বলিউড শাহেনশাহ অমিতাভ বচ্চনের জন্মদিন
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৩:৫৮ পিএম, ১১ অক্টোবর,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:৩২ এএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
স্বপ্নপূরণের পথে যত বেশি বাধা, সাফল্যের স্বাদ ততটাই মধুর। বিশ্বের একাধিক নামি ব্যক্তিত্বের জীবন তারই প্রমাণ। বলিউড শাহেনশাহ অমিতাভ বচ্চনও নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে আজকের এই অবস্থানে এসেছেন। বয়সের ক্যালেন্ডারের ৭৮ বসন্ত পেরিয়ে আজ ৭৯-এ পা দিলেন তিনি। তাতে কী? বয়স যে কেবল সংখ্যা, প্রতিটি সিনেমায় তা দেখিয়ে যাচ্ছেন অমিতাভ।
১৯৪২ সালের ১১ অক্টোবর ভারতের উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদে জন্মগ্রহণ করেন অমিতাভ। বাবা প্রখ্যাত কবি হরিবংশ রাই বচ্চন ও মা তেজি বচ্চন। ২৬ বছর বয়সে কলকাতার ‘ব্ল্যাকার অ্যান্ড কোং’ জাহাজ কোম্পানির ৩০০ রুপি বেতনের চাকরি ছেড়ে তিনি মুম্বাই আসেন। যেভাবেই হোক বড়পর্দার হিরো হবেন, এই ছিল স্বপ্ন। ১৯৬৯ সালে সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয়।
অমিতাভের প্রথম ছবি ‘সাত হিন্দুস্তানি’ (১৯৬৯)। এতে তার পারিশ্রমিক ছিল ১ হাজার টাকা। সেখান থেকে শুরু করে বর্তমানে তিনি প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলারের মালিক।
যে কোনো নবাগত অভিনেতার পক্ষে ক্যারিয়ারের শুরুতেই ফ্লপ ছবি রীতিমতো ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করে। অমিতাভের প্রথম ১২টি সিনেমাই ছিল ফ্লপ। তবু তিনি মুষড়ে পড়েননি। লড়াই চালিয়ে গেছেন সমানতালে। শেষে সৌভাগ্য কড়া নাড়ে তার দরজায়। ‘জঞ্জির’ ছবির হাত ধরে আসে ক্যারিয়ারে প্রথম হিট, সাফল্যের স্বাদ পান অমিতাভ।
যার কণ্ঠস্বরে মুগ্ধ আসমুদ্রহিমাচল, যার কণ্ঠস্বরের গাম্ভীর্য সবার মন ছুঁয়ে যায়- সেই অমিতাভকে একটা সময়ে কণ্ঠস্বরের জন্যই বাতিল হতে হয় অল ইন্ডিয়া রেডিও থেকে। যদিও পরবর্তীকালে এ অভিনেতার কণ্ঠে শুধু সংলাপ বা ভয়েস ওভারই মাত করেনি- তার কণ্ঠের গানও মন মজিয়েছে শ্রোতা-দর্শকদের।
মুম্বাইয়ে আসার পর জীবনের সঙ্গে বেশ সংগ্রাম করতে হয় অমিতাভকে। একটা সময় মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতেও তাকে হন্যে হয়ে ঘুরতে হয়েছে। শেষে অভিনেতা মেহমুদ নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন অমিতাভকে। সেখানেই বেশ কিছুদিন থাকেন তিনি।
পর পর ১২টি ছবি ফ্লপ করার পর প্রথমে ‘দিওয়ার’ এবং পরে ‘জঞ্জির’ সুপারহিট করার পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি অমিতাভকে। চলচ্চিত্রজগতে অবদানের জন্য ১৯৮৪ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে। ২০১৯ সালে অর্জন করেন দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার। এ ছাড়া ২০০১ সালে পদ্মভূষণ এবং ২০১৫ সালে পদ্মবিভূষণ পুরস্কার পান।
এ ছাড়া নানা পর্যায়ে অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন অমিতাভ। এর মধ্যে রয়েছে চারটি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ১৫টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কারসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক পুরস্কার। ফিল্মফেয়ারে অভিনয়ের জন্য প্রদত্ত পুরস্কারের বিভাগে সর্বাধিক মনোনয়ন পাওয়ার রেকর্ড রয়েছে তার ঝুলিতে। বিশ্ব চলচ্চিত্রে অনন্য কর্মজীবনের স্বীকৃতি হিসেবে অমিতাভকে ২০০৭ সালে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘লেজিওঁ দ নরের নাইট’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১৯৮০-এর দশকে তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ভারতীয় সংসদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছিলেন।
৬৭ বছর বয়সে অমিতাভ অভিনয় করেন ১২ বছরের শিশুর চরিত্রে। সারা শরীরে, মুখে প্রসথেটিক্স মেকআপ লাগিয়ে হন প্রজেরিয়া নামক বিরল রোগে আক্রান্ত এক পুত্র। ‘পা’ নামের ছবিটিতে অভিষেক বচ্চনের ছেলের চরিত্রে দেখা যায় তাকে। আবার ‘১০২ নট আউট’ ছবিতে ৭৬ বছর বয়সী অমিতাভ ১০২ বছর বয়সী চরিত্র করেন। এতে ঋষি কাপুরের বয়স ৭৬। সম্পর্কে অমিতাভের ছেলে। ‘ব্ল্যাক’ ছবিতে এ মেগাস্টারের অভিনয়কে বলিউডের ইতিহাসের অন্যতম সেরা অভিনয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এভাবেই তিনি বারবার প্রমাণ করেছেন, বয়সের দোহাই দিয়ে তাকে কোনো চরিত্রের ভেতর আটকে ফেলা যাবে না।
বয়স বেড়েছে বলে কি অ্যাকশনকে মুখের ওপর না করে দেবেন? অমিতাভ তা করেননি। ‘বিরুদ্ধ : ফ্যামিলি কামস ফার্স্ট’ ছবিতে তিনি দুষ্টু লোকদের পিটিয়ে তক্তা বানিয়েছেন। রক্ষা করেছেন নিজের পরিবারকে। আসন্ন ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ ছবিতেও তাকে দেখা যাবে একাধিক অ্যাকশন দৃশ্যে। আর দর্শকের চোখও পাবে ভিন্ন কিছুর স্বাদ।
এখনো যে কোনো অভিনয়শিল্পীর জন্য বড় হুমকি অমিতাভ। যে কোনো তরুণ অভিনয়শিল্পীকে বক্স অফিসে টেক্কা দিতে প্রস্তুত তিনি। মাত্র ১০ কোটি রুপি খরচ করে বানানো ‘বদলা’ ছবিটি সবাইকে অবাক করে দিয়ে ঘরে তুলে আনে ১৩৮ কটি রুপি। আর সেই কৃতিত্বের একটা বড় অংশের দাবিদার অমিতাভ।
শুধু সিনেমার রঙিন পর্দায় নয়, পারিবারিক জীবনেও সফল অমিতাভ। ১৯৭৩ সালের ৩ জুন বাঙালি অভিনেত্রী জয়া ভাদুড়ীর সঙ্গে যৌথ জীবনের পথচলা শুরু করেছিলেন। সেই পথ এখনো শেষ হয়নি। ৪৮ বছর একসঙ্গে কাটিয়ে আজও বলিউডের আইকনিক দম্পতি তারা। অমিতাভ-জয়ার দুই সন্তান শ্বেতা নন্দা ও অভিষেক বচ্চন।