স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতেই যাচ্ছে এনআইডি সেবা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৪২ এএম, ২০ মে,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:৫৮ এএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হাতে যাচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিবন্ধন কার্যক্রম। এ মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগকে এনআইডি কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ইতিমধ্যে এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এ চিঠির অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। ওই চিঠিতে Allocation of different ministries and Divisions এ সুরক্ষা বিভাগের দায়িত্বসমূহের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত এবং জাতীয় পরিচয়পত্র আইন ২০১০ সংশোধন করে ‘নির্বাচন কমিশন’-এর পরিবর্তে ‘সরকার’ শব্দ অন্তর্ভুক্তকরণসহ আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনীর কথা বলা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ১৭ মে পাঠানো এ চিঠিতে সুরক্ষা সেবা বিভাগ কর্তৃক জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিদ্যমান অবকাঠামো ও জনবল নির্বাচন কমিশন থেকে সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাহী বিভাগের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বিভিন্ন দেশের উদাহরণের আলোকে সুরক্ষা সেবা বিভাগ উক্ত দায়িত্ব পালনে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বিবেচিত বলে উল্লেখ করা হয়।
জানা গেছে, পাসপোর্ট ইস্যু, বিভিন্ন ব্যক্তির পরিচয় (বিশেষ করে অপরাধী যেমন- দুর্নীতিবাজ সন্ত্রাসী, জঙ্গি) উদ্ধারসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ভান্ডার থেকে জনগণের তথ্য সংগ্রহ করার দরকার পড়ে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় নির্বাচন কমিশনের এনআইডি উইং থেকে তারা এ তথ্য সংগ্রহ করে আসছিল। অন্যের তথ্য ভান্ডার থেকে সহায়তার পেতে বেশি সময় ব্যয়সহ আরও কিছু বিষয়ে তাদের বেগ পেতে হচ্ছিল। এরই মধ্যে গত বছর করোনার নমুন পরীক্ষার জালিয়াতির ঘটনায় ডা. সাবরিনা আরিফ গ্রেফতার হওয়ার পর তার দুইটি এনআইডির অস্তিত্ব এনআইডি সার্ভারে পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই দাবি আরও জোরালো হয়। পরে এনআইডির নিয়ন্ত্রণ চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বছর জুলাইয়ের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠায়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পরে ৬ আগস্ট এ বিষয়ে মতামত চেয়ে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগকে চিঠি দেয়। ওই চিঠি পেয়ে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ এ সংক্রান্ত মতামত দেয়ার জন্য একটি কমিটি গঠন করে। পরে ওই কমিটি বিষয়টি পর্যালোচনা করে নাগরিকদের পরিচয়পত্রের গুরুত্বপূর্ণ এই কাজটির দায়িত্ব মন্ত্রী পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকসকে (সিআরভিএস) দেয়ার সুপারিশ করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মতামত পাঠায়।
ওই মতামতে বলা হয়, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে থেকে সব মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। নাগরিকের ঠিকানা, জন্ম, মৃত্যুসহ অন্য তথ্যাদির বিষয়ে এই বিভাগ (মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ) সিআরভিএস কার্যক্রম পরিচালনা করে। জাতীয় পরিচয়পত্রও এক ধরনের সিভিল রেজিস্ট্রেশন। সুতরাং জাতীয় পরিচয়পত্রসহ অন্যান্য সিভিল রেজিস্ট্রেশনের সব কার্যক্রম নির্বাহী কর্মকান্ড হিসেবে বিদ্যমান আইন, নীতি ও বিধি সংশোধনক্রমে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের অধীনে একটি কর্তৃপক্ষের আওতায় ন্যস্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। এতে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ আরও বলেছে, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন তথ্যভান্ডার নাগরিকদের পরিচয়পত্র প্রস্তুতসহ ১২৭টি চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সহায়তা প্রদান করছে। এখন পর্যন্ত জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে ২২ ধরনের সেবা দেয়া হয়, যার বেশিরভাগই নির্বাহী ধরনের। ভবিষ্যতে এর কর্মপরিধি আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এনআইডি নিবন্ধন কার্যক্রম আরও নিরাপদ ও জনবান্ধব করার জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে। তবে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের মতামত পর্যালোচনার মত তা আমলে না নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেই এনআইডি কার্যক্রম পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের পক্ষে মত দিয়েছে।
বিদ্যমান ব্যবস্থায় জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইনে নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার ক্ষমতা ও এখতিয়ার ইসিকে দেয়া হয়েছে। এছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা তথ্য উপাত্ত সংশোধন, সংযোজন ও বিয়োজনের কাজও ইসির অধীনস্থ জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করে আসছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে সেই কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে চলে যাবে। ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ অনুসারে নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্ত বা মৃতদের নাম তালিকা দেয়ার এখতিয়ার ইসির হাতেই থাকবে। যদিও নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্তি ও জাতীয় পরিচয় সংক্রান্ত সেবা একই সার্ভার থেকে দিয়ে আসছে ইসি। প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশন নিজেদের হাতে এনআইডি রাখতে চায় বলে জানা গেছে। এছাড়া জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ও ইতিমধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্রের নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা তাদের দায়িত্বে পেতে চেয়েছে।