বাবা-ছেলের সম্পর্কের রসায়ন

বাবা-ছেলের সম্পর্কের রসায়নটা ছিল অন্য রকম। ভালোবাসা, আবেগ, সম্মান, বিশ্বাস সবকিছুই ভরপুর ছিল ঋষি আর রণবীর কাপুরের সম্পর্কে। তবুও যেন এক অদৃশ্য প্রাচীর তোলা ছিল তাদের মধ্যে। রণবীর কাপুর এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন বাবার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের সমীকরণের কথা।
অনুশাসনের ক্ষেত্রে ঋষি বাবা রাজ কাপুরের পথে হেঁটেছিলেন। 

বাবাকে অসম্ভব ভালোবাসতেন, শ্রদ্ধা করতেন ঋষি। কিন্তু বাবাকে আবার যমের মতো ভয় পেতেন তিনি। রাজ আর ঋষির সম্পর্কের মাঝেও এক প্রাচীর ছিল। একে অপরের সঙ্গে দূরত্ব রেখে চলতেন তাঁরা। আর সেই দূরত্ব ঋষি-রণবীরের মধ্যেও ছিল। কোনো সাক্ষাৎকারেই ছেলে রণবীরের বিষয়ে কথা বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন না ঋষি।

এমনকি সাক্ষাৎকার শুরুর আগেই স্পষ্টভাবে বলে দিতেন রণবীর, আলিয়াকে নিয়ে কোনো প্রশ্ন নয়। এক সাক্ষাৎকারে ঋষি বলেছিলেন, ‘আমাকে নিয়ে সাক্ষাৎকার। তাই আমার ব্যাপারে প্রশ্ন করবেন। রণবীরকে টানবেন না।’ 

'সঞ্জু' মুক্তির আগে রণবীরের একের পর এক ছবি ফ্লপ। আর সে ব্যাপারে ঋষি কাপুরকে প্রশ্ন করতে বিরক্তির সুরে বলেছিলেন, ‘ফিল্মি জগতে হিট ফ্লপ চলতেই থাকে। প্রত্যেকের জীবনে এই চড়াই-উতরাই আসে। এর জন্য কোনো মন্ত্র আমার জানা নেই।’ তবে একটা মন্ত্র তিনি ছেলে রণবীরকে শিখিয়েছিলেন। ২০১৯ সালের নভেম্বরের সেই সাক্ষাৎকারে বলিউডের এই দাপুটে অভিনেতা বলেছিলেন, ‘আমি ছেলেকে (রণবীর) সব সময় বলি যে সফলতাকে কখনো মাথায় চড়তে দিয়ো না। আর অসফলতাকে হৃদয়ে নিয়ো না। আর এটাই বলিউডে টিকে থাকার মন্ত্র।’

রণবীর বাবার ব্যাপারে অত্যন্ত খোলামেলা ছিলেন। তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে কোনো রাখঢাক কখনো করেননি রণবীর। আগে রণবীরের আক্ষেপ ছিল যে বাবা কখনো তাঁর প্রশংসা করেন না। তবে সেই আক্ষেপ মিটে গিয়েছিল 'সঞ্জু' মুক্তির পর। ঋষি জীবনে প্রথম ছেলের অভিনয়ের প্রশংসা করেছিলেন। 

আর এ প্রসঙ্গে রণবীর বলেছিলেন, ‘বাবা “সঞ্জু” দেখে প্রশংসা করেছেন। এটা সব থেকে বড় প্রাপ্তি। কারণ বাবা কখনো আমার প্রশংসা করেন না। মা আমার সব থেকে বড় ভক্ত। আমি অ্যাড ফিল্ম করি বা কোনো সাক্ষাৎকারে আসি, উনি তা দেখে আমায় সুন্দর একটা মেসেজ লিখবেন। আমি যা–ই করি না কেন মা সব সময় আমাকে সাপোর্ট করেন।’

বাবার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জানেন, বাবার সঙ্গে আমার সম্পর্কটা এখনো একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। আমি বাবাকে আজও একই রকম ভয় পাই। এমনকি বাবা সব বদ সঙ্গ থেকে আমাকে দূরে রাখতেন। আমি সঞ্জয় দত্তের ভক্ত ছিলাম। সঞ্জয়ের পোস্টার আমার ঘরের দেয়ালে টাঙানো থাকত। সঞ্জয়ের সঙ্গে আমার বেশ বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছিল। সেই সময় ও মাদকাসক্ত ছিল। সঞ্জয় আমাকে একটা দামি বাইক উপহার দিয়েছিল। আর তাতে বাবা বেজায় চটেছিলেন। তিনি সঞ্জয়ের বাড়িতে গিয়ে ঝগড়া করে এসেছিলেন।’

এই বলিউড সুপারস্টার মজার ছলে বলেন, ‘জানেন, কিছু বছর আগে বাবা আমার ম্যানেজার ছিলেন। আর উনি খুব ভালো ম্যানেজার ছিলেন। আমার মূল্য ছিল ১ টাকার, আর বাবা আমাকে ১০০ টাকা পাইয়ে দিতেন। শুধু আমি নই, ইন্ডাস্ট্রিতেও সবাই ওনাকে ভয় পান। তাই ইন্ডাস্ট্রিতে কেউ ওনাকে না বলতে পারতেন না। তার ওপর বাবা অনেক সিনিয়র অভিনেতা। যা–ই হোক, আমি আমার বাবাকে ভালোবাসি।’ 

নিজের ছোটবেলার প্রসঙ্গে রণবীর বলেন, ‘আমি সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠেছি। আমার ছোটবেলা খুব সুন্দর ছিল। আমি যা চেয়েছি আমার বাবা-মা আমাকে তাই দিয়েছেন। তার মানে এই নয় যে ওনারা আমাকে বিগড়ে দিয়েছেন। বাবা-মার থেকে আমি শিক্ষা, সংস্কার, প্রেরণা, ভালোবাসা, শাসন সবকিছু পেয়েছি। তাই আমার কোনো আক্ষেপ ছিল না।’