলায় যে জোয়ার সৃষ্টি করেছিলেন সেই জোয়ার কেন আজ নিস্তব্ধ? কেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী চেতনা মাঝ-পথে থমকে গেল? এর শিকড়ে কী অন্তরায় রয়েছে?
শহীদ জিয়াকে যেমন দেখেছি : দূর অতীত নয়। সাবেক ছাত্র নেতা হিসেবে শহীদ জিয়াকে কাছে থেকে দেখেছি। জাতীয়তাবাদী দলের একজন নগণ্য কর্মী হিসেবে দেশ মাতা বেগম খালেদা জিয়াকে আরও কাছে থেকে দেখেছি। মন্ত্রী-এমপি’দের অতি নিকট থেকে বারবার দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। দেখেছি অসংখ্য নেতা-কর্মীকে। জাতীয়তাবাদী দলের থানা ইউনিটের সমমর্যাদাপূর্ণ একটি পৌরসভার বারবার সভাপতি হিসেবে, জেলার একজন দলের দায়িত্বশীল পদমর্যাদা ব্যক্তি হিসেবে অনেক কিছু কাছে থেকে দেখার, জানার, শুনার ঐকান্ত সুযোগ আমি পেয়েছি। শহীদ জিয়া নিজেই বলেছেন-‘বাংলাদেশের জনগণ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কর্মসূচিকে গ্রহণ করলেও তারা এখনও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মৌল দর্শনকে বুঝে উঠতে পারেনি’। অপ্রিয় হলেও এটা সত্য যে,দেশের জনগণ এবং দলীয় কর্মীরা দূরে থাক, দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মৌল দর্শন এখন ভালভাবে বুঝে উঠতে পারেনি। এই বুঝতে না পারার পেছেনেও অনেক কারণ আছে। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের চেতনা যখন না বুঝবে তখন দুর্বল হয়ে পড়বে নেতা-কর্মী-সমর্থকরা।
চেতনার নেই কোন বিকল্প : শহীদ জিয়া জীবিত থাকাকালীন উপলব্ধি করেছিলেন ‘আপনারা যদি জাতীয়তাবাদের দর্শন ঠিক ভাবে বুঝে উঠতে না পারেন তবে আগামী দিনে টিকে থাকতে পারবেন না। এতদিন যে টিকে গেছেন তা হুজুকের ফলেই সম্ভব হয়েছে’। দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট-এর এই উক্তি আজকের পেক্ষাপটে কী যর্থাথই নয়? আমাদের জাতীয়তাবাদের মৌল দর্শন কী? এটা আগে ঠিক করতে হবে। কারণ সিস্টেম ছাড়া দল চলে না, দেশ চলে না। সিস্টেমের কারণে দেশ টিকে যাবে, দল টিকে যাবে। এখানে চেয়ার বড় কথা নয়, অর্থাৎ কে ক্ষমতায় আসলো আর কে গেল এটা বড় কোন বিষয় নয় , বড় কথা সিসটেমের মাধ্যমে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি কিনা? স্বপ্নময় আন্দোলন বুটে-বুলেটে, আপোসে, ষড়যন্ত্রে বিফল-কিন্তু কেন? দলের আদর্শ কী, জাতীয়তাবাদের চেতনা কী, বৈজ্ঞানিক কর্মসূচি কী, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী এ সব নিয়ে নেই কোন প্রাকট্রিস।
আজ অপশাসন প্রতিরোধতো দূরের কথা, সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে হামলা-মামলার শিকার হচ্ছে লাখ-লাখ নেতা-কর্মী।স্বপ্নময় আন্দোলন বুটে-বুলেটের আঘাতে বিফল হচ্ছে। পিষ্ট হচ্ছে জাতীয়তাবাদী নেতা-কর্মী। যারা প্রকৃত জাতীয়তাবাদী তাদের মৃত্যু নেই। পরাজয় নেই। স্বর্ণের আখরে লেখা থাকবে তাদের নাম। তারা ইতিহাসের কিংবদন্তি। তারা অমর। তারা অক্ষয়। কিন্তু আমাদের দেশে জাতীয়তাবাদীদের সাম্প্রতিক অবস্থান কী? এত নাজুক পরিস্থিতি যে, সরকারি দলের কাছ থেকে মিছিল, মিটিং-এর অনুমতি নিতে হয়।
