নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তন না করার পক্ষে সাবেক সিইসি আবু হেনা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৪৩ পিএম, ১১ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪ | আপডেট: ০৩:৫৭ পিএম, ১৩ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তন না করার পক্ষে মত দিয়েছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) মোহাম্মদ আবু হেনা।
আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির বিপক্ষে মত দিয়ে তিনি বলেন, আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে নির্বাচনের পদ্ধতি পরিবর্তনের কোনও প্রয়োজন নেই। আমাদের দেশের মানুষ চলমান পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত। এ পদ্ধতিই কার্যকর হতে পারে। যেসব দেশে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি চালু আছে, সেই সব দেশে যে ভালোভাবে চলছে বলে মনে করবেন না। আমি নিজে জানি নেপাল, ইসরাইল এসব দেশে ভালো চলছে না।
আজ সোমবার (১১ নভেম্বর ) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, দেশের একজন সিনিয়র নাগরিক হিসেবে আমি চাই- আগামীতে যে সকল নির্বাচনগুলো হবে সেগুলো যেন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ হয় এবং দেশের কল্যাণ যেন বয়ে আনে।
সংস্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, যত সংস্কার আছে, আইন আপনি যত ভালোই করুন না কেন, তা প্রয়োগ না হলে কিন্তু অর্থবহ হয়ে আসে না। নির্বাচনের সফলতা নির্ভর করে নির্বাচনি আইন প্রয়োগের উপর— এটি মনে রাখতে হবে। নির্বাচন কমিশনে যোগ্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনার (ইসি) দরকার। তারা যদি যোগ্য না হন, তাহলে তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার পথে অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে।
আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন দরকার উল্লেখ করে সাবেক এই সিইসি বলেন, এটিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আরেকটি হচ্ছে প্রার্থী নির্বাচনটা আরও সুষ্ঠুভাবে হওয়া দরকার। এটি উপর থেকে আরোপ করা নয়, নিচ থেকে আসতে হবে। স্থানীয়ভাবে ভোটের মাধ্যমে প্রাথমিক নির্বাচনের মত করে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করা দরকার। রাজনৈতিক দলগুলো যদি এই দিকে নজর দেয় তাহলে দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।
সংসদের পদ্ধতিগত পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে কিনা? দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে নজরে আনলে তিনি বলেন, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট হবে নাকি বর্তমান সিস্টেমে চলবে কিনা এটি রাজনৈতিক দলগুলো ঠিক করবে। এটি রাজনৈতিকভাবে ঠিক করলেই ভালো।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সম্পর্কে তিনি বলেন, আরপিও সম্পর্কেও আমার মতামত বলেছি। আইন শুধু সংশোধন করলেই হয় না। আইনের প্রয়োগটা দরকার। এই আইনের প্রয়োগ- একটি হচ্ছে নির্বাচন কমিশন। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই এই রকম ভালো মানুষের খুব দরকার। সুনাম আছেন এই রকম কমিটেড লোক দরকার নির্বাচন কমিশনে।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি যোগ্য লোক থাকে তাহলে রাজনৈতিক সরকারের আমলেও ভালো নির্বাচন করতে পারে। পারবে না কেন? ভারতে করছে না? ভারতেও তো রাজনৈতিকদল আছে, সেখানেও তো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সেই কমিটমেন্ট যদি থাকে তাহলে নিশ্চয়ই করা যায়। প্রয়োজনে তারা নানান ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারেন।
নিজেদের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা সব আইন-কানুন, বিধি-বিধান পর্যালোচনা করছি। আমরা অনেকগুলো ইস্যু চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি এবং এর গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করছি। এগুলো আইনে কীভাবে প্রতিফলিত হবে সেগুলোর প্রতি নজর দিচ্ছি। আমরা আশা করছি যে যথা সময়ে আমাদের প্রস্তাব পেশ করতে পারবো।
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়েছেন কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে অনেক প্রস্তাব পেয়েছি। আরও পাবো আশা করি। সবার মতামতের ভিত্তিতে সুপারিশমালা উপস্থাপন করবো, আশা করি তা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ সুগম করবে।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেক রকম প্রস্তাব আছে। যেমন আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে কেউ পক্ষে, কেউ বিপক্ষে প্রস্তাব করেছে। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে যদি সিদ্ধান্ত হয় তাহলে তো সংবিধান সংশোধন করতে হবে। যদিও এ বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেইনি। এ রকম অনেক বিষয় আছে যে কারণে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। ওই সব বিষয়ে সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে যে কমিশন আছে প্রধানত তাদেরই সুপারিশ করতে হবে। আমরা একসঙ্গে তাদের সঙ্গে কাজ করবো।
রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসবেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের তো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কোনও লেনদের কিছু নেই। আমাদের কাজটি কারিগরি, সুপারিশ করা কীভাবে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা যায়। আমরা তাদের কাছ থেকে সুপারিশ পাওয়ার চেষ্টা করছি।
দিনকাল/এসএস