পরিবারের ৭ জন বিসিএস কর্মকর্তা হয়েছে শেখ হাসিনার বদৌলতে
জালে ধরা পড়লেন পুলিশ কর্মকর্তা নীপা
মুহাম্মদ মনজুর খান, দিনকাল
প্রকাশ: ০৫:২১ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪ | আপডেট: ০৪:৫৯ পিএম, ২ জানুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২৫
বহু জল ঘোলা হওয়ার পর অবশেষে পুলিশের এডিসি সানজিদা আফরিন নীপা কে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবশেষে জালে ধরা পড়লেন পুলিশ কর্মকর্তা নীপা।
রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপনে তাঁকে বরখাস্ত করার কথা জানায়। সানজিদা বর্তমানে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) কর্মরত। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সানজিদাকে সরকারি চাকরিবিধি আইনে বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তকালে তিনি বরিশাল রেঞ্জে সংযুক্ত থাকবেন।
নীপার বিরুদ্ধে অভিযোগ, গণহত্যার দুটি মামলা থেকে আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান এবং বরখাস্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করতে গোয়েন্দা পুলিশ ডিবির পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আরিফকে এই পুলিশ কর্মকর্তা নীপা নানা প্রলোভন দেখিয়ে প্রলুব্ধ করেছিলেন। পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আরিফকেও ইতিমধ্যে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
সানজিদা আফরিন নীপার স্বামী হলেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের এপিএস আজিজুল হক মামুন। তিনি ছিলেন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি। ছাত্রলীগ নেতা হয়ে বাগিয়েছেন বিসিএস। গণহত্যাকারী শেখ হাসিনারও বিশেষ সহকারি ছিলেন আজিজুল হক মামুন।
মামুনের ভাই ডিবির সদ্য সাবেক এডিসি আতিকুল ইসলাম মুরাদ। হেফাজত নেতা মামুনুল হকের ওপর সোনারগাঁওয়ে হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এই আতিকুল ইসলাম মুরাদ। ওই সময় তিনি ছিলেন পুলিশের মতিঝিল জোনের এডিসি। বর্তমানে আতিকুল ইসলাম মুরাদের পোস্টিং দেয়া হয়েছে খুলনায়।
বিসিএসে অনিয়ম দুর্নীতির অনন্য নজির হলো নীপা-মামুন পরিবার। তাদের সব ভাই বোন ও তাদের স্বামীরা বিসিএস কর্মকর্তা। সবাই গত ১৬ বছরে শেখ হাসিনার কাছ থেকে পুরস্কার হিসেবে বিসিএসে চাকরি নিয়েছেন।
নীপার বড় বোন ডাক্তার নানজীন নাহার স্মৃতি বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তা। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্মরত। তার স্বামী স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ েস্বাচিপের নেতা ডাক্তার পান্না।
নীপার বাবা হলেন প্রয়াত এম হোসেন আলী। তিনি ছিলেন টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং নগদা শিমলা ইউনিয়ন পরিষদের ১৬ বছরের চেয়ারম্যান।
নীপার বিয়ে, প্রেম ও বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বারডেম হাসপাতালে শাহবাগ জোনের এডিসি হারুন, ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নেতাকে রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক মামুন বেধরক পিটিয়েছিলেন। মামুনের অভিযোগ ছিলো নীপার সাথে এডিসি হারুনের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক তিনি দেখে ফেলেছিলেন। বারডেম হাসপাতালের একটি কক্ষে এডিসি হারুন ও এডিসি নীপা অসামাজিক অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। এরপর ঘটনা রাষ্ট্র হলে হারুন ও নীপাকে রংপুর রেঞ্জে বদলি করা হয়েছিলো।
নীপার প্রথম বিয়ে হয়েছিলো হিন্দু ধর্ম মতে। এডিসি মিশু বিশ্বাস ছিলেন নীপার প্রথম স্বামী। সেই বিয়ের ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া যায়।
সানজিদা আফরিন নীপার বরখাস্তের আদেশের পর, নীপা গংদের বিরুদ্ধে একে একে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে মনে করছেন ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের স্বপ্নদ্রষ্টারা। পুলিশ ও প্রশাসন ঢেলে সাজানোর প্রত্যাশাও করছেন তারা।