আসিফ নজরুলের সঙ্গে আওয়ামী দুষ্কৃতকারীদের আচরণ অনভিপ্রেত : তারেক রহমান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:১৮ পিএম, ৮ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪ | আপডেট: ১২:১০ এএম, ২ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল সরকারি সফরে সুইজারল্যান্ড গেছেন। সেখানে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের হাতে হেনস্তার শিকার হন এই উপদেষ্টা। এ সম্পর্কিত একটি ভিডিও বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) রাতে ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ১ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, একদল আওয়ামী লীগের সমর্থক ঘিরে ধরেছেন আসিফ নজরুলকে।
তার সঙ্গে উত্তেজিত ভাষায় তর্ক করছেন, বারবার প্রশ্ন করছেন, ‘আপনি মিথ্যা বলেছেন।’ এ সময় ভিডিওতে শোনা যাচ্ছে, আসিফ নজরুল বলছেন, ‘আপনি গায়ে হাত দিচ্ছেন কেন? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আফিস নজরুল সুইজারল্যান্ডের জেনেভা বিমানবন্দরে ঢোকার পথে তার পথ আটকায় সেখানের স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সুইজারল্যান্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম জমাদার, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল খান আরও অনেকে। এ সময় আসিফ নজরুলের সঙ্গে বাদানুবাদ করতে দেখা গেছে তাদের। ভিডিওয়ের শেষ দিকে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিতে শোনা যায়।
আসিফ নজরুলের সঙ্গে আওয়ামী দুষ্কৃতকারীদের আচরণ অনভিপ্রেত: অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে আওয়ামী দুষ্কৃতকারীরা উদ্ধত ও শিষ্টাচার বহির্ভ‚ত আচরণ করেছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, এটা শুধু অনভিপ্রেতই নয় বরং দেশ ও জনগণের আত্মমর্যাদার ওপর প্রচন্ড আঘাত।
আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ফ্রান্সে যাওয়ার পথে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা এয়ারপোর্টের সামনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে কতিপয় আওয়ামী দুষ্কৃতকারী উদ্ধত আচরণ করে। বিদেশের মাটিতে নিজ দেশের সরকারের একজন উপদেষ্টার সঙ্গে এহেন শিষ্টাচার বহির্ভ‚ত আচরণ শুধু অনভিপ্রেতই নয় বরং দেশ ও জনগণের আত্মমর্যাদার ওপর প্রচন্ড আঘাত।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের হিংস্র রূপের প্রকাশ এখনো দেশে-বিদেশে অনেক স্থানে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। প্রবাসে আওয়ামী নেতাকর্মীরাও শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের অভয়ক ধারণ করে সুযোগ পেলেই গণতান্ত্রিক শক্তির ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে। আইন উপদেষ্টার সঙ্গে তাদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণে আবারও প্রমাণিত হলো এরা বিশৃঙ্খলা, হানাহানি, বিভাজন, সংকীর্ণতা, অনৈক্য, রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির হরিলুট এবং বিপুল অঙ্কের টাকা পাচারসহ অসৎ অনাচারের মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী শেখ হাসিনার হত্যা ও গুমের রাজনীতির বিশ্বাস থেকে সরে আসেনি। এরা গণতন্ত্র স্বীকৃত মানবাধিকার, আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও জনগণের নাগরিক স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নয়।
তারেক রহমান বলেন, গণতন্ত্রের সঙ্গে শত্রুতা আওয়ামী লীগের চিরদিনের বৈশিষ্ট্য। রক্তাক্ত পন্থায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে পরাজিত করতে না পেরে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ায় শেখ হাসিনার ক্রোধ যেমন থামছেন না তেমনি দেশে-বিদেশে তার সমর্থকরাও প্রচন্ড হাতাশা নিয়ে সুযোগ পেলেই গণতন্ত্রকামী মানুষদের হত্যা করছে বা শারীরিকভাবে আঘাতসহ নানাভাবে হয়রানির কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। সুইজারল্যান্ড জেনেভা এয়ারপোর্টের সামনে ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে অশোভন আচরণ শেখ হাসিনার তৈরি করা সেই দুঃশাসনেরই অভিব্যক্তি।
তিনি বলেন, পতিত শেখ হাসিনা দেশের রাজনীতিকে জটিল করে তুলতে বাইরে থেকে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লুটপাটের সুবিধাভোগীরা বিদেশে গভীর চক্রান্তে মেতে উঠেছে। গণতন্ত্রের স্বপক্ষের ব্যক্তিবর্গকে হেনস্তা করাসহ বাংলাদেশের ভেতরেও অন্তর্ঘাত সৃষ্টির গভীর চক্রান্ত জাল বুনে যাচ্ছে। লুটপাটের স্বর্গরাজ্য পুনরুদ্ধারের জন্য উদগ্রীব ফ্যাসিবাদের দোসররা দেশে-বিদেশে নানা এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আওয়ামী লীগ বরাবরই ক্ষমতার নেশায় আচ্ছন্ন অপরাধপ্রবণ রাজনৈতিক দল। ক্ষমতা হারানোর মনোবেদনায় এরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিশ্বাস করে না বলেই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বেছে নেয়। আত্মপ্রত্যয়হীন, যুক্তিবিমুখ, মানবতাবিরোধী আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সন্ত্রাসী দোসরদের চিহ্নিত করে রাখতে হবে। এদেরকে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি বলেন, বিদেশে গণতন্ত্রকামী প্রবাসী বাংলাদেশিরা ফ্যাসিবাদী দোসরদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের আইন ও বিচার বিভাগকে অবহিত করতে হবে। বাংলাদেশে আওয়ামী দৈত্যকে জনগণই বোতল বন্দি করেছে। আন্তর্জাতিক পরিসরে এই সমস্ত আওয়ামী কুচক্রীদের বিচারের আওতার মধ্যে আনতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। আমি আসিফ নজরুলের ওপর ফ্যাসিস্ট দোসরদের অসৌজন্যমূলক আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।