সৌদির সঙ্গে মিল রেখে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আজ ঈদ উদ্যাপন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:২৪ পিএম, ২০ জুলাই,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:৩৩ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দেশের বিভিন্ন জেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা আজ মঙ্গলবার পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন। পৃথক স্থানে অনুষ্ঠিত এসব ঈদের জামাতে গ্রামের কয়েক শ মুসল্লি অংশ নেন।
নামাজ শেষে কয়েকটি গ্রামে পশু কোরবানি দেওয়া হয়। বেশ কয়েক বছর ধরে এসব গ্রামের বাসিন্দারা মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদ্যাপন করার কথা জানিয়েছেন।
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার দুটি গ্রামসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের অর্ধশতাধিক গ্রামে ঈদ উদ্যাপন করেছেন বাসিন্দারা। সকালে সাতকানিয়া উপজেলার মির্জাখীল দরবার শরিফের অনুসারীরা জানান, হানাফি মাজহাব মতে বিশ্বের যেকোনো দেশে চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে প্রায় ২০০ বছর আগে থেকে তাঁরা এভাবে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উদ্যাপন করে আসছেন।
দরবার সূত্রে জানা যায়, আনোয়ারা উপজেলার বরুমচড়া ও তৈলারদ্বীপ গ্রামে সকাল আটটায় ঈদের জামাত শেষে পশু কোরবানি দেওয়া হয়। এর আগে মির্জাখীল দরবার শরিফ মাঠে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। বাঁশখালীর কালীপুর, চাম্বল, শেখেরখীল ও ছনুয়ায় সকাল আটটায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
মির্জারখীল দরবার শরিফ সূত্রমতে, সাতকানিয়া উপজেলার মির্জাখীল, এওচিয়ার গাটিয়াডেঙ্গা, মাদার্শা, খাগরিয়ার মৈশামুড়া, পুরানগড়, চরতির সুইপুরা; চন্দনাইশের কাঞ্চননগর, হারালা, বাইনজুরি, কানাইমাদারি, সাতবাড়িয়া, বরকল, দোহাজারী, জামিরজুরি, বাঁশখালীর কালীপুর, চাম্বল, শেখেরখীল, ছনুয়া; আনোয়ারার বরুমচড়া, তৈলারদ্বীপ, লোহাগাড়ার পুঁটিবিলা, কলাউজান, বড়হাতিয়া এবং পটিয়া, বোয়ালখালী, হাটহাজারী, সন্দ্বীপ, রাউজান ও ফটিকছড়ির কয়েকটি গ্রামে ঈদের নামাজ আদায় ও পশু কোরবানি দেওয়া হয়।
চাঁদপুরের স্থানীয় মুসল্লিরা জানিয়েছেন, ১৯৩১ সাল থেকে হাজীগঞ্জের সাদ্রা গ্রামে মাওলানা ইসহাক এক দিন আগের এই রেওয়াজ চালু করার পর ধীরে ধীরে জেলার পাঁচ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে তাঁর অনুসারীরা ঈদসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব উদ্যাপন করেন।
ঈদুল আজহা উদ্যাপিত হচ্ছে হাজীগঞ্জের বলাখাল, শ্রীপুর, মনিহার, বরকুল, অলীপুর, বেলচোঁ, রাজারগাঁও, জাকনি, কালচোঁ, মেনাপুর; ফরিদগঞ্জ উপজেলার শাচনমেঘ, খিলা, উভারামপুর, পাইকপাড়া, বিঘা, উটতলী, বালিথুবা, শোল্লা, রূপসা, বাশারা, গোয়ালভাওর, কড়ইতলী, নয়ারহাট; মতলবের মোহনপুর, এখলাসপুর, দশানী, নায়েরগাঁও, বেলতলীসহ কচুয়া ও শাহরাস্তির কয়েকটি গ্রামে।