চাই সু-শৃংখল ক্যাডার বাহিনী : এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া দলের মধ্যে সু-শৃংখল ক্যাডার বাহিনী সৃষ্টির কথা বলতেন। ক্যাডার বলতে আপনি চলমান সামাজিক ব্যবস্থায় অন্য কিছুকে না বুঝেন। তৃণমূল থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে স্তর বিশেষ কর্মী থেকে নেতা সৃষ্টি করতে হবে। যে নেতা হবে সু-শৃংখল। সু-শিক্ষিত। অর্থাৎ আদর্শের পূজারী। নেতা-কর্মীর মধ্যে থাকতে হবে সমন্বয়। অতঃপর পরস্পরের মধ্যে জবাবদিহিতা। দলের আদর্শ ছড়িয়ে দিতে হবে সর্বস্তরে। জাতীয়তাবাদের চেতনা যখন একজন কর্মীর মধ্যে বিস্তার করবে তখন কোন অপশক্তি তাকে রুখতে পারবে না। যতই হামলা-মামলার সে শিকার হোক না কেন। তা না হলে আবেগের ওপর বা ভবের উপর ভর করে চললে বেশি সময় জগাখিচুড়ি করে টিকে থাকা যাবে না। মনে রাখতে হবে জাতীয়তাবাদ সৃষ্টিতে চেতনার নেই কোন বিকল্প। আর এই চেতনা সৃষ্টিতে বাংলাদেশের মাঠে-প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে হবে জাতীয়তাবাদী দলের গঠনমূলক নানা ভূমিকা ।
চেতনা বিকাশে চাই শক্তিশালী প্রকাশনা : জাতীয়তাবাদ একদিনে প্রতিষ্ঠিত হয় না। আন্দোলন-সংগ্রামের দীর্ঘ প্রক্রিয়ার এক ফসল। কাঙ্খিত এই ফসল ঘরে তুলতে গেলে অনেক পরিকল্পনা হাতে নিতে হয়। আর এ সবের প্রতিফলন ঘটাতে গেলে প্রয়োজন জোরালো প্রচার এবং প্রকাশনা। জাতীয়তাবাদী শক্তির কোন শক্তিশালী মিড়িয়া কী রয়েছে? উল্লেখযোগ্য নয়, একেবারে নেই বললে চলে। অধিকাংশের অভিযোগ, জাতীয়তাবাদী কর্মীরা বিরুদ্ধ পক্ষের মিড়িয়া সন্ত্রাসের শিকার। কর্মীদের গাইড লাইন সৃষ্টিতে কোন সিলেবাস সংক্রান্ত বই কী রয়েছে? রয়েছে কী কোন গবেষণা মূলক প্রতিষ্ঠান? লাখ লাখ কর্মী এক বাক্যে বলবেন না। দলীয় সমর্থক কোন লেখক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, সুশীল ব্যক্তি কী এ ঘরানায় নেই? তারা কী পারেন না এ সবের সমন্বয় করে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের চেতনা তুলে ধরতে? মানসম্মত পত্রিকা বের করতে। জাতীয়তাবাদী চেতনায় বিশ্বাসী সৃষ্টিশীল বই লিখতে।
সৃষ্টি করতে কী পারেন না সাংবাদিক, সাহিত্যিক, লেখক, গবেষক? সেদিন শহীদ জিয়াকে জাতীয়তাবাদের ধ্যান ধারণা সম্পর্কে অনেকে সহযোগিতা করতেন। আজ অনেকে বেঁচে আছেন। আবার অনেকে না ফেরার দেশে। কিন্তু যারা আজও জীবন্ত কিংবদন্তি সেই ডা: এ,কিউ,এম বদরুদ্দোজা চৌধুরি, ড: এমাজ উদ্দিন আহম্মদ, ড.কর্নেল (অব:) অলি আহমেদ, জুবাইদা গুলশান আরা, ড.আব্দুল হাই সিদ্দিকী, প্রফেসর ড.মোহাম্মদ মাহবুবউল্লাহ, ড.এস.এম লুৎফর রহমান, ব্যাংকার রুহুল আমিন এসব গুণী সুশীলরা আজ কোথায়? যারা জাতীয়তাবাদকে নিয়ে একদিন লালন করতেন; পালন করতেন। অপরদিকে ছড়িয়ে দিতেন জাতীয়তাবাদের দর্শন; দেশ থেকে দেশান্তরে। কেন তাদের শানিত কলম আজ নির্বাক? ‘বাঙালি আর বাংলাদেশী’ এ দু’টি মতবাদ নিয়ে চলছে আমাদের দেশের গোটা রাজনীতি। কেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণে এক অতন্দ্র প্রহরী ? এটা আপনি কী ভাবে বলবেন? আর কর্মীরা কী ভাবে এটা উপলব্ধিতে আনবেন?
