স্বৈরাচারের পতন হবে জেনেই আমরা ৩১ দফা দিয়েছিলাম : তারেক রহমান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০৫ পিএম, ৭ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪ | আপডেট: ০২:৫৮ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
সুষ্ঠু নির্বাচন চাওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ওই পর্যন্ত যেতে হলে সবাইকে ভ‚মিকা নিতে হবে। বিএনপি দেশে দ্রুত স্থিতিশীল অবস্থা দেখতে চায়।
আজ শনিবার ফরিদপুরে আয়োজিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা প্রস্তাবনা ও জনসম্পৃক্তি বিষয়ে বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আলোচনার ভিত্তিতে ২৭ দফা ৩১ করা হয়েছে। কিন্তু এই ৩১ দফাই সব কিছু না। যদি এর চেয়ে ভালো প্রস্তাবনা কেউ দেয় অবশ্যই আমরা গ্রহণ করবো। জনগণের সমর্থন নিয়ে দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে তখনই আমরা ৩১ দফা বাস্তবায়নের সুযোগ পাবো। প্রান্তিক মানুষের কাছে ৩১ দফা নিয়ে যেতে হবে। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার পরিচালনার সুযোগ পেলে ৩১ দফার বাস্তবায়ন করা সহজ হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সবার সম্মিলিত উদ্যোগ আর প্রচেষ্টা প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেকটা মানুষকে স্ব স্ব অবস্থান থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। জনগণের আস্থা ধরে রাখার দায়িত্ব কিন্তু আমার এবং আপনাদের। স্বৈরাচারকে পালিয়ে যেতে আমরা যে বাধ্য করেছি এটা বিএনপি একা করেনি। সব শ্রেণি-পেশা ও রাজনৈতিক দলের সহযোগিতায় পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে স্বৈরাচার সরকার। তারেক রহমান বলেন, বিএনপির মতো একটি দল একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাইবে এটি স্বাভাবিক ব্যাপার। ওই পর্যন্ত যেতে হলে সবাইকে ভ‚মিকা নিতে হবে। এ অবস্থায় দেশে দ্রæত স্থিতিশীল অবস্থা দেখতে চায় বিএনপি।
আওয়ামী লীগ আমলে কোনো স্থানে জবাবদিহি ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দলটির নেতারাই বলেছেন, হাজার কোটি টাকা তারা পাচার করেছেন। দেশে জবাবদিহি থাকলে অর্থ পাচার সম্ভব ছিল না। এখন মানুষের চিন্তাধারা পাল্টেছে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে দেশে একটি জবাবদিহির পরিবেশ তৈরি করতে চাচ্ছি। শুধু কি এমপি-মন্ত্রীরা জবাবদিহি করবে তা নয়, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও সবাই জবাবদিহি করবে।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে আমরা এমন একটা পরিবেশ তৈরি করতে চাই, যেখানে দেশের মানুষ দেশের চিকিৎসকের কাছেই সেবা নিতে পারবে। ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের মানুষ যেভাবে স্বৈরাচারকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে, তেমনি জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হলেও দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ‘প্রত্যেক নেতাকর্মীর সহযোগিতা আমার প্রয়োজন। জনগণকে আস্থায় রাখতে হবে। ঝড় আপনারা পার হয়ে এসেছেন। আমাদের মধ্যে কেউ কিছু কিছু ভুল করছেন। তাদেরকে সতর্ক করতে হবে। সাবধান করতে হবে ক্ষেত্রবিশেষে আমাদেরকে আরও কঠোর হতে হবে’, যোগ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
তিনি আরও বলেন, ‘জনগণের আস্থা ধরে রাখার জন্য যে যে কৌশল নিতে হবে প্রত্যেকটি কৌশল আপনারা ধারণ করবেন। আমাদের প্রত্যাশা হোক বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন নিয়ে আমরা জাতির জন্য কাজ শুরু করতে পারি। যেন জনগণের সমর্থনে সরকার গঠনে সক্ষম হই। নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি একটি স্বাধীন নির্বাচন চায়। সেই নির্বাচনের ফল যাই হোক তা বিএনপি মেনে নেবে। জনসমর্থন নিয়ে বিএনপি সরকার গঠনের সুযোগ পাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
চিকিৎসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশীয় চিকিৎসকদের রোগীদের আস্থা অর্জন করতে হবে। তাহলেই রোগীরা বিদেশে যাবে না। এ সময় রোগীদের আস্থা অর্জনে ডাক্তারদের আহŸানও জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে যে সংবিধান-আইন সেটাকেই সমর্থন করে বিএনপি। প্রতিটি মানুষ একটিই ভোট দেবে, বিএনপি এই নীতি অনুসরণ করে। বিএনপি জনমানুষের দল। বিএনপি চায় দ্রæত দেশে স্থিতিশীল অবস্থা আনতে।
এসময় তিনি বলেন, সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সহযোগিতা নিয়েই রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে স্বৈরাচারকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে। বিএনপির প্রতি মানুষের যে আস্থা তৈরি হয়েছে তা ধরে রাখতে হবে। বিএনপির মতো একটি দল নির্বাচন চাইবে, এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। জনগণের রায়ের মাধ্যমে যে সিদ্ধান্তই আসুক সেটা আমরা মেনে নেব।
তিনি আরো বলেন, দেশে একটি জবাবদিহিতার পরিবেশ তৈরি করতে চাইছি। একটি দেশে শুধুমাত্র প্রথম প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রী-এমপি জবাবদিহি করবে না, যেকোনো সরকারি দফতর ও সকল পর্যায় থেকে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। অতীতে স্বৈরাচার সরকারের সময়ে কোনো ক্ষেত্রেই কোনো ধরনের জবাবদিহিতা ছিল না। সরকারের যদি জবাবদিহিতা থাকতো তাহলে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করা যেত না। তারেক রহমান বলেন, দেশের মানুষের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে হলেও সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে থাকতে হবে। জনগণকে আস্থা রাখতে হলে অবশ্যই জনগণের মত অনুযায়ী চলতে হবে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, ফরিদপুর সাংগঠনিক বিভাগের আয়োজনে শনিবার বেলা সাড়ে ১০টায় সদর উপজেলা পরিষদের মাল্টিপারপাস হলরুমে দিনভর চলে এ কর্মশালা।
কর্মশালার দ্বিতীয় সেশনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকুর সভাপতিত্বে এবং বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেনের সঞ্চালনায় প্রশিক্ষণ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য উপস্থাপন করেন ৩১ দফা সংস্কার কমিটির সদস্য ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাঈল জবিউল্লাহ।
এসময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আলহাজ শাহাজাদা মিয়া, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাশুকুর রহমান ও মো. সেলিমুজ্জামান সেলিম, বিএনপির সহ-ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক অ্যাডভোকেট নেওয়াজ হালিমা আরলী, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী নায়াব ইউসুফ, জেলা বিএনপি আহŸায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী ঈসা, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলামসহ বিএনপি ও অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয়, বিভাগীয় ও জেলার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সাংগঠনিক বিভাগ ফরিদপুরের অন্তর্ভুক্ত ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন ইউনিটের নির্বাচিত নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।