চতুর্থ দফায় ভাসানচর যাচ্ছেন আরও ৪ হাজার রোহিঙ্গা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:২৭ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারী,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০১:২৪ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
চতুর্থ দফায় আরও প্রায় ৪ হাজার রোহিঙ্গা নোয়াখালীর ভাসানচর যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় ভাসানচরে যাওয়ার পনের দিনের মাথায় আগামী রবি ও সোমবার (১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি) চার ভাগে তাদের নিয়ে ক্যাম্প ছাড়ার প্রস্তুতি নিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
প্রথম ভাগে রবিবার দুপুরে এবং বিকেলে ট্রানজিট পয়েন্ট ছাড়ার উদ্যোগ নিয়ে রাখা হচ্ছে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে মানবিক আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের। এমনটি জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
আগের মতো উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ এলাকা থেকে দিনে দু’ভাগে ভাগ করে বাসগুলো চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। উখিয়ার মূল ক্যাম্প ছাড়াও পুরো ৩৪ ক্যাম্প থেকেই যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গারা ট্রানজিট পয়েন্টে শনিবার আসতে শুরু করছে। বাকিরা রবিবার সকাল ও দুপুরে এসে পৌঁছানোর প্রস্তুতি রয়েছে।
সোমবার যারা ভাসানচরের পথে বের হবেন তারা রবিবার সন্ধ্যা ও সোমবার সকাল-দুপুরে ট্রানজিট পয়েন্ট আসবে বলে জানিয়েছেন রোহিঙ্গা নেতারা। দু’দিনের যাত্রায় প্রায় ৭২টা বাস, একাধিক ট্রাক ও প্রয়োজনীয় অন্য যানবাহন প্রস্তুত রাখা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এবারও স্বেচ্ছায় যেতে রাজি হওয়া কমপক্ষে ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পৌঁছে দেওয়া হবে। শনিবার বিকেল থেকে উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যেতে উখিয়া কলেজ মাঠে অস্থায়ী ট্রানজিট পয়েন্টে রাখা হবে। তবে, এ বিষয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। কিন্তু রবিবার ও সোমবারের স্থানান্তর বিষয়ে শনিবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রস্তুতি সম্পর্কে মিটিং করেছে বলে জানিয়েছে অসমর্থিত সূত্র।
নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ক্যাম্পের মাঝিরা (রোহিঙ্গা নেতা) নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আগে ভাসানচরে যাওয়াদের জীবনচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে এখন অনেকে আগ্রহী হয়ে অপেক্ষা করছে। কিন্তু প্রথম যাত্রার আগে অনেক বুঝিয়েও জড়ো করা কষ্টকর ছিল। এখন চিত্র পাল্টেছে। রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যেতে নিজেরাই এখন তালিকায় নাম লিখিয়েছে। ভাসানচরে ৪ ও ২৮ ডিসেম্বর এবং ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি যাদের আত্মীয়স্বজন গেছে, তাদের কাছে সুযোগ-সুবিধার খবর শুনেই অনেকেই সেখানে যেতে ইচ্ছুক।
তারা আরও জানায়, প্রথমবার জোর করে গোপনে বিভিন্ন অপপ্রচার থেকে লুকিয়ে তাদের ট্রানজিট ক্যাম্পে আনা হয়েছিল, এখন সেরকম নয়। আগেরদিন বিকেলে অনেকেই প্রথম ট্রিপের যাত্রী হতে ক্যাম্পে এসে পড়েছে।
কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পের মাঝি আবদুর রহিম বলেন, ‘এ ক্যাম্প থেকেও ১৫টি পরিবার ভাসানচরে যাচ্ছে। প্রথম দফায় যারা গেছে, তাদের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধার খবর জেনেই নতুন করে অনেকেই যেতে আগ্রহী হয়েছে।’
ভাসানচরে যেতে প্রস্তুতদের অনেকে বলেন, ‘বিশ্ব চাপে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরাতে আলোচনা করলেও নানা টালবাহানা শুরু করে। সম্প্রতি সেদেশে সেনা অভ্যুত্থান হওয়ার পর স্বল্প সময়ে নিজ দেশে ফেরার সম্ভাবনা আরও ক্ষীণ হয়ে এসেছে। সুতরাং পাহাড়ি ঝুপড়ির চেয়ে দ্বীপের সুন্দর দালানে অবস্থান উন্নত জীবন দান করবে। ক্যাম্পে একটু জোরে বাতাস হলে চালা উড়ে যাওয়ার ভয়টা অন্তত থাকবে না।
গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় এক হাজার ৬৪২ জন, ২৮ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় ৪২৮টি পরিবারের এক হাজার ৮০৫ রোহিঙ্গা এবং ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি আরও প্রায় ৪ হাজার রোহিঙ্গা ভাসানচরে স্থানান্তর হয়েছে। সেখানে এ পর্যন্ত প্রায় ৮ হাজার রোহিঙ্গা স্থানান্তরিত হয়েছেন। সেখানে মালয়েশিয়া যেতে গিয়ে সমুদ্র উপকূলে আটক তিন শতাধিক রোহিঙ্গাও রয়েছে।
উল্লেখ করা যেতে পারে, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য যে আবাসন নির্মাণ হয়েছে, তা আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসমৃদ্ধ। সব মিলিয়ে কক্সবাজারের চেয়ে ১৮টি উন্নত সুবিধা রয়েছে ভাসানচরে।
মিয়ানমারে হত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা। এর আগে আসে আরও কয়েক লাখ। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয় শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ। তাদের মধ্য থেকে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচর নেওয়ার উদ্যোগ চলছে।