গ্রামে-গ্রামে গড়ে তুলতে হবে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র : কোথায় শহীদ জিয়ার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র? যেখান থেকে একদিন পরীক্ষিত জাতীয়তাবাদী ক্যাডার বাহিনী তৈরি করা হতো। নেতা-কর্মী সৃষ্টি করা হতো। সেদিন জাতীয়তাবাদী দর্শনে দীক্ষিত হয়ে সারা দেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ বিএনপি’তে যোগ দিয়েছিল। কোথায় সে দিনের এ কেন্দ্রের প্রিন্সিপাল মরহুম এ,কে ফিরোজ নুনের সেসব গঠনমূলক পরিকল্পনা। জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে যারা বিশ্বাস করেন তাদেরই দুর্ভাগ্য! শহীদ প্রেসিডেন্ট একদিন স্বপ্ন দেখেছিলেন গ্রামে গ্রামে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলতে হবে। তার তিরোধানের পর এসব পরিকল্পনা আজ ভেস্তে গেছে। আনন্দের কথা শহীদ জিয়ার উত্তরসূরি তারেক রহমান গ্রামে-গ্রামে প্রশিক্ষণ কর্মশালার নানাবিধ কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন। তার অবর্তমানে সর্বত্রই এখন হ-য-ব-র-ল। তারেক রহমানকে সত্যিই জাতীয়তাবাদী প্রেমিকরা, শহীদ জিয়ার সৈনিকরা আজও মর্মে মর্মে স্মরণ করে। কারণ তিনিই শহীদ জিয়ার উত্তরসূরি হিসেবে তৃণমূলে দলকে সংগঠিত করতে চেয়েছিলেন।
প্রবীণ এবং ত্যাগীদের কাজে লাগাতে হবে : একবার শহীদ জিয়াকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, প্রবীণ ব্যক্তি সাত্তার সাহেবকে এত গুরুত্ব দেবার হেতু কী? কী প্রয়োজন আছে সাত্তার সাহেবের? শহীদ জিয়া বলেছিলেন, ‘একজন অভিভাবকের প্রয়োজন। সাত্তার সাহেব মুরব্বী, যে কোন বিষয় পরামর্শ পাই-তা ছাড়া তিনি বট-বৃক্ষের মতই আমাকে ছায়া দিয়ে রয়েছেন’। সবাই চুপ, আর প্রশ্ন নয়। সত্যিই দলের প্রবীণ এবং ত্যাগীরা আজ দিনের পর দিন যেন চুপসে যাচ্ছে। দলের আদর্শ, নীতি সম্পর্কে প্রবীণরাই ওয়াকিবহাল। এ সব ত্যাগী নেতা কখনও জানিত অবস্থায় ভুল করতে পারেন না। তাদের দ্বারা দলের কোন ক্ষতির কারণ থাকতে পারে না।
অ্যাডভোকেট এম. মাফতুন আহমেদ
লেখক : রাজনীতিক, আইনজীবী ও কলামিস্ট