ফেনী সদরের ফরহাদনগর ইউনিয়নের একটি গ্রামে এবং পরশুরাম পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে (কোলাপাড়া) ঈদের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফেনী সদর উপজেলার ফরহাদনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন টিপু তাঁর ইউনিয়নের পূর্ব সুলতানপুর গ্রামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বরিশাল বিভাগের ৪৫টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ঈদ উদ্যাপন করছেন। বরিশাল নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের তাজকাঠীর গিরিয়া সুফি মমতাজিয়া জামে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল আটটায়।
পটুয়াখালীর গলাচিপার সেনের হাওলা, পশুরীবুনিয়া, নিজহাওলা, কানকুনিপাড়া; বাউফলের রাজনগর, বগা, তাঁতেরকাঠি, মদনপুরা, ধাউরাভাঙ্গা, সুরদি চন্দ্রপাড়া, কনকদিয়া, দিপাশা, শাপলাখালী, আমিরাবাদ এবং কলাপাড়ার দেবপুরে ঈদের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সদর উপজেলার বদরপুর, গলাচিপা, বাউফল ও কলাপাড়া উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় প্রতিবছরের মতো আগাম ঈদুল আজহা উদ্যাপন করছেন।
বরগুনার আমতলী, পাথরঘাটা, বরগুনা সদর, বেতাগী, ভোলা সদরের ইলিশা, বোরহানউদ্দিনের মুলাইপত্তন, টবগী, পক্ষিয়া, পশ্চিম মুলাইপত্তন এবং লালমোহন পৌর এলাকার ফরাজগঞ্জ ও লাঙ্গলখালী, তজুমদ্দিন উপজেলার শিবপুর ও শম্ভুপুর এবং চরফ্যাশন উপজেলার আমিনাবাদ গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ ঈদ উদ্যাপন করছেন।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া, নাজিরপুর ও কাউখালী উপজেলার আট গ্রামের ৭০০ পরিবার আজ ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করছেন। তবে তাঁরা পশু কোরবানি দেবেন আগামীকাল বুধবার।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঠবাড়িয়া উপজেলার পূর্ব সাপলেজা, ভাইজোড়া, কচুবাড়িয়া, খেতাছিড়া, বাদুরতলী ও চড়কগাছিয়া গ্রামের ৬০০ পরিবার; কাউখালী উপজেলার শিয়ালকাঠি গ্রামের ৪০টি পরিবার এবং নাজিরপুর উপজেলার শেখমাটিয়া ইউনিয়নের খেজুরতলা গ্রামের ৭০টি পরিবার আজ ঈদ উদ্যাপন করছে।
জামালপুর সরিষাবাড়ীতে সকাল সাড়ে সাতটার দিকে দক্ষিণ বলারদিয়ার জামে মসজিদ ঈদগাহ মাঠে ১৩টি গ্রামের মানুষ ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন। নামাজের জামাতে অংশ নেওয়া মুসল্লিরা জানিয়েছেন, তাঁরা ১৭ বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদ্যাপন করেন।
শেরপুরের তিন উপজেলার চারটি গ্রামে পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপিত হচ্ছে। এসব গ্রাম হলো সদরের বেতমারী ঘুঘুরাকান্দি ইউনিয়নের চরখারচর মধ্যপাড়া ও উত্তরপাড়া, নকলার চরকৈয়া এবং নালিতাবাড়ীর নন্নী পশ্চিমপাড়া। এ চার গ্রামের প্রায় এক হাজার মানুষ নামাজের জামাতে অংশ নেন।
শরীয়তপুরে অন্তত ২০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ঈদুল আজহা উদ্যাপন করছেন। তাঁরা সুরেশ্বর দরবার শরিফের ভক্ত, মুরিদান ও অনুসারী। জেলার নড়িয়া উপজেলার পদ্মা নদীর তীরে সুরেশ্বর দরবার শরিফ। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে সেখানে ঈদের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
দিনাজপুর জেলায় সদর, বিরামপুর ও চিরিরবন্দরের কয়েকটি গ্রামে ঈদ উদ্যাপিত হচ্ছে। সকালের বিভিন্ন সময়ে দিনাজপুর শহরের বাসুনিয়াপট্টির পার্টি সেন্টার, বিরামপুরে খয়েরবাড়ি মির্জাপুর ও আয়ড়া বাজার জামে মসজিদ, চিরিরবন্দর উপজেলার সাইতাড়া ইউনিয়নের রাবার ড্যাম এলাকায় নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা।